Advertisement
E-Paper

বিষ দাঁত ভেঙে দিন, কড়া বার্তা সূর্যের

গতবার বাম টিকিটে জয়ীই এ বার শাসকদলের মুখ। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে চন্দ্রকোনা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন সিপিএমের ছায়া দোলুই। পরে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। তাঁকেই এ বার ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে শাসকদল।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৮
খড়্গপুর গ্রামীণের সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুর গ্রামীণের সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। শুক্রবার। — নিজস্ব চিত্র।

গতবার বাম টিকিটে জয়ীই এ বার শাসকদলের মুখ।

২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে চন্দ্রকোনা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন সিপিএমের ছায়া দোলুই। পরে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। তাঁকেই এ বার ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে শাসকদল। যা নিয়ে তৃণমূলে কোন্দলেরও অন্ত নেই। শুক্রবার চন্দ্রকোনার কালিকাপুর মাঠে সভাতেও তৃণমূল প্রার্থীকে বিঁধলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘এখানে যে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন, তিনি বিক্রি হয়ে গিয়েছেন। এটা ভাবলে কষ্ট হয়। আপনারাই ভোট দিয়ে তাঁকে জিতিয়েছিলেন। আমাদেরও ওঁকে প্রার্থী করা ভুল হয়েছিল।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আসলে মুখ্যমন্ত্রী এখন গরু, ছাগলের মতো এমএলএ, এমপিদেরও কিনে নিচ্ছেন।”

শুক্রবার পশ্চিম মেদিনীপুরে চন্দ্রকোনা ছাড়াও খড়্গপুর গ্রামীণের মাতকাতপুর ও কেশিয়াড়িতেও সভা করেন সূর্যবাবু। কেশপুরে কর্মিসভা করেন তিনি। এ দিন কালিকাপুরের সভায় যাওয়ার আগে ঘাটাল শহরের ষষ্ঠী প্যালেসে বিদ্বজ্জনদের নিয়ে আয়োজিত একটি চা চক্রের আসরে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। সভায় উপস্থিত ছিলেন শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সভায় সূর্যবাবু বলেন, “আমরাই এ বার ক্ষমতায় আসব। ক্ষমতায় এসে গরিব মানুষের লুঠ হয়ে যাওয়া সব টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবই।”

কালিকাপুরের সভায় সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমরা যখন ২০১১ সালে ক্ষমতা ছাড়ি, তার আগে শিল্পের জন্য এক বছরে ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এসেছিল। আর মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ বছরে কার্যত এক হাজার কোটি টাকাও বিনিয়োগ আনতে পারেননি। সব কলখারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। চাকরি নেই। সব পরীক্ষাও বন্ধ।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের কটাক্ষ, “প্রথম দফার ভোটে আমরাই এগিয়ে রয়েছি। আর মুখ্যমন্ত্রী পিছোতে পিছোতে চেয়ার থেকে একসময় পড়ে যাবেন।আমরাই মুখ্যমন্ত্রীকে তুলে চেয়ারে বসাবো।” সভায় উপস্থিত কংগ্রেস নেতা জগন্নাথ গোস্বামী বলেন, “৩৪ বছরে আমরা সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করেছি। কিন্তু কখনও পার্টি অফিস বন্ধ করতে হয়নি। ভোটের সময় মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় পুলিশের সাহায্য নিতে হয়নি। আর তৃণমূল ক্ষমতায় এসে বাংলার এই সব ঐতিহ্য বন্ধ করে দিয়েছে।”

কেশপুরের কর্মিসভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায়, নন্দরানি ডল, মানিক সেনগুপ্ত প্রমুখ। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “আমাদের ১৬০০-র বেশি অফিস দখল হয়েছে। ২০০-র বেশি কংগ্রেসের অফিস দখল হয়েছে। ১৭৫ জন আমাদের খুন হয়েছে। কংগ্রেসেরও খুন হয়েছে। অন্য বিরোধী দল আক্রান্ত হয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন ঘোষণার পরে মুখ্যমন্ত্রী যে বলছেন ৭ বা ৯ জন খুন হয়েছে তৃণমূলের কর্মী। ঠিক বলছেন। কিন্তু এদের নাম- ধাম বলছেন না। কারণ, নাম- ধাম বললে বোঝা যাবে এরা প্রত্যেকে তৃণমূলের কর্মী। কিন্তু তৃণমূলের হাতেই খুন হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা বলছি, ওরা করেছিল। আমরা তা করতে পারি না। ওদের অফিস আমাদের দরকার নেই। আমাদের অফিস আমাদেরই খুলতে হবে। ওদের অফিসে যাতে ওদের ঝান্ডা উড়তে পারে তা দেখার দায়িত্ব আপনাদের, আমাদের।’’ সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ১৯ তারিখের পরেও যেখানে ওরা অফিস খুলেছে সে যদি বিধিসম্মত হয়, জবরদখল করে কিছু না হয় থাকে তাহলে ওদের অফিসে ওদের ঝান্ডা উড়বে। আর ওদের গায়ে একটাও আঁচড় যাতে না- লাগে তার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। মানুষকে নিতে হবে।”

পাশাপাশি আত্মসমালোচনার সুরে বলেন, “আমরা সব ৩৪ বছরে করতে পেরেছি? না, আমরা তা মনে করি না। আমরা কখনও বলি না যে ১০০ ভাগ করে ফেলেছি, ৯৯ ভাগ করে ফেলেছি। মুখ্যমন্ত্রী যে রকম বলেন। আমরা মনে করি না যা করেছিলাম সব ঠিক করেছি।”

খড়্গপুরের মাতকাতপুরের সভায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে সূর্যবাবুর অভিযোগ, “৫৬ ইঞ্চি ছাতি নিয়ে বলছেন দূর্নীতি হয়েছে। আপনি কী করছেন? সিবিআই, সেবি, ইডি, এনআইএ কী করছে? পর্দার আড়ালে দোস্তি। আর বাইরে কুস্তি। দাদা ভাইয়েরও দিদি ভাইকে দরকার, আর দিদি ভাইয়েরও দাদাবাইকে দরকার। দু’টি দলই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।”

সূর্যবাবু বলেন, ‘‘আমাদের শেষের ১৩ বছরে ১১ বার পরীক্ষা হয়েছে। আর ৪ বছরে ১টি পরীক্ষা হয়েছে। আরও একটি হয়েছে। তবে ফল বেরোয়নি। আপনার সাহস নেই যে আপনি ফল ঘোষণা করবেন। ফল ঘোষণা করলে যাঁরা যাঁরা পাশ করেছে, আর যাঁরা পাশ করেনি, যখন সবাই জানতে পারবে টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু কাজ হয়নি, তখন তৃণমূল আর তৃণমূলের মধ্যে গৃহযুদ্ধ লেগে যাবে।”

কর্মিদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ‘‘ভোটের দিন যদি ওরা বুথের সামনে হামলা করার চেষ্টা করে আপনারা প্রতিবাদ করবেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিষ দাঁত ভেঙে দিতে হবে।” কলকাতার উড়ালপুল বিপর্যয় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাত্রি বারোটার সময় দেখেছি। তখনও ধ্বংস স্তুপের পাহাড়। স্তুপের এতটুকুও সরেনি। এখনও আমাদের সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। কী লুকোতে চেয়েছিলেন তিনি। এই ক’জনেরই মৃত্যু হয়েছিল, নাকি আরও মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।”

কেশিয়াড়ির সভাতেও তৃণমূল ও বিজেপিকে নিশানা করেন নারায়ণগড়ের সিপিএম প্রার্থী। তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র নারায়ণগড়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করা নিয়ে এক সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সূর্যবাবু বলেন, “নারায়ণগড়ে গিয়ে জনসভা করতে হবে না। তার আগে উনি রাজভবনে গিয়ে পতদ্যাগপত্রটা দিয়ে আসুন।”

(তথ্য সহায়তা: সুমন ঘোষ, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে)

Suryakanta Mishra CPM Attacks TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy