Advertisement
E-Paper

ঝুঁকি নিয়েই সেচে হুকিং

বাড়ি, দোকান তো বটেই দেদার হুকিং চলছে চাষের কাজেও। সেচ পাম্প চালাতে হুকিং করতে গিয়ে বিপদও ঘটছে আকছার। মৃত্যুর নজিরও রয়েছে। তবু ফিরছে না হুঁশ। চাষে বিদ্যুৎ চুরির রমরমায় আয় কমছে দফতরেরও। খোঁজ নিল আনন্দবাজার। বাড়ি, দোকান তো বটেই দেদার হুকিং চলছে চাষের কাজেও। সেচ পাম্প চালাতে হুকিং করতে গিয়ে বিপদও ঘটছে আকছার। মৃত্যুর নজিরও রয়েছে। তবু ফিরছে না হুঁশ। চাষে বিদ্যুৎ চুরির রমরমায় আয় কমছে দফতরেরও। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:৫১
বাজার চলতি তারেই হুকিং করে চলছে সেচ পাম্প। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

বাজার চলতি তারেই হুকিং করে চলছে সেচ পাম্প। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

হুকিং— গাঁ-গঞ্জে অতি চেনা শব্দ। গৃহস্থের বাড়িতে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। দোকানপাটেও হুকিং চলে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাষে বিদ্যুৎ চুরি। এতে এক দিকে যেমন কমছে রাজস্ব আদায়, তেমনই হুকিংয়ের জেরে দুর্ঘটনাও ঘটছে।

ক’দিন আগেই ঘাটাল ব্লকের এক গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিলেন একজন চাষি। তিনি সেচের পাম্প চালাতে বিদ্যুৎ চুরি করছিলেন বলে অভিযোগ। ভিজে বাঁশ থেকেই অসতর্কতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এ ভাবে অনেকেই কমবেশি জখম হয়েছেন, এমনকি মৃত্যুর নজিরও রয়েছে। তাতেও অবশ্য হুঁশ ফেরেনি। সেচের জন্য হুকিংয়ের জেরে লোডশেডিং, লো ভোল্টেজের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কখনও পাম্পের যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে, কখন পুড়ছে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার।

রাজ্য সরকার চাইছে, চাষিদের আয় বাড়াতে। মাথা পিছু গড় আয়ও বেড়েছে বলেও দাবি। কিন্তু সেই হারে চাষের কাজের জন্য বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়নি। বিদ্যুৎ দফতর মানছে, চাষে সেচের জন্য উপভোক্তা তেমন বাড়েনি। অথচ নিয়ম মেনে আবেদন করলেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। জমির পরচা-সহ চাষির যাবতীয় নথি নিয়ে আবেদন করতে হয়। ন্যূনতম ৮০০০ টাকায় সংযোগ হয়ে মেলে। কিন্তু বিদ্যুৎ দফতরের অভিজ্ঞতা বলছে, নিয়ম সহজ হলেও চাষের ক্ষেত্রে স্থায়ী সংযোগ নেওয়াপ আগ্রহ তেমন দেখা যায় না। ভাগচাষি বা প্রান্তিক চাষি নয়, বড় চাষিদের একাংশের মধ্যেও এই প্রবণতা রয়েছে।

বিদ্যুৎ দফতর জানাচ্ছে, হুকিংয়ের বিপদ জানিয়ে প্রচার চলছে। চলছে টানা অভিযান। জরিমানা, মামলাও হচ্ছে। তাতেও অবশ্য চাষের জন্য বিদ্যুৎ চুরি কমেনি। বরং বোরো চাষের মরসুমে এই প্রবণতা বাড়ছে।

চাষের পদ্ধতি পাল্টাচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক হচ্ছে চাষ। সেচসেবিত এলাকার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে সরকারি উদ্যোগে। মাঠে মাঠে নতুন নতুন জলের উৎস তৈরি হচ্ছে। সরকারি নানা প্রকল্পে আরএলআই, পাম্প সেট, অগভীর নলকূপ তৈরি হচ্ছে। ব্যাক্তিগত উদ্যোগেও শ্যালো পাম্প, নলকূপের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সব মিলিয়ে জেলায় সেচ প্লাবিত এলাকার সংখ্যা বাড়ছে। মোট চাষযোগ্য জমির মধ্যে ৭২ শতাংশ জমি সেচ সেবিত। বিদ্যুৎ দফতর জানাচ্ছে, বোরো মরসুমেই বেশি শ্যালো ব্যবহার হয়। কিন্তু সে জন্য বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ায় অনীহা দেখে গভীর উদ্বেগে বিদ্যুৎ দফতর।

সেচের কাজে হুকিং যে চলছে তা মানছেন চাষিরাও। কিন্তু বিপদ ঘটতে পারে জেনেও, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে জেনেও কেন এমনটা করছেন চাষিরা? চন্দ্রকোনার কৃষ্ণপুরের এক চাষির বক্তব্য, “আমাদের গোটা গ্রামেই হুকিং করে সেচের কাজ চলে। একজনের দেখে অন্যজন করছে। এ ভাবেই ছড়াচ্ছে বিষয়টা।” এ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবই মূল কারণ বলে মনে করছে বিদ্যুৎ দফতর। তাই পরিস্থিতি সামলাতে চাষিদের বোঝানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার চিরঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চাষিদের নিয়ে এ বার আমরা সরাসরি বৈঠক করব। চাষের কাজে বৈধু বিদ্যুৎ সংযোগ কতটা জরুরি তা বোঝানো হবে। আর বিদ্যুৎ চুরির ভবিষ্যৎ কী, বোঝানো হবে তা-ও।”

Death Hooking Electricity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy