Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গলমহলের স্কুল এখনও ‘হতশ্রী’

সরকারি প্রাথমিক স্কুলের টিনের ছাদে অজস্র ফুটো। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় পড়ুয়ারা। ঝেঁপে বৃষ্টি হলে জলে ভাসে ক্লাসঘর। ভিজে নষ্ট হয় পড়ুয়াদের বইখাতা

জামাইমারি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের বর্তমান অবস্থা এমনই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

জামাইমারি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদের বর্তমান অবস্থা এমনই। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

  কিংশুক গুপ্ত
বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২৫
Share: Save:

সরকারি প্রাথমিক স্কুলের টিনের ছাদে অজস্র ফুটো। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভিজে যায় পড়ুয়ারা। ঝেঁপে বৃষ্টি হলে জলে ভাসে ক্লাসঘর। ভিজে নষ্ট হয় পড়ুয়াদের বইখাতা। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানাবর্তী বেলপাহাড়ির জামাইমারি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেন নেই রাজ্যের দেশ।

অভিভাবকেরা জানালেন, পাহাড়ি এলাকার এই স্কুলটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন জেলাশাসক আয়েষা রানি। তারপরও হাল ফেরেনি স্কুলের। এক সময় শিমূলপাল গ্রাম পঞ্চায়েতের দুর্গম জামাইমারি গ্রামে যাওয়ার রাস্তাই ছিল না। শিমূলপাল থেকে চৌকিশাল হয়ে জামাইমারি গ্রামে যওয়ার পাহাড়ি দুর্গম আগের সেই পথ এখন পিচের হয়েছে। জামাইমারি গ্রামে অবশ্য কংক্রিটের ঢালাই রাস্তাটি বানিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। কারণ, রাস্তার একদিকে জামাইমারি গ্রাম। অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের পূর্ব সিংভূম জেলার চাকুলিয়া থানার পাকুড়িয়াশোল গ্রাম। রাস্তা ভাল হওয়ায় এখন শিমূলপাল থেকে অনায়াসে গাড়িতে জামাইমারি যাতায়াত করা যায়। বছর দশেক আগে এই চৌকিশালের জঙ্গল রাস্তায় মাওবাদীরা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতরের একটি মোবাইল ভ্যান। চিকিৎসক ও নার্স সহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল। রাত বিরেতে ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে এক সময় এলাকায় মাওবাদীদের নিয়মিত আনাগোনা ছিল।

১৯৮১ সালে জামাইমারি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি চালু হয়। টিনের ছাউনি দেওয়া স্কুলের পুরনো ভবনের একটি ক্লাসঘরে শিশু শ্রেণি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস হয়। সর্বশিক্ষার অনুদানে তৈরি স্কুলের নতুন ভবনের আরেকটি শ্রেণিকক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়ারা বসে। স্কুলের মোট পড়ুয়া ৩৬ জন। পড়ুয়াদের আর্ধেক আদিবাসী, বাকিরা অনগ্রসর শ্রেণির। সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে পানীয় জলের ব্যবস্থা ও শৌচাগার থাকলেও পুরনো ভবনের টিনের ছাদটি সংস্কার করা হয়নি। তাই বৃষ্টি হলে পড়ুয়াদের ভেজা ছাড়া উপায় নেই। স্কুলের খুদে পড়ুয়া উমেশ মুর্মু, লোকেশ নায়েক, ছিতা মুর্মু, লৈতনি হাঁসদা জানায়, ক্লাস চলাকালীন হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলে তারা ভিজে যায়। তখন অন্য ক্লাসঘরে গিয়ে বসতে হয়। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ সুব্রত শীট বলেন, ‘‘বর্ষায় স্কুল করতে খুবই সমস্যা হয়। মাস তিনেক আগে জেলাশাসক আমাদের স্কুল পরিদর্শন করে গিয়েছেন।’’

স্কুলের পাঁচিল না থাকায় শিশু পড়ুয়াদের নিয়ে চিন্তায় থাকেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুলের ধার ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে মাঝে মধ্যেই গাড়ি যাতায়াত করে। এখনও এই স্কুলে মিড ডে মিল খাওয়ার ‘ডাইনিং হল’ হয়নি। তাই অপরিসর বারন্দায় বসে খেতে হয় পড়ুয়াদের। অন্য সরকারি প্রাথমিক স্কুলে দোলনা, স্লিপার, ঢেঁকি-র মতো বিনোদনের নানা উপকরণ দেওয়া হলেও জামাইমারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সে সব দেওয়া হয়নি। এই নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, জামাইমারি গ্রামটি একেবারে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকার গ্রামের স্কুল বলেই উপেক্ষিত হয়ে রয়েছে। এক সময় বাসিন্দাদের বঞ্চনাকে হাতিয়ার করে এলাকায় প্রভাব বাড়িয়েছিল মাওবাদীরা। এমন একটি এলাকার সরকারি স্কুল কেন এভাবে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

ঝাড়গ্রাম জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র বলেন, ‘‘স্কুলটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Belpahari Academics Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE