ডেঙ্গির হানা এ বার খাস সরকারি আবাসনে। মেদিনীপুর শহরের শেখপুরা আবাসনের বাসিন্দা একাদশ শ্রেণির ছাত্র দেবার্ঘ্য সাহার রক্তপরীক্ষায় এনএস-ওয়ান পজিটিভ মিলেছে। এ বার রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছে ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার জন্য। জ্বর নিয়ে ওই ছাত্র আপাতত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে ডেঙ্গি বলেই সন্দেহ করা হচ্ছে। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। পাঁচদিন পরে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট এলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুর জুড়ে এ বার থাবা বসিয়েছে ডেঙ্গি। জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছাড়িয়েছে। খড়্গপুরেই আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে বেশি, ১৮৮জন। সদর শহর মেদিনীপুরেও ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী শনিবার পর্যন্ত মেদিনীপুর পুর-এলাকায় ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা ১২ জন। এই পরিস্থিতিতে শহরের সরকারি আবাসনে ডেঙ্গি আক্রান্তের খোঁজ মেলায় শোরগোল পড়েছে।
গত রবিবার থেকে দেবার্ঘ্যর জ্বর আসে। এই স্কুলছাত্রের বাবা দেবনাথ সাহা বলেন, ‘‘তিনদিন তাপমাত্রা খুব বেশি ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। প্লেটলেটের সংখ্যা কম থাকায় এনএস-ওয়ান পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট পজিটিভ আসায় বৃহস্পতিবার বিকেলে ছেলেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওখানেই চিকিৎসা চলছে।’’
কিন্তু সরকারি আবাসনে ডেঙ্গির হানা কেন? শেখপুরা সরকারি আবাসন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রভাত দাস জানালেন, আবাসনের উত্তর দিকে মহানালার উপর মিনি মার্কেটের দোকানঘর গজিয়ে উঠেছে। ওই নালা দীর্ঘদিন পরিষ্কার হয় না। তাই এলাকায় মশার উপদ্রব বাড়ছে।’’ আর এক যুগ্ম সম্পাদক বরুণ জানারও অভিযোগ, ‘‘পুরসভা থেকে আবাসনের ভেতরের অংশ সাফাই করে না। শুধুমাত্র ভ্যাট থেকে নোংরা আবর্জনা তুলে নিয়ে যায়। আবাসনের দক্ষিণ দিকে পর্যটন দফতরের কয়েকটি ঘর রয়েছে। সেখানেও জঙ্গল হয়ে রয়েছে। কিন্তু কারও নজর নেই।’’ আবাসন কমিটির সম্পাদক তাপস রায় দাবি করলেন, নালা পরিষ্কার করার জন্য কাউন্সিলর থেকে পুরপ্রধান, সকলের কাছে বহুবার লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তবে কোনও কাজ হয়নি।
শেখপুরা মেদিনীপুর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। এখানকার কাউন্সিলার মৌ রায় বলেন, ‘‘নালার উপর দোকানঘর থাকায় তা পরিষ্কার করতে সমস্যা হয়। তবে কয়েকদিন অন্তর শ্রমিক দিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে নালা পরিষ্কার করানো হয়।’’ মৌদেবীর আশ্বাস, এক-দু’ দিনের মধ্যে আবাসন চত্বর পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।
মহানালার উপর দোকান গজিয়ে উঠলেও পুরসভার নজর নেই কেন? পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, ‘‘নালার উপরের অংশ থেকে দোকানঘর সরিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকবার মালিকদের নোটিস পাঠিয়েছি। এ বার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’ বিষয়টি দেখার জন্য মহকুমাশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ।