Advertisement
E-Paper

বাড়ি পেয়েও ফের তালিকায় নাম

ইন্দিরা আবাস যোজনায় বছর দশেক আগেই বাড়ি তৈরির জন্য ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন সরস্বতী সাহু। বাড়ি তৈরিও করে ফেলেছিলেন নন্দকুমারের চকপুয়্যাদা গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতীদেবী। থাকেনও সেই বাড়িতে। চলতি বছরে সেই ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৮
ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি হওয়া সরস্বতীদেবীর বাড়ি (বাঁ দিকে) নতুন পাকা বাড়ির আশায় স্থানীয় এক বাসিন্দা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

ইন্দিরা আবাস যোজনায় তৈরি হওয়া সরস্বতীদেবীর বাড়ি (বাঁ দিকে) নতুন পাকা বাড়ির আশায় স্থানীয় এক বাসিন্দা (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

ইন্দিরা আবাস যোজনায় বছর দশেক আগেই বাড়ি তৈরির জন্য ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন সরস্বতী সাহু। বাড়ি তৈরিও করে ফেলেছিলেন নন্দকুমারের চকপুয়্যাদা গ্রামের বাসিন্দা সরস্বতীদেবী। থাকেনও সেই বাড়িতে। চলতি বছরে সেই ইন্দিরা আবাস যোজনার নাম বদলে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা। অভিযোগ, এই যোজনায় বাড়ি তৈরির যে তালিকা এসেছে তাতে ফের নাম রয়েছে সরস্বতীদেবীর পরিবারের।

একইভাবে ওই তালিকায় নাম রয়েছে এলাকার বাসিন্দা প্রভাস দাসের। যদিও ১০ বছর আগে ইন্দিরা আবাস যোজনায় প্রভাসবাবুরও পাকা বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে।

দরিদ্র পরিবারের জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি, অধিকার, আমার ঠিকানা-সহ বিভিন্ন সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য আগে টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সেই অনুযায়ী তৈরিও হয়েছে পাকা বাড়ি। তারপরও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় এইসব পরিবারের একাংশের নাম থাকায় তালিকার অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় প্রায় ৪ লক্ষ ৬০ হাজার পরিবারের নামের তালিকা এসেছে। যা গোটা জেলার পরিবারের সংখ্যার প্রায় ৪১ শতাংশ। আর এই সংখ্যাটা জেলার পক্ষে কিছুটা অস্বাভাবিক বলেই মত প্রশাসনিক মহলের। তাই বিষয়টি নিয়ে নড়ে বসেছে প্রশাসন। নতুন নির্দেশে, আগের সরকারি প্রকল্পে যাঁরা বাড়ি তৈরির টাকা পেয়ে গিয়েছেন, তাঁদের নাম ওই তালিকা থেকে বাদ দিতে বলা হয়েছে। সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমলও। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য যে সব পরিবার আগে টাকা পেয়েছে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে তাদের নাম বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর তদন্ত করে সংশোধিত চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হবে।’’

আর ঠিক এখানেই সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পরিবার পিছু পাকাবাড়ি তৈরির জন্য ১ লক্ষ টাকা ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হবে। ২০১২ সালে এই গৃহনির্মাণ প্রকল্পে যে পরিবার সাহায্য পাবে তার তালিকা প্রকাশের পর দেখা যায় এর মধ্যে অনেকেই সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে ফেলেছেন। আবার নিজেদের টাকায় বাড়ি তৈরি করেছে এমন অনেক পরিবারের নামও ওই খসড়া তালিকায় রয়েছে। আর গোল বেঁধেছে এখানেই। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী খসড়া তালিকায় থাকা যে সব পরিবারের পাকাবাড়ি আছে তাঁদের নাম প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কথা। কিন্তু ওই খসড়া তালিকা ধরে বাড়ি তৈরির জন্য তালিকাভুক্ত পরিবার হিসেবে ফের টাকা পাওয়ার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের কাছে গিয়ে দরবার করেছেন ওইসব বাসিন্দারা। ফলে বিপাকে পড়েছেন পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা।

নন্দকুমার ব্লকের ব্যবত্তারহাট পশ্চিম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সন্দীপ চক্রবর্তী জানান, হরিহরপুর, চকপুয়্যাদা ও চক রঘুনাথ গ্রাম নিয়ে তাঁর বুথ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার তালিকায় তাঁর বুথের ২৫২ টি পরিবারের নাম রয়েছে। এদের মধ্যে ১০০ টি পরিবারের আগেই পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে সরকারি প্রকল্পে। আর প্রায় ১০০ পরিবারের নিজস্ব টাকায় তৈরি পাকাবাড়ি রয়েছে। সন্দীপবাবুর কথায়, ‘‘ কিন্তু এইসব পরিবারের লোকেরাও ফের ওই টাকার দাবিতে ছুটে আসছেন। সরকারি নিয়ম বোঝাতে গিয়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা।’’

চকপুয়্যাদা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ২০০৬-০৭ অর্থবর্ষে ইন্দিরা আবাস যোজনার ৪৫ হাজার টাকায় পাকা বাড়ি হয়েছে সরস্বতী সাহুর। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘বছর ন’য়েক আগে সরকারি টাকায় আমাদের বাড়ি তৈরি হয়েছিল। এ বার বাড়ি তৈরির তালিকায় নাম রয়েছে। গত শুক্রবার ব্লক অফিসের লোকজন খোঁজ নিতে এসেছিল।’’ কিন্তু সরকারি টাকায় আপনার তো পাকা বাড়ি হয়েছে। আর কি পাওয়া উচিত? এ বার কিছুটা থতমত খান তিনি। বলেন, ‘‘জানি উচিত নয়। তবে ফের বাড়ি তৈরির জন্য টাকা পেলে ভাল হয়।’’

Pradhan Mantri Awas Yojana Corruption Tamluk
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy