Advertisement
E-Paper

বহরে বাড়তে চায় পর্ষদ, কাজ কি বাড়বে!

দু’টি পুরসভা আর চারটি ব্লকের কিছু এলাকা নিয়েই হিমশিম। উন্নয়ন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এরই মধ্যে পরিধি বাড়াতে উদ্যোগী হল মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৯

দু’টি পুরসভা আর চারটি ব্লকের কিছু এলাকা নিয়েই হিমশিম। উন্নয়ন নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। এরই মধ্যে পরিধি বাড়াতে উদ্যোগী হল মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এমকেডিএ)।

রাজ্যের কাছে ইতিমধ্যে এলাকা পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব পাঠিয়েছে এমকেডিএ। এখন মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহর বাদে চারটি ব্লক— মেদিনীপুর সদর, শালবনি, খড়্গপুর ১ এবং খড়্গপুর ২-র কয়েকটি অঞ্চল রয়েছে এমকেডিএ-র আওতায়। এ বার গড়বেতা-১ এবং ৩, কেশপুর, দাসপুর- ১, কেশপুর, ডেবরা, কেশিয়াড়ির কয়েকটি অঞ্চলকে নিজেদের অধীনে আনতে চায় এমকেডিএ। রাজ্যের কাছে এই প্রস্তাবই পাঠানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, এখন ১৪টি অঞ্চল রয়েছে এমকেডিএ-র মধ্যে। এটা বেড়ে দ্বিগুন হতে পারে।

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি এমকেডিএ-র এক বৈঠক বৈঠকে পুনর্বিন্যাসের ব্যাপারে আলোচনা হয়। এমকেডিএ- র সদস্যরা এ ব্যাপারে একমত হন। তাঁরা জানিয়ে দেন, এলাকা বাড়লে ভালই হবে। পর্ষদের বরাদ্দও বাড়বে। ফলে, আরও বেশি কাজ করা সম্ভব হবে। এরপরই রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে এলাকা পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব পাঠায় এমকেডিএ। এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক মৃগেন মাইতি বলেন, “এলাকা পুনর্বিন্যাস নিয়ে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। সকলে একমত হন। তারপরই রাজ্যের কাছে ওই প্রস্তাব পাঠানো হয়।’’

মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদ

• এলাকা: ৫৯৬. ৭৬ বর্গ কিলোমিটার

• পুর-এলাকা: মেদিনীপুর ও খড়্গপুর

• গ্রাম পঞ্চায়েত: ১৪টি

• মৌজা: ৫১৪ টি

• জনসংখ্যা: ৮ লক্ষ ৭০ হাজার (পুরুষ ৫২.২৩ শতাংশ, মহিলা ৪৭.৭৭ শতাংশ)

• বার্ষিক বরাদ্দ: প্রায় ৪ কোটি

এ বার গড়বেতা-১, গড়বেতা ৩, কেশপুর, দাসপুর- ১, কেশপুর, ডেবরা,

কেশিয়াড়ির কয়েকটি অঞ্চলকে অধীনে আনতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে এমকেডিএ।

তবে এলাকা বাড়লে কি কাজ হবে? প্রশ্ন উঠছে, কারণ এখন যে সব এলাকা এমকেডিএ-র মধ্যে রয়েছে, সেখানেই তো নানা সমস্যা। বিশেষত খড়্গপুর শহরে। মেদিনীপুর শহরের এ দিকে সে দিকে তাও এমকেডিএ-র সাইনবোর্ড দেখা যায়। কোথাও রাস্তা নির্মাণ হয়েছে, কোথাও যাত্রী প্রতীক্ষালয়, কোথাও আবার শৌচাগার। কিন্তু খড়্গপুরে এমন সাইনবোর্ড হাতেগোনা। যেখানে বর্তমান এলাকাতেই চাহিদা মতো উন্নয়ন হচ্ছে না, সেখানে ফের নতুন এলাকা সংযোজনের উদ্যোগ কেন? এমকেডিএ-র এক কর্তা বলেন, “পর্ষদ এলাকার সব চাহিদা পূরণ করতে পারে না। স্থানীয় পরিষেবা যেমন জল, রাস্তা, শৌচাগার এ সবের কাজ করার জন্য পুরসভা রয়েছে, গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।’’ ওই কর্তার আরও যুক্তি, এমকেডিএ-র বার্ষিক বরাদ্দ খুব কম, মাত্র ৪ কোটি টাকা। ফলে, ইচ্ছে থাকলেও অনেক কাজ করা সম্ভব হয় না। একটা ভাল রাস্তা তৈরি করতে গেলেই তো প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ হয়। মেদিনীপুরের তুলনায় খড়্গপুরে কম কাজের কথাও মানছেন ওই কর্তা। তবে তাঁর বক্তব্য, সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে মেদিনীপুরে অনেক কাজ করা হয়েছে। খড়্গপুরেও কিছু কাজ হয়েছে। তবে ওত নয়। এ বার খড়্গপুরের দিকে বেশি নজর দেওয়া হবে। মেদিনীপুরে আগে ওয়েলকাম গেট হয়েছে। এ বার খড়্গপুরে ওয়েলকাম গেটের কাজ শুরু হবে। চৌরঙ্গিতে সৌন্দর্যায়নের কাজ চলছে। ওখানে বিবেকানন্দের মূর্তি বসানো হচ্ছে।

২০০৪ সালে গড়ে ওঠে এমকেডিএ। তারপর আর পর্ষদের এলাকা পুনর্বিন্যাস হয়নি। পর্ষদ গড়ে তোলার লক্ষ্য ছিল, তার আওতাধীন এলাকার সার্বিক উন্নয়ন। রাস্তা, নিকাশির হাল ফেরানো। এমকেডিএ-র মধ্যে যে সব এলাকা রয়েছে, ২০০১ সালে সেই সব এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৭ লক্ষ ২০ হাজার, ২০১১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮ লক্ষ ৭০ হাজার। বৃদ্ধির হার একই রকম থাকলে ২০২১ সালে জনসংখ্যা পৌঁছবে ৯ লক্ষ ২০ হাজারে। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমান তালে উন্নয়নের কাজ হয়নি বলেই অভিযোগ। বিশেষ করে খড়্গপুরে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরবাসীও। পুরসভারও বক্তব্য, গত এক বছরে ১১ নম্বর, ২৪ নম্বর, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে একটি রাস্তা ছাড়া কিছুই করেনি এমকেডিএ। যদিও পথবাতি, জল, সৌন্দর্যায়ন, যাত্রী প্রতীক্ষালয়-সহ নানা কাজ করতে পারত তারা। ইন্দার বিদ্যাসাগরপুর থেকে ওয়ালিপুলের রাস্তা, কমলাকেবিন থেকে জফলা পর্যন্ত বেহাল রাস্তার সংস্কারে পুরসভার পক্ষ থেকে এমকেডিএ-র কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। ৪নম্বর ওয়ার্ডের একটি রাস্তার জন্যও এমকেডিএকে আবেদন জানিয়েছে পুরসভা। তবে এমকেডিএ-র তরফে সাড়া মেলেনি। পুজোর আগে ওই দু’টি রাস্তা পুরসভাই সাময়িক মেরামত করে দিয়েছে। শহরের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিভাস হোড়ের কথায়, ‘‘জফলা রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। শুনেছি এমকেডিএ এই রাস্তা করবে। কিন্তু তাদের কোনও কাজই তো চোখে পড়ে না।’’ আর পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “আমাদের পুরসভার পক্ষে শহরের সব উন্নয়ন কাজ একসঙ্গে সম্ভব হয়না। এ ক্ষেত্রে এমকেডিএ আরও বেশি নজর দিলে ভাল হয়।’’

এমকেডিএ অবশ্য এলাকা পুনর্বিন্যাস করলে কাজের সুবিধা হবে বলেই জানিয়েছে। এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ওই বৈঠকে কেশপুর, কেশিয়াড়ি, ডেবরার কোন কোন গ্রাম পঞ্চায়েত পর্ষদের অধীন আসতে পারে, সেই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এলাকাগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। পর্ষদের এক সূত্রের দাবি, এলাকা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি নিয়ে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে একপ্রস্ত কথাও হয়েছে এমকেডিএ-র চেয়ারম্যান মৃগেনবাবুর। পুরমন্ত্রী মৃগেনবাবুকে আশ্বাস দিয়েছেন, পর্ষদের এলাকা বাড়ানোর বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

(সহ-প্রতিবেদন: দেবমাল্য বাগচী)

MKDA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy