Advertisement
E-Paper

সেদিনের পর থেকে থম মেরে গিয়েছে গোটা সুনিয়া

এখনও পুরো ঘটনাটা চোখের সামনে ভাসে সিপিএম কর্মীর। সুনিয়ায় তৃণমূলের অত্যাচারে দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া ছিলেন ওই সিপিএম কর্মী। সঙ্গী ছিল ছেলেও। বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেওর ও জায়ের সঙ্গেই থাকতেন তাঁর স্ত্রী। স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীও ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৭ অগস্ট বেলা ১১টা নাগাদ দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষিকর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একদল তৃণমূল কর্মী ওই সিপিএম কর্মীর বাড়ি গিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করে।

সুব্রত গুহ

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৬ ০১:১২

এখনও পুরো ঘটনাটা চোখের সামনে ভাসে সিপিএম কর্মীর।

সুনিয়ায় তৃণমূলের অত্যাচারে দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া ছিলেন ওই সিপিএম কর্মী। সঙ্গী ছিল ছেলেও। বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেওর ও জায়ের সঙ্গেই থাকতেন তাঁর স্ত্রী। স্থানীয় একটি অঙ্গনওয়াড়ির কর্মীও ছিলেন তিনি।

২০১৪ সালের ১৭ অগস্ট বেলা ১১টা নাগাদ দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষিকর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে একদল তৃণমূল কর্মী ওই সিপিএম কর্মীর বাড়ি গিয়ে হম্বিতম্বি শুরু করে। সিপিএম কর্মীর স্ত্রীর থেকে ১২ লক্ষ টাকা চাওয়া হয় জরিমানাস্বরূপ। কিসের জরিমানা? উত্তর আসে, সিপিএম করার জন্য। আর ওই টাকা না দিতে পারলে ঘরছাড়া স্বামীকে গ্রামে হাজির করতেই হবে।

সন্ধ্যার সময়ে ফের আসে তারা। চাওয়া হয় টাকা। সিপিএম কর্মীর স্ত্রী জানান, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এরপরই শুরু হয় মারধর। ওই মহিলাকে মারতে মারতে গ্রামের পিচ রাস্তায় জগদীশ মোড় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। সেখােন তাঁকে বিবস্ত্র করে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ।

গভীর রাতে দুষ্কৃতীরা ফের বাড়িতে এসে ওই মহিলাকে গণধর্ষণ করেন। এমনকী তাঁকে খুন করে মৃতদেহ ঘরের কড়িকাঠে ঝুলিয়ে দিয়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ।

ঘটনার কথা জানাজানি হতেই তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি। স্থানীয় সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক চক্রধর মেইকাপের অভিযোগ, “পুলিশ পরেরদিন সকালে এসে বৌদি আত্মহত্যা করেছে বলে লিখিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরে তো মৃতার স্বামী এসে দেবাশিস ভুঁইয়া-সহ ১২জনের বিরুদ্ধে গনধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের করে। তখন পুলিশ নড়ে বসে।’’

কিন্তু তারপরও কি পুলিশ কিছু করেছে? প্রশ্ন মৃতার পরিবারের। তাঁদের অভিযোগ, ঘটনার পরও অভিযুক্তরা প্রকাশ্য ঘুরে বেরিয়েছে। পুলিশ বলেছে, কাউকে ধরা যাচ্ছে না। সংবাদ মাধ্যমে বারবার লেখালেখি হওয়ায় অবশেযে চারজনকে ধরে পুলিশ। কিন্তু তখনও মূল অভিযুক্ত দেবাশিসকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। দিনের পর দিন এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে দেবাশিস। আর গ্রেফতারের কথা শুনলেই পুলিশের এক বুলি, ‘‘তদন্ত চলছে। মূল অভিযুক্তের খোঁজ চলছে।’’

কাঁথি থানার পুলিশ মামলার যে চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছিল তাতে গণধর্ষণ ও খুনের উল্লেখই ছিল না। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণ ও খুনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই শেয পর্যন্ত মৃতাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগের উল্লেখ রয়েছে। কাঁথি থানার পুলিশ এই মামলায় এক অভিযুক্ত সহ চারজনকে গ্রেফতার করলেও মামলার মূল অভিযুক্ত দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ দেবাশিস ভূইঁয়া সহ বাকি এগারো জনকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকার পর দেবাশিস-সহ বাকিরা জেলা আদালত থেকে আগাম জামিনে মুক্ত। মামলাটি আপাতত কাঁথি আদালতে বিচারাধীন।

কেমন আছে মৃতের পরিবার? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আজও গ্রামে ফিরতে পারেননি মৃতার স্বামী ও ছেলে। বাড়িতে থাকা শ্বশুর–শাশুড়িও বাড়ি ছেড়ে মেয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। গোটা বাড়ি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সুনিয়া গ্রামের মানুষজন এই ঘটনার পর থ মেরে গেছে। ভয়ে কেউই মুখ খুলতে নারাজ। অন্যদিকে মামলায় রায়ের দিকে তাকিয়ে মৃতার স্বামী। তাঁর কথায়, ‘‘শাসক দলের যোগসাজসে পুলিশ ও হাসপাতাল দোষীদের বাঁচাতে যতই যাই করুক না কেন, আদালতে প্রকৃত বিচার অবশ্যই পাব। সব হারিয়ে সেই দিকেই তাকিয়ে আছি আমি ও আমার ছেলেটা।

আর সুনিয়ার এই নৃশংস ঘাটাকেই বিধানসভা নির্বাচনে হাতিয়ার করতে চায় বামেরা। উত্তর কাঁথির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী চক্রধর মেইকাপের কথায়, ‘‘তৃণমূলের এমন সন্ত্রাসের পরও মানুষকে নতুন করে আর কিছু বোঝাতে হবে, মনে হয় না। সুনিয়ায় তৃণমূলের ধারাবাহিক সন্ত্রাস আজও অব্যাহত। মানুষের উপর তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা সাধারণ মানুষের কাছেও তুলে ধরবে সিপিএম-সহ বিরোধী জোট।”

rape cpm killed Sunia tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy