Advertisement
E-Paper

মায়েদের সঙ্গেই পড়া চলে স্কুলছুট খুদেদের

শিশু শ্রমের দোহাই খাটে না ওদের ক্ষেত্রে। দিন আনা-দিন খাওয়া পরিবারগুলোর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও সারাদিন খুঁজে বেড়ায় সামান্য রোজগারের ভরসা। কখনও নিজের পথে, কখনও বাবা-মাকে সাহায্য করে। পড়াশোনা ওদের কাছে বিলাসিতারই নামান্তর, ২০১৫ সালেও।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৫ ০২:০৩
চলছে শিশুদের পড়াশোনা। সোহম গুহর তোলা ছবি।

চলছে শিশুদের পড়াশোনা। সোহম গুহর তোলা ছবি।

শিশু শ্রমের দোহাই খাটে না ওদের ক্ষেত্রে। দিন আনা-দিন খাওয়া পরিবারগুলোর ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও সারাদিন খুঁজে বেড়ায় সামান্য রোজগারের ভরসা। কখনও নিজের পথে, কখনও বাবা-মাকে সাহায্য করে। পড়াশোনা ওদের কাছে বিলাসিতারই নামান্তর, ২০১৫ সালেও।

সেই একই ছবি রামনগর ২ ব্লকের কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েতের চেঁওয়াশুলিতে। মত্‌স্যজীবীদের অভাবের সংসারে রোজগারের আশায় বাবা মায়ের সঙ্গে মত্‌স্যখটিতে মাছ বাছাইয়ের কাজে করে তাঁদের ছেলেমেয়েরাও। বেশির ভাগেরই তাই স্কুলের মুখ দেখা হয়নি। কেউ কেউ অবশ্য স্কুলে গিয়েছিল দু’একদিন। কিন্তু তারপরেই নাম উঠেছে ‘স্কুলছুট’-এর তালিকায়।

তাদের নিয়েই নতুন করে ভাবছে কাজলা জনকল্যাণ সমিতি ও এক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুধু চেঁওয়াশুলি নয়, বগুরান, জালপাই, জুনপুট, শৌলা মত্‌সখটিতে দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মত্‌সজীবীদের বাস। তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়েই শুরু হয়েছে ‘সেতু’ প্রকল্প।

ওই প্রকল্পের সঞ্চালক বিবেকানন্দ সাহু জানান, “স্কুলে যেতে পারে না এমন ছেলেমেয়েদের নিয়ে ইতিমধ্যেই বগুরান, জালপাই ও চেঁওয়াশুলি মত্‌স্যখটিতে গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ‘সেতু’ পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে। নানা ধরনের খেলাধুলা ও বিনোদনের মধ্য দিয়েই লেখাপড়া শেখানো হচ্ছে।” অনেক বয়স্ক মত্‌স্যজীবী মানুষ এখনও নিজেদের নাম স্বাক্ষর করতে পারেন না। তাদেরও অবসর সময়ে অক্ষর পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি বিবেকানন্দবাবুর।

মৎসখটিতে দাঁড়িয়েই করুণা বর ও জাহেদা বিবিরা জানান, ‘‘আগে আমাদের ছেলেমেয়েরা আমাদের সঙ্গেই মাছ বাছাইয়ের কাজ করত। অভাবের সংসারে ওদের রোজগারের টাকাও ব্যবহার করতে বাধ্য হতাম। অভাবের তাড়নায় ওদের লেখাপড়ার জন্য স্কুলে দিতে পারিনি। সমিতির সদস্যরাই মৎস্যখটিতে স্কুল তৈরি করে আমাদের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করল।’’

বাইরে থেকে মাস্টারমশাই আর দিদিমণিরা এসে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। শুধু মাছ বাছাইয়ের কাজ নয় ছেলেমেয়েরা বই পড়ছে, খাতায় লিখছে— এ দেখেই খুশি মায়েরা।

আর শুধু ছেলেমেয়েদের লেখাপড়াই নয়, মায়েরাও শিখছেন এখানেই। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মহিলারাও বিকল্প আয়ের পথও খুঁজে পাচ্ছেন। দরিদ্র মৎসজীবী পরিবারের মহিলাদের নিয়ে শুরু হয়েছে এক বিশেষ প্রশিক্ষণ শিবির। যেখানে তাঁদের শেখানো হচ্ছে নানা ধরনের শৌখিন জিনিস তৈরি করার কাজ। তাও ঘরের বা পরিবেশের ফেলে দেওয়া নানা জিনিসপত্র দিয়ে— ফেলে দেওয়া নারকেল মালা দিয়ে গণেশ বা গাছের বাকল দিয়ে পালতোলা নৌকা, ফুলদানি থেকে কলমদানি, বাঁশের ছিলা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ বা বিবেকানন্দ।

আগে অঞ্জনা, শিউলি, প্রতিমা, উমা বা জয়দা বিবিরা মত্‌স্যখটিতে মাছ বাছাইয়ের কাজ করতেন। তাঁদের স্বামীরা নিয়মিত মাছ ধরতে যান সমুদ্রে, কেউ আবার ভ্যান রিকশা চালান, মৎসখটিতে মাছ নিয়ে আসার জন্য। এতদিন স্ত্রীরাও শুধু স্বামীদের সাহায্যই করতেন। এখন নিজেরা খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প আয়ের পথ।

অবসর সময়ে তাঁরা প্রশিক্ষণ নিয়ে রাখছেন ভবিষ্যতের জন্য। কাজলা জনকল্যান সমিতির সম্পাদক স্বপন পন্ডা জানান, ‘‘১৩ মার্চ থেকে ২১ দিনের একটি প্রশিক্ষণ শিবির চালু করা হয়েছে চেঁওয়াশুলির মত্‌স্যখটিতে। দুই প্রশিক্ষক কমল মাইতি আর তুষার মাইতিএখন ব্যস্ত ছাত্রীদের কাজ শেখাতে। ৩০ জন মত্‌স্যজীবী মহিলা প্রতিদিন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।’’ চেঁওয়াশুলি মৎস্যখটি ছাড়াও জুনপুট, শৌলা ও বগুরান, জালপাই মৎস্যখটিতে চারটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রায় শ’খানেক মহিলা ও পুরুষ মত্‌স্যজীবী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

মৎস্যজীবীদের শিক্ষা ও আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজলা জনকল্যান সমিতি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানা।

তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপািশ দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মৎস্যজীবীদের সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে মহিলাদের বিকল্প আয়ের পথের দিশা খুঁজে পেয়েছেন মহিলা মৎস্যজীবীরা।’’ প্রশিক্ষণ নিয়ে মহিলা মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন মৎস্য দফতরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) রামকৃষ্ণ সর্দার। তাঁর কথায়, ‘‘মাছ ধরার মরসুম শেষ হলে বছরের চার থেকে পাঁচ মাস কর্মহীন হয়ে থাকতে হয় মৎস্যজীবীদের। এই সময় মহিলারা জিনিসপত্র তৈরি করে বিকল্প আয়ের পথ খুঁজে পাবেন।”

kathi Subrata Guha mother children school teacher poor village fisherman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy