Advertisement
০৪ মে ২০২৪
ঝাড়গ্রাম মাল্টি স্পেশ্যালিটি

পরিকাঠামো নিয়ে ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরাই

বিশাল বাড়ি, চকচকে রঙ, ভিতরে ঠান্ডা হাওয়ার হাতছানি— এ ভাবেই কি ব্যাখ্যা করা যায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের মাল্টি স্পেশ্যালিটি ভবনকে?

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

বিশাল বাড়ি, চকচকে রঙ, ভিতরে ঠান্ডা হাওয়ার হাতছানি— এ ভাবেই কি ব্যাখ্যা করা যায় ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের মাল্টি স্পেশ্যালিটি ভবনকে?

গত কয়েক মাসে নতুন করে গড়ে ওঠা মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের হাসপাতালের বাস্তবটা অন্তত তেমনই, বলছেন চিকিৎসকরা। তাঁদের অভিযোগ, একেবারে প্রথম থেকেই নানা পরিষেবা দেওয়ার প্রচার চলেছে সরকারি স্তরে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে পাহাড় প্রমাণ। অথচ পরিকাঠামো বলতে কিছুই নেই। উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়ার মতো যথেষ্ট মানব সম্পদই যে নেই হাসপাতালে। অসন্তুষ্ট রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। স্বাভাবিক ভাবেই এলাকাবাসীর রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসক ও কর্মীদের।

গত ২৯ অগস্ট ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগিণীর মৃত্যুর ঘটনায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। মৃতার পরিবার তিন চিকিৎসক ও এক নার্সের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, অনুপযুক্ত পরিকাঠামোতে ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে। রোগীর মৃত্যু হলে পরিজন ও পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের।

এই সমস্যার বিরুদ্ধে এ বার সরব হচ্ছেন চিকিৎসদের একাংশই। অবিলম্বে যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক ও কর্মী নিয়োগ এবং সঠিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবিতে জনমত গঠনের কাজ শুরু করেছে ‘সার্ভিস ডক্টরস্‌ ফোরাম’ (এসডিএফ)। এসইউসি প্রভাবিত সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে আজ, বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের সুপার এবং ঝাড়গ্রামের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে দশ দফা দাবি সনদ জমা দেওয়া হবে। তাঁদের অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে মাল্টি স্পেশ্যালিটি, সিসিইউ এবং অন্যান্য পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামোই নেই।

২০১২ সালে ঝাড়গ্রামের মহকুমা হাসপাতালটি জেলা স্তরে উন্নীত হয়। চলতি বছরে তাকে মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসক, নার্সিং স্টাফ বা ইসিজি, এক্স-রে, হেমাটোলজি বিভাগের বিভিন্ন টেকনিক্যাল স্টাফের সংখ্যা যা ছিল তাই রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী আসেন। অন্তর্বিভাগে যত শয্যা রয়েছে, তার দ্বিগুণ রোগীকে ভর্তি নিতে হচ্ছে। ফলে মেঝেতে শুইয়েই চলছে চিকিৎসা।

কর্মীদের মধ্যে অনেকেই বলছেন, হাসপাতালটি আসলে মহকুমাস্তরের। কিন্তু পরিষেবা দিতে বলা হয়েছে মাল্টি স্পেশ্যালিটি-র। এত বড় হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে মাত্র দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। জেনারেল সার্জন মাত্র দু’জন। অর্থোপেডিক সার্জেন দু’জন। প্রায় প্রতিটি বিভাগে হাতে গোনা চিকিৎসক রয়েছেন।

ফোরামের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, “সাইন বোর্ড সর্বস্ব ঝাঁ চকচকে হাসপাতালে মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। জীবন মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কিত চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে আমরা আপোস করতে চাই না। তাই যত দ্রুত সম্ভব পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং চিকিৎসক, কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।” শাসক তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ডক্টরস্‌ অ্যাসোসিয়েশন’-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত অবশ্য বলেন, “বিরোধীরা সব সময়ই বলবেন, কিছুই নেই। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে মাল্টি স্পেশ্যালিটি স্তরের অনেক পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। কিছু ঘাটতি আছে। আশা করি সেগুলি আগামী দিনে মিটে যাবে।” তবে শাসক সংগঠনের অনেক চিকিৎসকও স্বীকার করছেন, ঘাটতি রয়েছে সর্বত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছার হয়তো অভাব নেই। কিন্তু জেলা হাসপাতালে এখন যে পরিকাঠামো রয়েছে, তাতে মাল্টি স্পেশ্যালিটির পরিষেবা দেওয়া এক কথায় অসম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE