Advertisement
E-Paper

শুধুই লোকসান, দাঁতনে হাঁপ ধরেছে কামারের হাঁপরের

কথায় আছে স্যাঁকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা। যদিও সেই ঠুকঠাকে ভরসা রাখতে পারছেন না দীপেন রাণারা। মুনাফা না মেলায় কামারের পেশা ছেড়ে সোনার দোকান খুলেছেন দীপেনবাবু।

দেবমাল্য বাগচী

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৭ ০০:৩০
ফাঁকা: দোকান রয়েছে, দেখা নেই ক্রেতারই। নিজস্ব চিত্র

ফাঁকা: দোকান রয়েছে, দেখা নেই ক্রেতারই। নিজস্ব চিত্র

কথায় আছে স্যাঁকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা। যদিও সেই ঠুকঠাকে ভরসা রাখতে পারছেন না দীপেন রাণারা। মুনাফা না মেলায় কামারের পেশা ছেড়ে সোনার দোকান খুলেছেন দীপেনবাবু।

মান্ধাতার আমলের হাঁপর টেনে এখন রুটিরুজির জোগাড়ও হয় না। তাই শুধু দীপেনবাবু নন, দাঁতনের পুরনো ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোডের স্কুলবাজার এলাকায় এ ভাবে অনেকেই কামারের কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়। জীর্ণ দশা প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো কামার শিল্পেরও।

স্থানীয় গয়নার দোকানের মালিক দীপেনবাবু বলছিলেন, “আমার ঠাকুরদা কামারের কাজ করতেন। যদিও আমার বাবা সরকারি চাকরি করেছেন। কামার শিল্পে পরিশ্রম করেও মুনাফা না মেলায় গয়নার কাজ করছি।”

জানা যায়, রাণা পদবির লোকেরা এলাকায় আসার সময় থেকেই কামার শিল্পের সূত্রপাত। তবে রাণা পদবির লোকেরা এখানে ঠিক কবে এসেছিল তা অবশ্য সঠিক জানা যায় না। যতটুকু জানা যায়, একসময় এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে পান খাওয়ার প্রবণতা ছিল। পানের সুপুরি কাটার জন্য প্রয়োজন ছিল যাঁতির। একইসঙ্গে কৃষিতে উন্নত এই এলাকায় কাস্তে, কাটারি, বঁটির চাহিদাও বাড়ছিল। ফলে সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে দাঁতনে কামার শিল্প গড়ে ওঠে। একসময় হাঁপর টানার শব্দে গমগম করত যে এলাকা, এখন সেখানে শুধুই শূন্যতা। ক্ষতির বহর বইতে না পেরে অনেকে অন্য পেশায় যোগ দিয়েছেন। সরকারি অনুদানের দাবিও জানাচ্ছেন অনেকে।

কয়েকটি বাড়িতে বিদ্যুৎ চালিত শান দেওয়ার যন্ত্র থাকলেও অধিকাংশ কামারেরই ভরসা মান্ধাতার আমলের যন্ত্র। এলাকায় এখন সবচেয়ে বড় কামারশালা-দোকান রয়েছে রঞ্জিত রাণার। তাঁর কথায়, “আমরা তিন ভাই মিলে এখনও কামার শিল্প টিকিয়ে রেখেছি। এটা তো আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর পেট ভরে না।’’ তিনি বলছেন, ‘‘অনেক উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বেরিয়েছে। সেগুলি থাকলে পরিশ্রম কমে। কিন্তু টাকার অভাবে সব যন্ত্র কিনতে পারি না। সরকার আমাদের নিয়ে এখনও ভাবেনি।”

রঞ্জিতবাবুর দোকানের উল্টোদিকেই জিতেন রাণার কামারশালা। তিনি বলেন, “আমরা দুই ভাই মিলে ব্যবসাটা কোনও রকমে চালাচ্ছি। সরকারি কোনও সাহায্য মেলেনি। ব্যাঙ্ক থেকেও ঋণ পাই না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘পারিশ্রমিক বেশি না মেলায় কারিগর আসে না। এ ভাবে কতদিন এই শিল্প টিকিয়ে রাখব সেটাই চিন্তার।”

বছর সত্তরের কামার শিল্পী তারাপদ রাণা বলছিলেন, “আমি কোনও রকমে পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য বাঁচাতে এখনও এই পেশায় রয়েছি। কিন্তু আমার ছেলে অনেক আগেই সোনার কাজ শিখে নিয়েছে। আমার অবর্তমানে হয়তো আমার কামারশালা বন্ধ হয়ে যাবে।”

কামার শিল্প বাঁচাতে কী ভাবছে প্রশাসন? পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অঞ্জলি বারি বলেন, “আমরা নিশ্চয় ওঁদের শিল্প বাঁচাতে কী করা যায় সে বিষয়ে ভাবব।”

এ বিষয়ে দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধান বলেন, “সত্যিই এই শিল্প দাঁতনের গর্ব। আমরা নিশ্চয় এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে যা করণীয় করব। ব্লক অফিসে ওই শিল্পীদের নিয়ে আলোচনায় বসব।”

Blacksmith Profit
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy