Advertisement
E-Paper

অসুখে ধুঁকছে খড়্গপুরের হাসপাতাল

সব মিলিয়ে অব্যবস্থার ছবি খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। এ সবের বিহিত চেয়ে রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন সরব হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
তালাবন্ধ: বন্ধ ইএনটি-র বহির্বিভাগ। খড়্গপুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

তালাবন্ধ: বন্ধ ইএনটি-র বহির্বিভাগ। খড়্গপুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

রোগী আসছেন। কিন্তু বহির্বিভাগে চিকিৎসক নেই। যন্ত্র নিয়ে টানাটানি চলছে দু’টি বিভাগে। চিকিৎসকদের লিখে দেওয়া ওষুধের বেশিরভাগই কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। আর হাসপাতালের কাউন্টারে ওষুধ লিখছেন প্রশিক্ষণহীন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অস্থায়ী কর্মীরা।

সব মিলিয়ে অব্যবস্থার ছবি খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। এ সবের বিহিত চেয়ে রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের পাশাপাশি রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন সরব হয়েছে। ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে।

মহকুমার দশটি ব্লকের মানুষ খড়্গপুরের এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। প্রতিদিন বহির্বিভাগে উপচে পড়া ভিড় হয়। অথচ সেই হাসপাতালই ধুঁকছে অসুখে। দীর্ঘদিন ধরে নাক-কান-গলা বিভাগে কোনও চিকিৎসক নেই। গত প্রায় ছ’মাস ধরে এই বহির্বিভাগ তাই বন্ধ। চক্ষু ও দন্ত বিভাগে দু’জন চিকিৎসকের বদলে একজন করে চিকিৎসক রয়েছেন। ফলে, ওই দু’টি বহির্বিভাগ সপ্তাহে দু’দিনের বেশি খোলা যাচ্ছে না। আবার দু’জন চিকিৎসক থাকলেও চর্মরোগ বিভাগ সপ্তাহে একদিন খোলা থাকে বলে অভিযোগ। শুধু চিকিৎসক নয়, অভাব ওষুধেরও। হাসপাতালের চিকিৎসকদের লিখে দেওয়া ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে হচ্ছে। শহরের পাঁচবেড়িয়ার বাসিন্দা শেখ কাদের বলছিলেন, “আমার পিঠের টিউমার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখনও বহির্বিভাগে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু ডাক্তারবাবু যে ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন, তার বেশিরভাগই হাসপাতালে পাইনি।”

হাসপাতালে ওষুধ পাওয়ার যে প্রক্রিয়া রয়েছে, গাফিলতি ধরা পড়েছে সেখানেও। নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসকদের দেওয়া প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধের কাউন্টারে যাচ্ছেন রোগীরা। সেখানে প্রশিক্ষিত কর্মীদের বদলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা বসে থাকছেন। তাঁরাই প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। খড়্গপুর-২ ব্লকের বাসিন্দা সরোজ মাজি বলেন, “আগে এই কাউন্টারে হাসপাতালের নিজস্ব কর্মীরা থাকতেন। কিন্তু এখন এই কাজ করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অস্থায়ী কর্মীরা। তাঁর প্রশিক্ষিত না হওয়ায় ভুল ওষুধে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়।’’ এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ রয়েছে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অস্থায়ী কর্মীদেরও। এক অস্থায়ী কর্মীর কথায়, “আমরা তো শুধুমাত্র রোগী সহায়তা কেন্দ্রের জন্য নিযুক্ত। কিন্তু এখন আমাদের হাসপাতালের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। ফার্মাসি নিয়ে পড়াশোনা করিনি। তাই ভুলের সম্ভাবনা তো থাকেই।”

সমস্যা রয়েছে হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক বিভাগেও। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে চলা এই বিভাগে যন্ত্রপাতি নেই। তাই ফিজিওথেরাপির জন্য বৃদ্ধদের নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি বিভাগে। এতে চাপ বাড়ছে ফিজিওথেরাপি বিভাগে। ওই বিভাগের কর্মী তথা কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি ঝাড়েশ্বর চাউল্যা বলেন, “আমাদের বিভাগে তো সাধারণ রোগীর চাপ থাকেই। তার উপর জেরিয়াট্রিক বিভাগে যন্ত্রপাতি না থাকায় আমাদের বিভাগে চাপ বাড়ে। উর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি।’’

সমস্যা রয়েছে অন্তর্বিভাগেও। প্রতিদিন যে খাবার দেওয়া হয় তাতে পেট ভরে না বলে রোগীদের অভিযোগ। আবার হাসপাতালে ট্রমা ইউনিট চালু হলেও সেখানে নিযুক্ত হয়নি অস্থি ও নিউরো বিশেষজ্ঞ। তাছাড়া প্রশিক্ষিত জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসারের অভাবে চালু হচ্ছে না আইসিইউ। কর্মচারী ফেডারেশনের উপদেষ্টা দিলীপ সরখেল বলেন, “হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে নানা সমস্যা রয়েছে। আমরা বারবার বিষয়গুলি নিয়ে সরব হয়েছি। স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। এর পরে বৃহত্তর আন্দোলন করব।’’

চিকিৎসক-সঙ্কটের কথা মানছেন হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমাদের বহির্বিভাগে চিকিৎসক কম রয়েছে। নাক-কান-গলার চিকিৎসক প্রয়ো জন। বিষয়টি দফতরে জানিয়েছি।’’ আর পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, “চিকিৎসক নিয়োগের জন্য আমরা বারবার উঁচু মহলে জানিয়েছি।’’

Crisis Hospital Kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy