Advertisement
E-Paper

ঋণ-জটে থমকে ঘাটালের নিকাশি

নিকাশি সমস্যার আশু সমাধান প্রায় অসম্ভব। ঘাটালে এমন কথাই শুনিয়েছেন পুরপ্রধান। সমস্যা সমাধানে পুরসভা উদ্যোগী হয়েছিল বলেই তাঁর দাবি। কিন্তু প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করাটাই এখন মাথা ব্যথার কারণ।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৭
নিকাশি নেই। জল জমে রয়েছে বাড়ির সামনেই। ঘাটালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নিকাশি নেই। জল জমে রয়েছে বাড়ির সামনেই। ঘাটালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা।

নিকাশি সমস্যার আশু সমাধান প্রায় অসম্ভব। ঘাটালে এমন কথাই শুনিয়েছেন পুরপ্রধান। সমস্যা সমাধানে পুরসভা উদ্যোগী হয়েছিল বলেই তাঁর দাবি। কিন্তু প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা সংগ্রহ করাটাই এখন মাথা ব্যথার কারণ।

ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ দাবি করেছেন, “শহরে নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক ভাবে একটি খসড়া জমা দেওয়া হয়েছিল। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর ৮৮ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলেছে। বাকি টাকা ঋণ নিতে হবে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক থেকে। কিন্তু ওই ঋণ নিলে পুরসভাকে যে পরিমাণ মাসিক কিস্তি মেটাতে হবে তা আমাদের মতো ছোট পুরসভার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।” নিয়মানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে অন্তত ১০-১২ শতাংশ টাকা পুরসভাকে ব্যয় করতে হয়। তবেই মিলবে রাজ্য সরকারের অনুদান। সেখানেই বিপত্তি। বিভাসবাবু বলেন, “আমদের পুরসভায় বছরে মোট আয় দু’কোটি টাকা। এই টাকা থেকেই অস্থায়ী কর্মী, বিদ্যুতের বিল সহ অনান্য খরচ মেটাতে হয়। ফলে ১২ কোটি টাকা ঋণ নেব কী করে?”

বন্যাপ্রবণ ঘাটালে নাগাড়ে বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় শহরের ১২ টি ওয়ার্ড। বাকি পাঁচটি ওয়ার্ডের অবস্থা অবশ্য অন্যরকম। বাঁধ ভাঙলে তবেই জলমগ্ন হয় ১৩ থেকে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড। স্মৃতি হাতড়ে স্থানীয়রা বলেন, সত্তর দশকে এবং ২০০৭ সালে জলমগ্ন হয়েছিল এই পাঁচটি ওয়ার্ড। কিন্তু নিকাশি পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, সামান্য বৃষ্টি হলে এই ওয়ার্ডগুলি নোংরা জলে থইথই। প্রতি বর্ষাতেই নালা উপচে ভেসে যায় রাস্তা। জল ঢুকে পড়ে বাড়ির ভিতরেও। খেলারও মাঠও ভেসে যায় কাদা-জলে। অথচ, ঘাটালের এই পাঁচটি ওয়ার্ডের মধ্যেই রয়েছে আদালত, মহকুমাশাসকের অফিস, মহকুমা হাসপাতাল, প্রায় ৩০টি বেসরকারি নার্সিংহোম, একাধিক রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্ক, সরকারি মহকুমা স্তরের সমস্ত বিভাগের অফিস, স্কুল, কলেজ। ফলে শুধু শহরের বাসিন্দারই নন, নানা কাজে আসা মহকুমার অন্য এলাকার মানুষও বর্ষার সময় শহরে এসে সম্যস্যায় পড়েন।

এর কারণ হিসাবে বাসিন্দারা বলছেন, নিকাশি নালা পরিষ্কার করে না পুরসভা। মাঝে মাঝে নালায় জমে থাকা আবর্জনা তুলে নিয়ে যায় বটে কিন্তু তাও নিয়মিত নয়। বড় নালাগুলি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি, সেগুলি মজে গিয়েছে। জল ধারণ ক্ষমতা নেই। ফলে প্রতি বছরই বর্ষায় হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়।

১৩৬ বছরের পুরানো মহকুমার সদর শহরের নিকাশি এক কথায় বেহাল। রাস্তার পাশের বড় বড় নালা দিনের পর দিন বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। রাস্তা দখল করে যাঁরা ব্যবসা করছেন, যাঁদের রায়ত জমি রয়েছে তাঁরা তো বটেই, এমনকী নালা বুজিয়ে বাড়িও তৈরি করে ফেলেছেন কোনও কোনও বাসিন্দা। ক্রমশ বাড়ছে এই প্রবণতা। পুরসভা সূত্রের খবর, নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্যই প্রাথমিক ভাবে প্রকল্প রিপোর্ট তৈরিও করে ফেলেছে ঘাটাল পুরসভা। তা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরে জমাও পড়ে গিয়েছে। ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই ও চেয়ারম্যান বিভাস ঘোষ পুরমন্ত্রী ববি হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি দেখার আর্জি জানান। পুরমন্ত্রী রাজি হয়েছেন। কিন্তু বাধ সাধছে ওই ঋণের শর্ত। পুর দফতর ঘাটাল পুরসভার প্রাথমিক খসড়া রিপোর্ট দেখে ৮৮ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষাণা করেছে। বাকি ১২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা বলেছে।

ঘাটালের সিপিএম নেতা অশোক সাঁতরা বলছেন, ‘‘আমরা যখন পুরবোর্ডে ছিলাম তখন এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়েও কিছু করতে পারিনি। এখন রাজ্য সরকার যখন টাকা দিতে রাজি হয়েছে তখন কাজ করে ফেলাই ভাল।’’ তাঁর পরামর্শ, ‘‘প্রয়োজনে প্রকল্প ব্যয় কমিয়ে নিক পুরসভা। তাতে ঋণ নিতে বা কিস্তি শোধে সুবিধা হবে। তা ছাড়া আয় বাড়ানোর কথাও ভাবতে হবে কর্তৃপক্ষকে।’’

Drainage ghatal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy