ডোবার নোংরা জলে মশার আঁতুড়ঘর। খড়্গপুর গ্রামীণের প্রতাপপুরে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এলাকার যুবক বিপ্লব প্রতিহারের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে খড়্গপুর গ্রামীণ থানার প্রতাপপুরে। এলাকায় গিয়েও দেখা যাচ্ছে, জমা জলের অভাব নেই। এ দিক-সে দিকে ডোবা। জমা জলে মশার লার্ভা কিলবিল করছে, এমনও দৃশ্যও দেখা গিয়েছে। নোংরা-আবর্জনাও রয়েছে। এই পরিবেশেই বাড়ছে মশার উপদ্রব।
মৃত বিপ্লবের বাবা ঝুলু প্রতিহারও মানছেন, “এলাকায় মশার উপদ্রব রয়েছে।’’ প্রতাপপুরের বাসিন্দারা মনে করছেন, যে ভাবে চারদিকে জল জমে রয়েছে তাতে মশার উপদ্রব আরও বাড়তে পারে। ছড়াতে পারে ডেঙ্গির মতো মশাবাহী মারণ রোগ। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার আশ্বাস, “এলাকায় মেডিক্যাল টিম গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। জল জমে থাকলে তা পরিষ্কার করা হবে।’’
প্রতাপপুর এলাকাটি খড়্গপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত। সমিতির সভাপতি শক্তি মণ্ডল বলেন, “স্থানীয় পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই এলাকায় মশার জন্ম প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।’’ কেন আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? শক্তিবাবুর জবাব, “আগাম ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়নি তা নয়। আমরা ব্লকে বৈঠক করে সব পঞ্চায়েতকে সাফাইয়ে জোর দিতে বলেছিলাম।’’
নজরদারি কমিটি, টাস্কফোর্স গড়ার পরেও খড়্গপুরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। রোগ মোকাবিলার পথ খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে আজ, রবিবার খড়্গপুর পুরসভা কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে। শুক্রবার খড়্গপুরে বৈঠকে বসেছিল পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর। বৈঠক থেকে পুরসভাস্তরে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। কমিটিতে কয়েকজন কাউন্সিলর এবং পুর-আধিকারিক রয়েছেন। শনিবার পুরসভায় এই কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় শহরে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে। এ জন্য পুর-এলাকাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একদিকে খরিদা, ইন্দার মতো এলাকা রয়েছে। এক দিকে ঝাপেটাপুর, আয়মা, কৌশল্যার মতো এলাকা। আর অন্য দিকে গিরি ময়দান, নিমপুরার মতো এলাকা।
ঠিক হয়েছে, ১২টি ট্রাক্টর এবং ৪টি জেসিবি মেশিন ভাড়া করে আবর্জনা সাফাই করবে পুরসভা। কাল, সোমবার থেকে পুরোদমে সাফাই অভিযান শুরু হবে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “শহরের ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকাগুলোয় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। শহরবাসীর মধ্যেও এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ একই সঙ্গে প্রদীপবাবু মানছেন, পুরসভার যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই। তাই জরুরি ভিত্তিতে নোংরা-আবর্জনা সাফাইয়ের জন্য কয়েকটি ট্রাক্টর এবং জেসিবি ভাড়ায় নেওয়া হচ্ছে। একটি জেসিবি পিছু ৩টি ট্রাক্টর থাকবে। এক- একটি ট্রাক্টরে ৫ জন করে সাফাইকর্মী থাকবেন। হরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আরও মশা মারার তেল, চুন, ব্লিচিং দেওয়া হচ্ছে বলেও পুরপ্রধান জানিয়েছেন।