করোনায় না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছেন বহু গুণী মানুষও। দিন কয়েক আগে এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে শহর মেদিনীপুর। এ বার এক সঙ্গীতশিল্পীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রেলশহরের সাংস্কৃতিক মহল।
বুধবার রাতে খড়্গপুর শহরের ইন্দার বাসিন্দা সদাহাস্য সাংস্কৃতিক কর্মী শুভাশিস চক্রবর্তীর (৬৮) মৃত্যু হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁশকুড়ার বড়মা হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হন। রেলের অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজার শুভাশিস সঙ্গীতশিল্পী হিসাবেই বেশি পরিচিতি পেয়েছিলেন। নানা মঞ্চে বিচারকের দায়িত্ব সামলেছেন। ছিলেন ‘খড়্গপুর শঙ্খমালা’র সহ-সভাপতি। শহরের আরেক প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পী প্রহ্লাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একবার ডাকঘরের সরস্বতী পুজোয় হাফপ্যান্ট পড়ে শুভাশিসদার সঙ্গে তবলা বাজিয়েছিলাম। সে কথা দেখা হলেই শুভাশিসদা বলতেন। কোথাও গেলে সকলকে মাতিয়ে রাখতেন।” ‘খড়্গপুর শঙ্খমালা’র সম্পাদক কৃশানু আচার্যের কথায়, “কোনও দিন মানুষটাকে রাগতে দেখিনি। মানুষটার গানের ভান্ডার ছিল অসাধারণ। যে কোনও গানের স্বরলিপি নিজেই দ্রুত করে ফেলতেন।’’
২০১৩ সালে শুভাশিস হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ক্রমে সুস্থ হয়ে ফের নিজের সাংস্কৃতিক জগতে ডুব দিয়েছিলেন। গত ২৫ এপ্রিল তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। বাড়িতেই চলছিল চিকিৎসা। ১ মে করোনা পরীক্ষায় জানা যায় তিনি পজ়িটিভ। সংক্রমিত হন স্ত্রী বরুণাও। বেঙ্গালুরু থেকে তড়িঘড়ি আসেন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত একমাত্র সন্তান শৌনক। ৪মে খড়্গপুরে রেলের প্রধান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শুভাশিসকে। ৯মে পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। কিন্তু অক্সিজেনের অভাব হওয়ায় স্থানান্তরিত করতে হয় বড়মা হাসপাতালে। দিন কয়েক আগে করোনাতেই মেদিনীপুর হারিয়েছিল মিতালি ত্রিপাঠী নামে এক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বকে। এ বার হারাল পাশের শহর খড়্গপুর। বাচিক শিল্পী লীনা গোপ বলেন, “সকলের কাছের মানুষ ছিলেন শুভাশিসদা। সকলকে স্নেহের বন্ধনে বেঁধে রেখেছিলেন।” আর পিতৃহারা শৌনক বলছেন, “বাবা ছিলেন আমার বন্ধু। যে ভাবে শহরের সাংস্কৃতিক মহল বাবার স্মৃতিচারণা করছে, তাতে বাবা ওঁদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।’’