E-Paper

আবাসে বরাদ্দ বন্ধ, সঙ্কটে ইট শিল্পও

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ৯৮ টি ইটভাটা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে চালু রয়েছে ৭০টি ইভাটা। বাকি ২৮টি ভাটা গত এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১১
Brick Kiln

দাসপুরের একটি ভাটায় মজুত রয়েছে ইট। তাই নতুন ইট তৈরির কাজ বন্ধ। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

এক বছর হতে চলল একশো দিনের কাজ-সহ বেশ কিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সঙ্গে বরাদ্দ বন্ধ আবাস যোজনাতেও। এতে বহু দরিদ্র মানুষ তো বটেই বিপাকে পড়েছেন ইট ব্যবসায়ীরাও। আবাস যোজনার বাড়ির কথা মাথায় রেখে প্রচুর বাড়তি ইট উৎপাদন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাড়ি ওঠেনি, ইটও বিকোয়নি। ফলে, সঙ্কট এখন গোটা ইট নির্মাণ শিল্পে। বেশ কিছু ইটভাটার ঝাঁপও বন্ধ হয়েছে।

জানা যাচ্ছে, গত বছর স্বাভাবিকের তুলনায় দেড় থেকে আড়াই গুণ বেশি ইট উৎপাদন হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে। মূলত জেলা প্রশাসনের অনুরোধেই ইটভাটার মালিকরা বড়তি ইট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ইটভাটা মালিকদের সংগঠন 'বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনে'র রাজ্য এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য তথা সংগঠনের মুখপাত্র সৈয়দ সাব্বির আহমেদ বলেন, “আবাস যোজনার বাড়ির জন্য জেলা ও ব্লক প্রশাসনের তরফে আমাদের ডেকে বৈঠক করে বাড়তি ইট উৎপাদনের অনুরোধ করা হয়েছিল। আমরাও তাই বাড়তি করেছিলাম।কিন্তু ওই ইট আর বিক্রি হয়নি।ফলে চরম আর্থিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে গোটা শিল্পে।”

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট ৯৮ টি ইটভাটা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে চালু রয়েছে ৭০টি ইভাটা। বাকি ২৮টি ভাটা গত এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছে, এমনিতেই কয়লার দাম বাড়ায় ইট শিল্পে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। উৎপাদন খরচও বেড়েছিল। তারপরে প্রশাসনের কথা মতো বাড়তি ইট তৈরি করেও বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সঙ্কট চরমে পৌঁছয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বেঙ্গল ব্রিক ফিল্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সভাপতি অতুল ঘোষের কথায়, “কোথাও ৮ লক্ষ, কোথাও ১০ লক্ষ বাড়তি ইট রয়ে গিয়েছে।ফলে নতুন ইট উৎপাদনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ দিকে শ্রমিকদের কাজ না দিলে তারাও হাতছাড়া হয়ে যাবে।” ইটভাটার শ্রমিকরা মূলত ভিন্ রাজ্যের। সব মিলিয়ে এই শিল্পের সঙ্গে লক্ষাধিক শ্রমিক যুক্ত। বিপাকে পড়েছেন সকলেই।

একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে এক বছর হতে চলল। এ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত চলছে। বিজেপি-র বক্তব্য, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করেছে তৃণমূলের পঞ্চায়েতগুলি। তারা হিসাব দিতে পারেনি বলেই বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ভোট-যুদ্ধে তাদের কাছে হার মেনে বিজেপি এই ষড়যন্ত্র করছে। টাকা আদায়ে দিল্লিতে কর্মসূচিও করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরাহা অবশ্য হয়নি।

গত বছর এই সময়ই পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ গোটা রাজ্যে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। উপভোক্তাদের নামের তালিকাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল।প্রথম পর্যায়ে বাড়ি তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। তখনই প্রশাসনের সম্মতিতে বাড়তি ইট তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। সাধারণত নভেম্বর থেকে জুন— এই ক’মাস ইট উৎপাদন হয়। এখন ইট তৈরির ভরা মরসুম। তবে এ বার বিপুল পরিমাণ মজুত ইট বিক্রি না হওয়ায় মরসুমেও ইট উৎপাদনে ভাটা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘গত বছর আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির যাবতীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। টাকা বরাদ্দ না হওয়ায় বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। বরাদ্দ হলেই উপভোক্তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।’’

এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও চলছে। রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, "দু'বছর আগেই রাজ্যের তরফে ২১ লক্ষ ৩৬ হাজার উপভোক্তার চূড়ান্ত তালিকা পাঠানো হয়েছিল। এতদিন সেই সব বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করেনি। ফলে বাড়ি তৈরি শুরু হয়নি। বাড়তি ইট বিক্রিও হয়নি। তার জেরে ইট প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়েছে।" বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তুষার মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলছেন, "আবাস যোজনায় রাজ্য সরকার কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতির কারণেই টাকা আটকে রয়েছে। আর তার ফল ভুগছেন আমজনতা।"

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ghatal brick kiln

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy