Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Politics

তৃণমূলের শ্রমিক সম্মেলনে অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে, বিতর্ক

‘ন্যাশনাল অ্যাম্বুল্যান্স কোড’ অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র রোগী পরিবহণের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সকে। বিরোধীদের অভিযোগ, সে ক্ষেত্রে এটা তো নিয়মভঙ্গেরই শামিল।

Ambulance entering through a gate of TMC meeting

এমনই একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স ছিল এদিনের সম্মেলনে। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০১
Share: Save:

ব্যাপারটা কী! তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সভায় এত অ্যাম্বুল্যান্স কেন? পথচলতি মানুষের প্রশ্নভরা চোখ উত্তর খুঁজছিল। উত্তর মেলেনি। তবে দানা বেঁধেছে বিতর্ক।

রবিবার ছিল আইএনটিটিইউসি-র ডেবরা ব্লক সম্মেলন। সংগঠন গড়ে ওঠার পরে এই ব্লকে এটাই ছিল প্রথম সম্মেলনে। ডেবরা প্রেক্ষাগৃহে সম্মেলন শুরু হতে দেখা গেল, গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ৫টি অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে আইআনটিটিইউসির সদস্য কর্মীরা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সম্মেলন শেষে সেগুলি করেই ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। ততক্ষণ অ্যাম্বুল্যান্সগুলি অপেক্ষা করেছে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে।

‘ন্যাশনাল অ্যাম্বুল্যান্স কোড’ অনুযায়ী, জরুরি পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র রোগী পরিবহণের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয় অ্যাম্বুল্যান্সকে। বিরোধীদের অভিযোগ, সে ক্ষেত্রে এটা তো নিয়মভঙ্গেরই শামিল। আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতি সাবির আলি বলেন, “এ ভাবে অ্যাম্বুল্যান্সে কর্মীরা এসেছেন বা অ্যাম্বুল্যান্স সম্মেলনে এসেছে বলে আমি দেখিনি। আমি খোঁজ নেব। যদি অ্যাম্বুল্যান্স এসে থাকে তবে নিশ্চয়ই কারা এনেছিল তা জেনে পদক্ষেপ করব।” তবে এমন ঘটনায় খুব একটা অন্যায় দেখছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, “আমি পাঁচটি অ্যাম্বুল্যান্স দেখিনি। একটি অ্যাম্বুল্যান্স নজরে এসেছে। কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের চালক যদি আমাদের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য হন ও অপেক্ষারত রোগী না থাকে তা হলে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে সম্মেলনে যোগ দিতে আসতে পারে।’’ যদিও বিজেপির অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্সগুলি এমন ভাবে দেওয়া হয় যাতে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে এতগুলি অ্যাম্বুল্যান্স যদি এক জায়গায় থাকে তা হলে প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা অসুস্থ হলে কী হবে।

বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, “তৃণমূল আইনশৃঙ্খলা, নিয়ম-কানুন কিছুই মানে না। যেখানে রোগী পরিষেবার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার করা হয় সেখানে তাঁরা অ্যাম্বুল্যান্সে করে কর্মী সম্মেলনের জন্য লোক আনছে। এটা আমাদের তথা পশ্চিমবঙ্গবাসীর লজ্জা। আমরা এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে জোরাল প্রতিবাদ করব।” এ দিনের ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, শ্রমিক সংগঠনের ব্লক সভাপতি সাবির আলি প্রমুখ। যাঁরা এই সম্মেলনের আয়োজক সেই আইএনটিটিইউসি-র অবশ্য অ্যাম্বুল্যান্সের বিষয়ে জানা নেই বলেই দাবি করেছে। যদিও আশিসের বক্তব্য, ‘‘সকলের কাছেই তো ফোন রয়েছে। যেতে কতক্ষণ! তা ছাড়া ওই চালক কর্মী হয়তো ভেবেছেন গরমে সম্মেলনে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে ওই অ্যাম্বুল্যান্সেই পরিবহণ করা যাবে তাই অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করিয়ে রেখেছেন।”

তবে বিরোধীদের দাবি, সম্মেলনের সভাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। তা ছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর জনসভাতেও বিপুল জনসমাগম সত্ত্বেও শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড় করানো থাকে।

বিধায়ক হুমায়ুন কবীর বলেছেন, “আমি অ্যাম্বুল্যান্স দেখিনি। আর যদি কোনও প্রাইভেট অ্যাম্বুল্যান্সের মালিক মনে করেন যে তিনি ওই অ্যাম্বুল্যান্সে অন্য কোথাও যাবেন তো যেতে পারেন। আমার অ্যাম্বুল্যান্স হলে সেটা করতাম না।” তন্ময়ের কটাক্ষ, ‘‘কোমায় যাওয়া তৃণমূল ওই অ্যাম্বুল্যান্সে বিদায় নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur TMC Ambulance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE