E-Paper

রাজবাড়ি চত্বরে সম্প্রীতি আর সংহতির ডোরে বাঁধা মহরম

উল্টোরথযাত্রা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তবে ভাঙা মেলা চলবে আরও কিছুদিন।আমবাগানে একদিকে চলছে রথের মেলা। বুধবার ছিল মহরম।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:০১
মহিষাদল রাজবাড়ি চত্বরে ইমামবাড়া।

মহিষাদল রাজবাড়ি চত্বরে ইমামবাড়া। নিজস্ব চিত্র।

সম্প্রীতি আর সংহতি তিনশো বছরের পুরনো। এবার এই মিলন ক্ষেত্রের মহিমা আরও জোরদার করল মহরম আর রথের মেলা। মহিষাদলের গর্গরাজাদের আমবাগান চত্বর হয়ে উঠেছিল মহামিলনের ক্ষেত্র।

মহিষাদল রাজবাড়ির কাছেই রয়েছে একটি আমবাগান। এই আমবাগানের চত্বরেই রয়েছে ইমামাবাড়া। পাশেই পরিখা। পরিখার ওপারে রাজবাড়ির কুলদেবতা গোপাল জিউয়ের মন্দির। মন্দির আর ইমামবাড়ার সহাবস্থান তিনশো বছরের প্রাচীন। এবার মহরম আর রথের মেলা কাছাকাছি সময়ে পড়েছিল। ফলে মিলনক্ষেত্রটি যেন অনন্য হয়ে উঠেছিল।

উল্টোরথযাত্রা শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। তবে ভাঙা মেলা চলবে আরও কিছুদিন।আমবাগানে একদিকে চলছে রথের মেলা। বুধবার ছিল মহরম। আমবাগানের আরেক দিকে তৈরি হয়েছে মহরমের তাজিয়ার মঞ্জিল। একে একে ছ’টি তাজিয়া মঞ্জিল করল এ দিন। সুসজ্জিত তাজিয়া দেখতে এ দিন দুই ধর্মের মানুষই ভিড় জমিয়েছিলেন আমবাগানে।

রাজবাড়ির বর্ষীয়ান সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘‘জাতীয় সংহতির প্রতীক এই রাজবাড়ির মহরম। এখানে পাশাপাশি অবস্থান কৃষ্ণের মন্দির আর মৌলবি সাহেবের ইমামাবাড়া। আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, আমাদের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে এই ইমামবাড়ার সুফি সাধকের মধুর সম্পর্কের কথা। সতীপ্রসাদ গর্গদের মুখেও ইমামবাড়ার সংযোগের কথা শুনেছি। আমরাও আমাদের মঙ্গল কামনায় শ্রদ্ধা জানাই এই ইমামবাড়ায়। মহরমের কারণে এই রাজবাড়ি মিলনক্ষেত্রে
পরিণত হয়।’’

রাজাদের ঔদার্যের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করলেন একটি মহরম কমিটির প্রধান শেখ হাসান। তিনি বলেন, ‘‘হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে প্রীতির ডোরে বাঁধা এই চত্বর।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা আরেক সম্প্রীতির উদাহরণ দিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মহিষাদল রাজবাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে রামবাগে রামজির প্রাচীন মন্দির রয়েছে। এই গ্রাম থেকেও মহরমের শোভাযাত্রা এসেছে এখানে। রামবাগে দশেরা উৎসবেও মুসলিম পরিবারে আত্মীয় কুটুম আসেন। আর মহরমের সময়ের পড়শি হিন্দুরাও শামিল হন আমাদের সঙ্গে। এটাই ঐতিহ্য।’’ স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মহরমের সময় বলে নয়, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংস্কৃতির আদানপ্রদানের ইতিহাস বেশ প্রাচীন।’’

প্রশাসন এবার মহরম উপলক্ষে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করে দিয়েছিল। ১৭ ফুট উচ্চতার বেশি করা যাবে না তাজিয়া। এ দিন কাঞ্চনপুর, লক্ষ্যা, রামবাগ, নাইকুন্ডি, ও কিসমত নাইকুন্ডি থেকে মহরম কমিটিগুলো শোভাযাত্রা বার করে। এ দিন আমবাগানে এসেছিলেন প্রদীপ বাগ, পবিত্র পাল। তাঁরা বলেন, ‘‘তাজিয়া দেখতেই এলাম। একদিকে মহরমের লাঠি খেলা অন্যদিকে রথের মেলা। বেশ ভাল লাগল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mahisadal Muharram Ratha Yatra

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy