প্রায় দেড় বছর আগে শেষ পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বার প্রশাসনিক সভা হয়েছিল নন্দকুমারের কাছে। আর প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছিল দিঘায়।
ফের তিন দিনের সফরে জেলায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক বৈঠকস্থল এ বারও দিঘা। তবে সভা হচ্ছে বাজকুল কলেজ ময়দানে। এই সভাস্থল নির্বাচনের পিছনে জেলায় তৃণমূলের দুই শিবিরের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়াস রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
২০০৮ সাল থেকে তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি এই জেলা। পঞ্চায়েত, বিধানসভা থেকে লোকসভা ভোট— সবেতেই একচ্ছত্র আধিপত্য ঘাসফুলের। আর সেই ঘাসফুলে কাঁটা একটাই—দলের দ্বন্দ্ব। এই জেলায় অধিকারী অনুগামীদের সঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির অনুগামীদের ঠান্ডা লড়াই কারও অজানা নয়। রাজ্যের পরিবহণ ও পরিবেশ দফতরের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর স্থান মমতার মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় সংগঠনেও শুভেন্দুর গুরুত্ব যথেষ্ট। আর বর্ষীয়ান নেতা শিশির অধিকারী পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি এবং কাঁথির সাংসদ হিসেবে রয়েছেন। অন্য দিকে জেলায় তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি পদে রয়েছেন বিধায়ক অখিল গিরি। সম্প্রতি যুব তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি পদের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরিকে।
জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের ধারণা, অধিকারীদের পাশাপাশি অখিল শিবিরের হাতে বাড়তি দায়িত্ব দিয়ে জেলায় দলের সাংগঠনিক ভারসাম্য রক্ষারই কৌশল নিয়েছেন নেত্রী। এ বার জেলা সফরে বাজকুল ও দিঘাকে বাছার পিছনেও সেই ভারসাম্য রক্ষার রণকৌশল রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, পর্যটনকেন্দ্র দিঘাকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ আবেগ রয়েছে। দিঘার সৌন্দর্যায়ন থেকে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নয়নে তাঁর উদ্যোগেই নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করার ক্ষেত্রে বারবার দিঘাকে বেছেছেন মমতা। দিঘা যে বিধানসভার মধ্যে পড়ে সেই রামনগরের বিধায়ক অখিল। অন্য দিকে, আজ, বুধবার যেখানে প্রশাসনিক জনসভা হবে সেই বাজকুল ভগবানপুরের বিধানসভার অন্তর্গত। যার বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি অধিকারী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ভারসাম্য রক্ষার কৌশল নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। তবে জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী মানছেন, ‘‘ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) ইচ্ছানুযায়ীই সভাস্থল ঠিক হয়েছে। এর আগে নন্দীগ্রাম, কোলাঘাট, নন্দকুমার-সহ বিভিন্ন স্থানে সভা হয়েছে। এ বার মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন বাজকুলে সভা করতে। তাই ওখানে সভা হচ্ছে।’’ দিঘা তো আপনার বিধানসভা এলাকায় পড়ে? মুখ্যমন্ত্রীকে কি দলীয়ভাবে সংবর্ধনা দেবেন? অখিলের জবাব, ‘‘দলীয়ভাবে সংবর্ধনার সূচি বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ প্রশাসনিক সফর। তাই দলীয় কোনও ব্যাপার থাকবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy