Advertisement
E-Paper

দিনে ঘরবন্দি, বাঁধ ভাঙল বিকেল হতেই   

রবিবার সকাল থেকেই মেদিনীপুর শহরের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। লোকজন প্রায় বাড়ি থেকে বার হননি। কালেক্টরেট মোড়, এলআইসি মোড়, কেরানিতলা, কলেজ মোড়ের মতো শহরের জনবহুল এলাকাগুলি ছিল একেবারেই ফাঁকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০২:৩২
অভিবাদন: রবিবার বিকেলে খড়্গপুর শহরের সুভাষপল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

অভিবাদন: রবিবার বিকেলে খড়্গপুর শহরের সুভাষপল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

জনতা কার্ফুকে মান্যতা দিয়ে কার্যত ঘরবন্দি হয়েই কাটালেন পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের মানুষজন।

রবিবার সকাল থেকেই মেদিনীপুর শহরের রাস্তাঘাট ছিল প্রায় জনশূন্য। লোকজন প্রায় বাড়ি থেকে বার হননি। কালেক্টরেট মোড়, এলআইসি মোড়, কেরানিতলা, কলেজ মোড়ের মতো শহরের জনবহুল এলাকাগুলি ছিল একেবারেই ফাঁকা। তবে বিকেলে মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় থালা, ঘণ্টা, শাঁখ বাজতে শোনা গিয়েছে। বাজিও ফেটেছে কিছু এলাকায়। রবিবার দাঁতনও ছিল সুনসান। করোনার মোকাবিলায় রবিবার জনতার কার্ফুতে কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন গড়বেতা, গোয়ালতোড়ের মানুষ। মেদিনীপুরের মতো গড়বেতাতেও সারাদিন ঘরবন্দি থাকার পর এদিন বিকেল ৫টায় গ্রামে গ্রামে বাজতে থাকে শঙ্খধবনি, কাসর-ঘণ্টা। ঘণ্টা বাজানো হয় মন্দিরেও। গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘গুজবে কান না দিয়ে মানুষকে সতর্ক থেকে কিছু নিয়ম মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে।’’

ঘাটাল শহর-সহ মহকুমার সর্বত্রই ছিল বেশ সুনসান। চলেনি বাস-অটোও। একই চিত্র খড়ার, ক্ষীরপাই, চন্দ্রকোনা, রামজীবনপুর, দাসপুর, সোনাখালি, গোপীগঞ্জ, নাড়াজোল-সহ মহকুমার ব্যস্ত বাজারগুলিতেও। জনতা কার্ফুর মধ্যেও পুলিশ-প্রশাসনের পৃথক ‘কুইক রেসপন্স টিম’-এর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছেন অনেকে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা লোকজনদের খবর দিচ্ছেন সাধারণ মানুষও। দিন তিনেক আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ঘাটালে ফিরেছিলেন এক মহিলা। প্রশাসনের কাছে খবর আসতেই তড়িঘড়ি তাঁকে বাড়িতে নজরবন্দি করেছে প্রশাসন। অন্য দিকে, ‘জনতা কার্ফু’-র মধ্যেই গড়বেতায় চলল করোনা-সচেতনতা অভিযান। চন্দ্রকোনা রোডে গড়বেতা ৩ ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে এই সচেতনতা প্রচারাভিযান চালানো হয়। টোটোয় মাইক বেঁধে করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের আবেদন শোনানো হয় চন্দ্রকোনা রোড এলাকায়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আকাশদীপ সিংহ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন-সহ করোনা নিয়ে কী করতে হবে, তা মানুষকে সচেতন করতে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।’’

শনিবার রাত থেকেই সুনসান হয়ে গিয়েছিল অরণ্যশহর ঝাড়গ্রাম। রবিবার সকালেও রাস্তায় দু’এক জন পুলিশ কর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। ঝাড়গ্রাম শহর-সহ জেলার সর্বত্র দোকানপাট বন্ধ ছিল। শহরের জুবিলি মার্কেট, কোর্ট রোড, বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন-সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি লোকজনের দেখা মেলেনি। বেসরকারি কোনও যানবাহনও পথে নামেনি। বিকেল পাঁচটার পর শহর ও গ্রামগঞ্জের অনেকেই শাঁখ, কাঁসর, ঘণ্টা বাজান। একই চিত্র দেখা গেল রেলশহরেও। রবিবার খড়্গপুর শহরের সর্বত্র দোকানপাট বন্ধ ছিল। চলেনি বাস, অটো। সকাল থেকে স্টেশন ছিল ফাঁকা। তবে দুপুরের পর মুম্বই ও বেঙ্গালুরু থেকে যাত্রী নিয়ে ফেরে দু’টি বিশেষ ট্রেন। কয়েক হাজার যাত্রী নামে খড়্গপুর স্টেশনে। সেখানেই ছুটে আসেন মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ-সহ পদস্থ পুলিশ অফিসারেরা। সমস্ত যাত্রীকে দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা করা হয়। প্রায় শতাধিক যাত্রীর সমস্যা ধরা পড়ায়, তাঁদের আলাদা করে পরীক্ষার জন্য স্থানীয় একটি স্কুল ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়।

মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরী বলেন, “এই যাত্রীদের বিশেষভাবে পরীক্ষার জন্য আলাদা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। তা ছাড়া এখন এই যাত্রীরা বাড়ি ফেরার জন্য কোনও যানবাহন পাবে না। আমরা প্রয়োজনে বাসে ওঁদের গন্তব্যে ছেড়ে দেব।” মুম্বই থেকে আসা এগরার বাসিন্দা সমরেশ জানা বলেন, “আমি মুম্বইতে কর্মরত। মুম্বাই লকডাউন হয়ে যাওয়ায় এই ট্রেনে খুব কষ্ট করে এলাম। কিন্তু বাড়িতে যাওয়ার কোনও যানবাহন পাচ্ছি না। কী হবে জানি না।” এমন আবহে এদিন শহরের উপকন্ঠে থাকা শিল্পতালুক এলাকাও ছিল কার্যত জনশূন্য। অধিকাংশ কারখানায় যাননি শ্রমিকেরা।

Coronavirus Janta Curfew
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy