Advertisement
০৮ মে ২০২৪
পিছনে প্রোমোটিং চক্র, প্রশ্নে পুলিশ
Shops Demolished

রাতে বুলডোজ়ার দিয়ে দোকান ভাঙল দুষ্কৃতীরা

রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলা পুলিশের দল। অভিযুক্তদের চিহ্ণিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, দাবি ওঠে। ওই দোকানিরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

ভেঙে দেওয়া দোকান থেকে জিনিসপত্র উদ্ধার চলছে। মেদিনীপুর পুরসভার জেসিবি দিয়ে দোকানের ভাঙা অংশ পরিষ্কার করা হচ্ছে।

ভেঙে দেওয়া দোকান থেকে জিনিসপত্র উদ্ধার চলছে। মেদিনীপুর পুরসভার জেসিবি দিয়ে দোকানের ভাঙা অংশ পরিষ্কার করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৫
Share: Save:

রিলে এমন ঘটনা আকছার ঘটে। শহর মেদিনীপুরে এ বার রিয়েলেও ঘটল। খাস কোতোয়ালি থানা থেকে কিছু দূরেই। গভীর রাতে বুলডোজ়ার এনে কয়েকটি দোকান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিল দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীরা সশস্ত্র ছিল বলেই দাবি। ওই দোকানিদের আরও দাবি, এর পিছনে রয়েছে একদল অসাধু প্রোমোটারই। এর আগেও এখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছিল। শনিবার গভীর রাতে যে কায়দায় দুষ্কৃতী- তাণ্ডব চলেছে, তাতে আতঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন ওই দোকানিরা। স্থানীয় বাসিন্দারাও। প্রশ্নে পুলিশ। থানার কিছু দূরেই এমন ঘটনা ঘটল, পুলিশ কিছু জানতে পারল না? রাতে কি তাহলে পুলিশি টহল চলেনি? প্রশ্ন উঠছে।

রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় জেলা পুলিশের দল। অভিযুক্তদের চিহ্ণিত করে অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে, দাবি ওঠে। ওই দোকানিরা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মেদিনীপুরের ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এক প্রোমোটার সহ দু’জনকে এ দিন আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে সব দলের নেতাদেরই দেখা গিয়েছে। এসেছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, পুরপ্রধান সৌমেন খান, জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস, সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্দন গোপ প্রমুখ। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘এমন ঘটনা মেদিনীপুর শহরে এর আগে কোনও দিন ঘটেনি। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে তাদের শাস্তির দাবি করছি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় বলেন, ‘‘আমরা প্রত্যেকে এই ঘটনার নিন্দা করছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছি।’’

শনিবার গভীর রাতে শহরের গোলকুঁয়াচকের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে রাস্তার পাশে কয়েকটি দোকান রয়েছে। দোকানগুলি যেখানে রয়েছে, সেই জায়গা কার মালিকানাধীন, তা নিয়ে আদালতে মামলা মোকদ্দমাও চলেছে। দোকানিদের দাবি, এর আগেও এখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদের চেষ্টা করেছিলেন অসাধু প্রোমোটারেরা। ওই রাতে চমকে ওঠার মতো ঘটনা ঘটেছে। একদল দুষ্কৃতী আসে। সশস্ত্র ওই দুষ্কৃতীদের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল বলেই দাবি। দু’টি বুলডোজ়ার নিয়ে এসেছিল তারা। পথবাতি নিভিয়ে বুলডোজ়ার চালিয়ে দোকানগুলি গুঁড়িয়ে দেওয়া হতে থাকে। খবর পেয়ে যখন দোকানিরা পৌঁছন, ততক্ষণে সব শেষ। সৌরভ সাউ নামে এক দোকানির কথায়, ‘‘তখন রাত তখন ১টা ৫০। জানতে পারি, দোকান ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বুলডোজ়ার দিয়ে। এসে দেখি দু’টি বুলডোজ়ার দু’দিক দিয়ে ভাঙছে দোকানগুলি। ৪০- ৫০ জন লোক রয়েছে। আমার বাবা জানতে চেয়েছিলেন, কেন ভাঙা হচ্ছে। ওরা আগ্নেয়াস্ত্র বের করে বাবার মাথায় ঠেকিয়ে দেয়। খুনের হুমকি দেয়।’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীরা কাজটা করেছে। রাতের অন্ধকারে। ওদের হাতে বন্দুক ছিল। দোকান ভেঙে জায়গা দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছে ওরা। যে ভাবে হোক, ওই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের কথা পুলিশকে বলেছি। এ সব বরদাস্ত করা যাবে না।’’ পুলিশের আশ্বাস, এই ঘটনায় জড়িত কাউকেই রেয়াত করা হবে না।

রবিবার সকালে পুলিশ পৌঁছনোর পরে এক সময়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে, এখানে অবস্থানে বসার হুঁশিয়ারি দেন পুর প্রতিনিধি সৌরভ বসু প্রমুখ। মেদিনীপুরের এক পুলিশকর্তার উদ্দেশে সৌরভকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ওদের গ্রেফতার করুন। না হলে এখানে অবস্থানে বসলাম। ওদের এত ক্ষমতা হয়েছে কাদের প্রশ্রয়ে? প্রোমোটার- রাজ চলবে? না আইনের- রাজ চলবে?’’ সৌরভকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘কত বড় দাদা হয়েছে ওরা? বাইরে থেকে লোকজন ডেকে এনে মেদিনীপুরে অশান্তি করা? আমরা বেঁচে আছি, না মরে গিয়েছি?’’ এক পুলিশকর্তাকে তখন বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাদেরও ধারণা ছিল না, এমন ঘটনা ঘটতে পারে বলে! একটা ঘটনা ঘটেছে। একটু সময় দিন। সব অভিযুক্তকেই ধরা হবে।’’ আরেক পুলিশকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি তো বলছি, এর শেষ দেখে ছাড়ব! জড়িত সবগুলিকে ধরব!’ ’শহরের এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে পারভেজ কিবরিয়া, বরুণ সেন প্রমুখের। প্রোমোটার পারভেজদের নামে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। রবিবার চেষ্টা করেও পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

থানা থেকে ঘটনাস্থলের কতটা দূরত্ব? পুলিশ ওই সময়ে কী করছিল, একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে আসতে থাকে পুলিশের দিকে। এক পুর প্রতিনিধিকে এও বলতে শোনা যায়, ‘‘পুলিশের কাজকর্ম এখানে ভাল নয়। রাতের বেলায় পুলিশ থাকে না শহরে। ধর্মায় থাকে (জাতীয় সড়কের পাশে)। তোলাবাজি করে!’’ সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্দন গোপ বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে বন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ভাবা যায়? জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। মেদিনীপুরে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, ‘‘প্রোমোটার- রাজ নাকাল করছে শহরবাসীকে। পুলিশ- প্রশাসনের একটি অংশের মদতেই ফেঁপে উঠছে ওরা। এত সাহস পাচ্ছে। কেন লাগাম নেই প্রোমোটিং চক্রে? গরিব মানুষ কোথায় যাবে? কার কাছে বিচার চাইবে? থানার এত কাছে ঘটনাটা ঘটল, পুলিশ কিছুই জানতে পারল না?’’ ঘটনাস্থলের কিছু দূরে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE