অবহেলায় ভেঙে গিয়েছে পুরনো রথ। নিজস্ব চিত্র
জমিদার বাড়ির রাসমঞ্চ থেকে শুরু হত রথযাত্রা। জগন্নাথ নন, রথে চড়ে যেতেন জমিদার বাড়ির মদনমোহন জিউ। গোটা এলাকা ঘুরে রথ পৌঁছতো রথ ময়দানে। বসত মেলা। তেলেভাজা, নাগরদোলার টানে ভিড় জমাতেন বহু মানুষ।
বছর কুড়ি আগে থেকে জৌলুসে ভাটা পড়তে শুরু করেছিল। আর দশ বছর আগে বন্ধই হয়ে গিয়েছিল খড়্গপুর শহরের মালঞ্চর চণ্ডীপুরের জমিদার বাড়ির রথ উৎসব। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে যায় ঐতিহ্যের কাঠের রথ।
দু’দশক পরে এ বছর সেই রথযাত্রাই ফের সাড়ম্বরে চালু হতে চলেছে। এ জন্য উদ্যোগী হয়েছেন এলাকাবাসীই। বন্ধ থাকা রথযাত্রা ফের চালু করতে পুরপ্রধানের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল পাড়ার মহিলাদের সংগঠন ‘জাগৃতি সঙ্ঘ’। দিন পনেরো আগে সেই সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় তিনশোজনকে নিয়ে তৈরি হয় ‘জমিদার হরিসাধন রায় স্মৃতিরক্ষা কমিটি’। তাদের উদ্যোগেই ফের রথযাত্রা চালু হতে চলেছে। এ বার বাড়বে রথের মেলার জাঁকও। তবে পুরনো ঐতিহ্যবাহী রথে নয়, ১৪ ফুটের স্টিলের রথে এ বার এলাকা ঘুরবেন মদনমোহন জীউ।
কথিত আছে, ১৯৯ বছর আগে এলাকার জমিদার প্রিয়নাথ রায় এই রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন। তখন জমিদার বাড়ির মদনমোহন জিউ মন্দিরে রথের পুজো হত ঘটা করে। দেওয়া হত লুচি, সুজি ও ক্ষীরের ভোগ। দুপুরে জমিদার বাড়ির রাসমঞ্চ থেকে শুরু হত রথযাত্রা। প্রিয়নাথবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র হরিসাধন রায় রথযাত্রা আয়োজন করতেন। পরে সুভাষপল্লি ও তালবাগিচার রথযাত্রা উৎসব শুরু হতে জমিদার বাড়ির রথের জৌলুস কিছুটা কমে। হরিসাধনবাবুর ছেলে অতনু রায় ও কঙ্কন রায়ের আমল পর্যন্ত চলত রথযাত্রা। কঙ্কনবাবু কলকাতায় চলে যাওয়ার পরে রথের ভার পড়ে অতনুবাবুর উপর। তাঁর পরে রথ আয়োজনের ভার পায় স্থানীয় মধুসূদন মিত্রের পরিবার। এরপরই রথের জাঁক ক্রমশ কমে।
পুরপ্রধানের সহযোগিতায় হরিসাধন রায়ের ছেলে অতনুবাবুকে সুস্থ করে তোলার পরে এলাকার মহিলারাই এ বার রথযাত্রা চালুর তোড়জোড় শুরু করেন। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে সভাপতি পদে রেখে কমিটি গড়ে শুরু হয়েছে রথযাত্রার প্রস্তুতি। প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন স্টিলের রথ। ঠিক হয়েছে, মদনমোহন জিউর মূর্তি রথে বসিয়ে অতুলমণি স্কুল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। পরে রথ পৌঁছবে প্রিয়নাথ স্কুল সংলগ্ন রথ ময়দানে। রথ উৎসবের দায়িত্বে থাকা মনিকা সরকার বলেন, “খুব উৎসাহ নিয়ে আয়োজন করছি। চাইছি পুরনো রীতি বেঁচে থাকুক।” পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলেন, “ফের রথ উৎসব চালু করতে সব সহযোগিতা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy