Advertisement
E-Paper

ভগ্নস্বাস্থ্য সেতুর, নেই নজরদারি

মঙ্গলবার কলকাতার মাঝেরহাটে যে ভাবে সেতু ভেঙে পড়েছে তাতে রাজ্যে বিভিন্ন সড়ক ও  রেল লাইনের উপর সেতুর কী হাল তা নিয়ে সরকার যেমন চিন্তিত তেমনই আশঙ্কিত মানুষও। বিভিন্ন নদীর পর থাকা সেতুগুলির হালহকিকত ও তার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২০
তমলুক-দিঘা সড়কে নরঘাটের কাছে হলদি নদীর উপর মাতঙ্গিনী সেতু। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

তমলুক-দিঘা সড়কে নরঘাটের কাছে হলদি নদীর উপর মাতঙ্গিনী সেতু। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

হয়তো একই ভাবে সব চলত। কলকাতা দিঘা পথে বিভিন্ন নদীর উপর যে সড়ক ও রেলসেতু রয়েছে তা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবার তেমন আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে কলকাতার পোস্তায় উড়ালপুর ধসে পড়ার পর রাজ্যের সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরে অনেক সেতুতেই রঙের পোঁচ পড়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার কলকাতার মাঝেরহাটে যে ভাবে সেতু ভেঙে পড়েছে তাতে রাজ্যে বিভিন্ন সড়ক ও রেল লাইনের উপর সেতুর কী হাল তা নিয়ে সরকার যেমন চিন্তিত তেমনই আশঙ্কিত মানুষও। বিভিন্ন নদীর পর থাকা সেতুগুলির হালহকিকত ও তার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কলকাতা থেকে দিঘার পথে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হল কোলাঘাটের রেল ও সড়ক সেতু এবং নরঘাটের কাছে হলদি নদীর উপর সড়ক ও রেল সেতু। হলদি নদীর উপরে সড়ক সেতু নির্মাণ ও চালু হয়েছিল ১৯৮২ সালে। প্রায় ১ হাজার ৭১১ ফুট দীর্ঘ ওই সেতুর সংস্কার হয়েছিল ২০১১ সালে। পূর্ত দফতর ওই সেতু তৈরি শুরু করেছিল ১৯৬৬ সালে। কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার নামাঙ্কিত ওই সেতু চালুর ফলে দিঘা যাওয়ার সড়ক পথে হলদি পার হওয়ার বাধা দূর হয়েছিল। শুধু তাই নয়, নন্দীগ্রাম থেকে চণ্ডীপুর হয়ে সড়ক পথে তমলুক শহর সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে যোগাযোগের সুবিধা হয়। ফলে কাঁথি মহকুমার পাশাপাশি নন্দীগ্রামের বাসিন্দাদের কাছে হলদি নদীর উপর এই সেতুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মাতঙ্গিনী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণেরর দায়িত্ব রয়েছে রাজ্য পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের হাতে। জাতীয় সড়কে উন্নীত হওয়ার পরে নন্দকুমার থেকে জলেশ্বর পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। পাশাপাশি ওই সড়ক পথে থাকা বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখার জন্য নিয়মিত পরিদর্শন করা হয় বলে দাবি পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের।

শহিদ মাতঙ্গিনী সেতু

• কবে তৈরি: হলদি নদীর উপর সেতু তৈরি হয় ১৯৮২ সালে।

• দেখভালের দায়িত্ব: রাজ্য পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগ।

• শেষ সংস্কার হয়েছে: ২০১১ সালে। গত সপ্তাহে সেতু পরিদর্শন করা হয়েছে।

কোলাঘাটে রেলসেতু

• কবে তৈরি: দু’টি সেতুর একটি তৈরি ১৮৯৬ সালে আর একটি ১৯০০ সালে।

• দেখভালের দায়িত্ব: রেল

• শেষ কবে সংস্কার: ১৯২৯ সালে প্রথম সেতুর সমস্ত গার্ডার বদল করা হয়। দ্বিতীয় সেতুর গার্ডার বদল হয় ১৯৬৬ সালে। তবে নিয়মিত নজরদারির জন্য কোলাঘাটে রেলের একটি দফতর রয়েছে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিজ ইনস্পেক্টর রয়েছেন।

পূর্ত দফতরের জাতীয় সড়ক বিভাগের (মেদিনীপুর ডিভিশন) নির্বাহী বাস্তুকার তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত সপ্তাহেই হলদি নদীর উপর ওই সেতু পরিদর্শন করা হয়েছে। তাতে বিপজ্জনক কিছু পাওয়া যায়নি। তবে সড়ক সম্প্রসারণের কাজের সঙ্গেই ওই সেতু সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের বিভিন্ন কাজ ধরা রয়েছে। তাই সেতু সংস্কারের জন্য যা যা প্রয়োজন হবে তা করা হবে।’’

কোলাঘাটে রূপনারায়ণের উপর রেলসেতু। নিজস্ব চিত্র

যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সেতুর সংলগ্ন হলদি নদীর চর থেকে যথেচ্ছ পরিমাণে বালি তোলার কাজ চলে। এর ফলে সেতুর স্তম্ভের কাছে মাটি আলগা হয়ে সেতু দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন। নন্দকুমারের বিডিও মহম্মদ আবু তায়েব বলেন, ‘‘হলদি নদীর সেতুর কাছে নদীর চরে বালি তোলায় জেলা প্রশাসনের তরফে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এখন সেতুর কাছে বালি তোলা সম্পূর্ণ বন্ধ।’’

রেলসূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদের উপরে দু’টি রেলসেতুর একটি তৈরি হয়েছিল ১৮৯৬ সালে আর একটি ১৯০০ সালে। ১৯২৯ সালে প্রথম সেতুর গার্ডার বদল করা হয়। আর একটির গার্ডার বদল হয় ১৯৬৬ সালে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই সেতু দিয়ে একাধিক লোকাল এবং দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের জন্য নিয়মিত সেতুতে নজরদারি চালানো হয়। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, যাত্রী সুরক্ষায় সেতুতে নিয়মিত দেখভালের জন্য কোলাঘাটে রেলের এই সংক্রান্ত একটি দফতরও রয়েছে। সেখানে ব্রিজ ইনস্পেক্টর পদে একজন আধিকারিকের-সহ বেশ কয়েকজন কর্মী রয়েছেন।

Bridge Collapse Tamluk Sahid Matangini Setu Bridge Surveillance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy