জমি রয়েছে। রয়েছে নতুন শিল্প গঠনের উপযোগী পরিবহণ ব্যবস্থাও। তবুও শিল্পক্ষেত্রে আজও জেলায় পিছনের সারিতে গড়বেতা।
আলু চাষ গড়বেতার অর্থনীতির ভিত্তি। আলু সংরক্ষণের জন্য এলাকায় রয়েছে অনেক হিমঘরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাষকে কেন্দ্র করে এলাকার অর্থনীতিকে মজবুত করতে সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি সরকার। ফলে দিনে-দিনে চাষের প্রতি নির্ভরতা বেড়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরও আলু বা অন্যান্য সব্জি থেকে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠেনি।
গড়বেতার এক চাষির কথায়, ‘‘চাষে লাভ-ক্ষতির উপরই আমাদের খাওয়া-পরা নির্ভর করে। কোনও বছর লাভের মুখ দেখি। আবার কোনও বছর আলু মাঠে পড়েই নষ্ট হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘চাষকে কেন্দ্র করে শিল্পের বিকাশ ঘটা প্রয়োজন। না হলে আমাদের এই একই পরিস্থিতির মধ্যে সারা জীবন কাটাতে হবে।’’ গড়বেতার একাধিক বাসিন্দারই বক্তব্য, বেশি দিন আগের কথা ভাবতে হবে না, চলতি বছরের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিলেই ভবিষ্যতে ফল পাওয়া যাবে। এ বছর আলুর ফলন ভাল হওয়ায় তেমন লাভ হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমিতে পড়েই নষ্ট হয়েছে আলু। এলাকায় আলুর চিপস্ বা টম্যাটো সস তৈরির কারখানা গড়ে উঠলে এলাকার অর্থনীতিরই উন্নতি হবে।
স্থানীয় আলু চাষি অরুণ মাইতির কথায়, “দাম না থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। কিন্তু আলু থেকে কোনও কিছু উত্পাদন করার জন্য শিল্প তৈরি হলে দুশ্চিন্তা কমে।” একই ভাবে, গড়বেতার এক সব্জি চাষি সুশান্ত মালাকারেরও বক্তব্য, “এখন সর্বত্রই ‘ফাস্ট ফুড’-এর চল। স্বাভাবিক কারণেই বাড়ছে সসের চাহিদাও। টম্যাটো সস তৈরি করা গেলে কিছু বেকার ছেলের কর্মসংস্থান যেমন হবে, তেমনই আমাদের মতো সব্জি চাষিরাও দাম সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারব।”
বিগত কয়েক বছরে শিল্পক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পিছিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা বিশ বাঁও জলে। খড়্গপুরের শিল্প তালুকেও সে ভাবে বড় কারখানা গড়ে ওঠেনি। পিছিয়ে পড়ার তালিকায় নাম রয়েছে গড়বেতারও। শিল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে গড়বেতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, “গড়বেতায় জমি রয়েছে। রয়েছে শিল্পের উপযোগী যাতায়াত ব্যবস্থাও। এক দিকে জাতীয় সড়ক ও অন্য দিকে রেলপথ। তাই এ বার শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকার যাতে উদ্যোগী হয় সে জন্য আবেদন জানাব।”