শুধু মাটি কাটা নয়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ভিন্নধর্মী ভাবনা বাস্তবায়িত করে পুরস্কার পাচ্ছে রাজ্যের ১০টি ব্লক। তার মধ্যেই রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক। আগামী শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য পঞ্চায়েত সম্মেলনের অনুষ্ঠান মঞ্চে বিডিওদের হাতে ওই পুরস্কার তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের পাশাপাশি, বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ও বাঁকুড়া-১, নদিয়া জেলার চাকদহ, বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও অন্ডাল, বীরভূম জেলার রানিনগর, জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা এবং কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জ-২ ব্লকও এই পুরস্কার পাচ্ছে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, একশো দিনের প্রকল্প মানেই শুধু মাটি কাটার কাজ, এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে এই দশটি ব্লক ব্যতিক্রমী কাজকর্মের নজির রেখেছে বলেই এমন স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক কর্তৃপক্ষ সুবর্ণরেখার ভাঙন ঠেকানোর জন্য যে ভাবে একশো দিনের প্রকল্পকে হাতিয়ার করেছে, তা নজিরবিহীন ও ব্যতিক্রমী বলেই মানছেন প্রশাসনিক কর্তারা। গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকে একশো দিনের প্রকল্পে নদীপাড় বরাবর ‘ভেটিভার’ ঘাস রোপণ করা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি সফল।
প্রতি বর্ষায় সুবর্ণরেখার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় একাধিক জনপদ। ব্লকের শাসড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের করবনিয়া গ্রামটি রয়েছে নিচু এলাকায়। ফি-বছর বানভাসি হয় ওই গ্রামের দেড় হাজার পরিবার। ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য একশো দিনের প্রকল্পে করবনিয়া গ্রামে সুবর্ণরেখার পাড় বরাবর দু’কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ৬০ হাজার ভেটিভার ঘাস রোপন করা হয়। নদী লাগোয়া মৌজায় ভেটিভার ঘাসের নার্সারিও করা হয়েছে।
তবে শুধু ভেটিভার নয়। ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বর্ষে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমী কাজের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। যেমন, কাপাসিয়া, বুলানপুর ও মৃগানডাহি এলাকায় একশো দিনের প্রকল্পে ফলের বাগান, শালগেড়িয়াতে দরিদ্র আদিবাসীদের জন্য বাঁশ গাছ রোপণ, বারবনিয়াতে তসর চাষ, আদিবাসী পরিবারের জন্য শুয়োরের খামার তৈরি, বাঘুয়াশোলে ১৭৬টি পরিবারকে জৈব সার চাষে আগ্রহী করে তুলতে কেঁচো সার উৎপাদন, ঝিল্লি পাখিরালয়ের সৌন্দর্যায়ন ইত্যাদি।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের জবকার্ড ধারী ব্যক্তিরা প্রত্যেকে গড়ে ৬৪ দিন কাজ পেয়েছেন। যা জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে রাজ্যের গড়ের (রাজ্যের জনপ্রতি গড় ছিল ৪৭ দিন) থেকেও তা বেশি। গত অর্থ বর্ষে এই ব্লকে মোট ৮ লক্ষ ৬৯ হাজার শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে এখনও পর্যন্ত এই ব্লকে জনপ্রতি জবকার্ডধারীরা ৪৮ দিন করে কাজ পেয়েছেন। চলতি অর্থবর্ষে এখনও ৬ লক্ষেরও বেশি শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। বিডিও বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, “এই পুরস্কার আমাদের সৃজনশীল কাজে আরও
উৎসাহিত করবে।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “আমাদের জেলার প্রতিটি ব্লকেই উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। সার্বিক মাপকাঠির বিচারে গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক রাজ্যের তরফে সেরার শিরোপা পাচ্ছে। আমরা গর্বিত।”