Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Panskura

রক্তে ভেজা স্কুলপোশাক, সাত বছরেও টাটকা স্মৃতি

টেলিভিশনের পর্দায় বছর সাতেকের ঋষভের মৃত্যুর খবর দেখে সাত বছর আগের স্মৃতি টাটকা হয়ে গিয়েছিল পাঁশকুড়ার প্রতাপপুরের ঘোড়াই দম্পতির।

পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুল কাল। —ফাইল চিত্র

পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুল কাল। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:২৬
Share: Save:

পুলকার দুর্ঘটনায় কয়েকদিন আগে মৃত্যু হয়েছে হুগলির খুদে স্কুল পড়ুয়া ঋষভ সিংহের। টেলিভিশনের পর্দায় বছর সাতেকের ওই ছাত্রের মৃত্যুর খবর দেখে সাত বছর আগের স্মৃতি টাটকা হয়ে গিয়েছিল পাঁশকুড়ার প্রতাপপুরের ঘোড়াই দম্পতির। ২০১৩ সালের এক সকালে স্কুলে যাওয়ার পথেই বড়সড় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল তাদের সন্তানদের স্কুলভ্যান। ৩০ ফুট উঁচু বাঁধ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছিল দুই সন্তান সায়ন-সুম্মিতা।

প্রতাপপুর-২ পঞ্চায়েত এলাকার ঝিকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা শীতল ঘোড়াইয়ের দুই সন্তান সুস্মিতা এবং সায়ন। ২০১৩ সালে তারা মাগুরি জগন্নাথচকের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। ভাই-বোন বাড়ি থেকে ভ্যানে করে স্কুলে যেত। ওই বছরই একদিন স্কুলে যাওয়ার পথে স্থানীয় রায়বাঁধ এলাকার বেহাল রাস্তায় পিছলে যায় তাদের স্কুলভ্যানের চাকা। বেশ কয়েকটি পাল্টি খেয়ে স্কুল ভ্যানটি প্রায় ৩০ ফুট নীচে রায়বাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে গিয়ে পড়ে। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ভ্যানটি।

ভ্যানে ওই সময় জনাদশেক পড়ুয়া ছিল। সকলেই আহত হয়। তাদের প্রথমে পীতপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এবং পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রত্যেকের মাথায় ছিল গভীর ক্ষত। অনেকেরই ৫ থেকে ১০টি সেলাই পড়েছিল। ওই সময় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত বছর সাতের সুস্মিতা এবং নার্সারিতে পড়ত বছর চারের সায়ন। তাদের মাথাতেও সেলাই পড়ে। বর্তমানে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুস্মিতা সে দিনের কথা ভোলেনি। সে বলে, ‘‘প্রথমে কাদায় আমাদের ভ্যানের চাকা আটকে যায়। সেটিকে তুলতে গিয়ে চাকা পিছলে যায়। ভ্যান পাল্টি খেয়ে নীচে পড়ে যায়। সকলেই ভয়ে কাঁদতে শুরু করি। রক্তে ভিজে গিয়েছিল ইউনিফর্ম।’’ সায়নের কথায়, ‘‘ভয়ে দিদিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। মাথায় সেলাই করে দিয়েছিলেন ডাক্তারবাবু।’’

ওই ঘটনার পরে স্কুলের তরফে ভ্যান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাড়ার গাড়িতে চাপিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়। অন্য কোনও উপায় না থাকায় সায়ন-সুস্মিতাদেরও সেই গাড়িতেই স্কুলে পাঠাতেন শীতল।

বর্তমানে মাগুরি জগন্নাথচক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে সায়ন। আর দিদি সুস্মিতা পড়ে হরিনারায়ণ চক বিদ্যামন্দিরের। এখন অবশ্য দুই ভাই-বোন সাইকেলে স্কুলে যায়। তাদের বাবা তথা পেশায় রেলকর্মী শীতল বলেন, ‘‘ঋষভের মৃত্যুর খবর শুনে খুব খারাপ লাগছে। ২০১৩ সালে আমার ছেলে, মেয়েও একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিল। ঈশ্বরের কৃপায় ওরা সুস্থ রয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিটি স্কুলের উচিত পুলকারের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। তা হলে এভাবে অকালে প্রাণ ঝরবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panskura Pull Car Accident Polba Pull Car Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE