প্রতীকী ছবি।
শরীরে বাসা বেঁধেছিল ক্যানসার। কিন্তু কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মতো খরচই জোগাড় করে উঠতে পারেননি রাইমণি মাণ্ডির (৫২) পরিজনেরা। ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রাম ব্লকের জরকা গ্রামের বাসিন্দা সেই রাইমণির মৃত্যু হল বিষক্রিয়ায়।
পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন ওই আদিবাসী মহিলা। পরিবারের দাবি, ক্যানসার হওয়ার মানসিক অবসাদেই বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বাড়িতে মজুত কৃষিজমিতে দেওয়ার কীটনাশক খান রাইমণি। শুক্রবার সকালে রাইমণির স্বামী বলাই মাণ্ডি তাঁকে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করালে শনিবার ভোরে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনাচক্রে কয়েকদিন আগে জরকা গ্রামেই নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মু ও ব্লক তৃণমূলের সভাপতি উজ্জ্বল দত্ত ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি করতে গিয়েছিলেন।
রাইমণির স্বামী জানান, মাস ছ’য়েক আগে অসুস্থ স্ত্রীকে নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পরে চিকিৎসক জানান, রাইমণি জরায়ুর ক্যানসারে আক্রান্ত। তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল। অগস্টের গোড়ায় রাইমণিকে রেডিও থেরাপি করানোর জন্য কলকাতায় রেফার করা হয়। বলাই বলেন, ‘‘মাত্র এক বিঘে জমি সম্বল। চার মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরে হাতে আর কিছুই নেই। তাই তাই দিনমজুরি করে সংসার চলে। স্ত্রীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা ছিল না।’’ রাইমণির মেয়ে চূড়ামণি ও জামাই লক্ষ্মীরাম টুডু বলেন, ‘‘অসুস্থতার পর থেকেই মা ভীষণই মনমরা হয়ে থাকতেন। আমরা চোখে চোখে রাখতাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে কী হয়ে গেল!’’
সাহায্যের জন্য প্রশাসনিক মহলে যোগাযোগ করেছিলেন? বলাই বলেন, ‘‘কলকাতার কিছুই চিনি না। কার কাছেই বা সাহায্য চাইব। তাই সেভাবে কারো কাছে সাহায্য চাওয়া হয়নি।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা নয়াগ্রাম ব্লক তৃণমূলের সভাপতি উজ্জ্বল দত্তের দাবি, ‘‘আমাদের কাছে এলে ওই মহিলাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সব রকম সহযোগিতা করতাম। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ওই মহিলার পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেননি।’’ বিধায়ক দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘জরকা গ্রামে দিদিকে বলো কর্মসূচি করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই মহিলার কথা তো আমাকে কেউ জানাননি।’’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের নয়াগ্রাম মণ্ডল সভাপতি উৎপল দাস মহাপাত্রের কটাক্ষ, ‘‘দিদিকে বলো কর্মসূচিতে শাসকদলের বিধায়ক-নেতারা বাড়ি-বাড়ি ঘোরার দাবি করছেন। মানুষ কেমন পরিষেবা পাচ্ছেন তা রাইমণির আত্মহত্যার ঘটনা প্রমাণ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy