E-Paper

সমীক্ষাই সার, পাকা বাড়ির মালিক আবাসের তালিকায়

দুর্নীতি হঠিয়ে উপভোক্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে একাধিক স্তরে সমীক্ষা রয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তা-ও দেখা যাচ্ছে, ভুয়ো উপভোক্তাদের নাম রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫১

— প্রতীকী চিত্র।

দোতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। চলছে তিনতলা নির্মাণের কাজ। তবুও আবাস যোজনায় প্রাপকদের খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে বাড়ি মালিকের। অন্যদিকে, পুরনো তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও খসড়া তালিকায় ‘উধাও’ হয়েছে দুঃস্থ প্রতিবন্ধী পরিবারের নাম। দুর্নীতি হঠিয়ে উপভোক্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করতে একাধিক স্তরে সমীক্ষা রয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু তা-ও দেখা যাচ্ছে, ভুয়ো উপভোক্তাদের নাম রয়েছে। শাসকদলের বদন্যতায় এটা হচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।

ঘটনাটি কাঁথি-৩ ব্লকের দুরমুঠ গ্রাম পঞ্চায়েতের। ওই পঞ্চায়েত এলাকার বেতালিয়া গ্রামে পেল্লাই দোতলা পাকা বাড়ির রয়েছে জাবের আলি খানের। পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তির নাম রয়েছে আবাসের প্রাপকদের খসড়া তালিকায়। কীভাবে আবাসের তালিকায় নাম এল? কারণ জানতে যাওয়া হয়েছিল জাবেরের বাড়ি। তবে সে সময় বাড়িতে কেউ ছিলেন না। তাঁকে ফোনও করা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন।

এখানেই শেষ নয়, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের একই পরিবারের দুই বাসিন্দার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আবাসের খসড়া তালিকায়। ভীমচরন বর্মণ এবং গান্ধারী বর্মণ নামে স্বামী-স্ত্রীর নাম খসড়া তালিকায় থাকায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। স্থানীয়রাও জানাচ্ছেন, এরা দুজনেই দইসাইয়ে একই বাড়িতে থাকেন। এমন ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর শাসক দল এবং বিজেপি পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতকে কাঠগড়ায় তুলেছে বামেরা। এলাকার সিপিএম নেতা ঝাড়েশ্বর বেরা বলেন, ‘‘আবাস যোজনার নামে দুর্নীতি চলছে। পঞ্চায়েতকে যুক্ত রেখে তৃণমূল আর পঞ্চায়েতের আধিকারিকদের একাংশ এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনও ভাবেই প্রকৃত প্রাপকদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, আবাসের চূড়ান্ত তালিকা সমীক্ষা শুরু হওয়ার পর বেতালিয়া গ্রামে স্থানীয় পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক কৃষ্ণা মিদ্যাকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন সিপিএম কর্মীরা। অভিযোগ, শাসকদলের এক কর্মীর মোটরবাইকে চেপে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করতে গিয়েছিলেন ওই নির্মাণ সহায়ক। সে সময় বামেদের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে রেখে আবাসের সমীক্ষা প্রভাবিত করছে শাসকদল। পরে ওই গ্রামে আরও এক দফা সমীক্ষা করেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। কিন্তু এর পরেও কী করে পাকা বাড়ির মালিকেরা নাম খসড়া তালিকায় এল? কাঁথি-৩ এর বিডিও দীপক ঘোষ বলছেন, ‘‘এরকম কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিষয়টি জানার পর এ দিনই খোঁজ নিয়ে দেখেছি।’’

এদিকে, পাকা বাড়ির মালিকেরা যখন উপভোক্তা তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছেন, তখন আগের আবাসের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও খসড়া তালিকা থেকে এবার নাম বাদ গিয়েছে এক প্রতিবন্ধী পরিবারের। মূক ও বধির রমা খাটুয়া নামে ওই মহিলা বলছেন, ‘‘ত্রিপলের নীচে স্বামী এবং মেয়েকে নিয়ে থাকতে হয়। আগের তালিকায় নাম ছিল। সমীক্ষা হয়েছে। কিন্তু খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ গিয়েছে।’’ ওই প্রতিবন্ধী পরিবার পুনরায় তদন্তের দাবি জানিয়ে কাঁথি-৩ বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে যে ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে, তাতে তাঁদের অভিযোগের আদৌ সুরাহা হবে কি না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন ওই মহিলা।

স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান কাঞ্চন মণ্ডল বলছেন, ‘‘আবাসের সমীক্ষায় পঞ্চায়েতের কোনও ভূমিকা ছিল না। তবে প্রকৃত প্রাপক যাতে কোনও ভাবেই বাদ না যায়, সে বিষয়ে পঞ্চায়েত গুরুত্ব দিয়ে দেখবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Awas Yojana Scheme Contai

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy