বাড়ির দেওয়ালে কিংবা দরজায় বোর্ড ঝোলানো কিংবা পোস্টার সাঁটানো নতুন নয়। কোথাও লেখা থাকে, ‘কুকুর থেকে সাবধান’। কোথাও লেখা থাকে, ‘দেওয়ালে বিজ্ঞাপন মারবেন না’। তবে মেদিনীপুরের সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক তথা মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরার বাড়ির দেওয়ালে থাকা পোস্টারে আলাদা করে চোখ আটকাবেই। সেখানে লেখা, ‘মদ্যপান করে বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অফিসের মধ্যে প্রবেশ করবেন না।’
মেদিনীপুর শহরের মির্জাবাজারে বাড়ি সুজয়ের। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের দাবি, এই পোস্টার সাঁটা রয়েছে ক’মাস আগে থেকেই। সকালে-সন্ধ্যায় এখানে অনেকে সুজয়ের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। অনেকে তাঁর স্ত্রী তথা স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি মৌসুমী হাজরার সঙ্গেও দেখা করতে আসেন। একতলার একটি ঘরেই বসে ‘জনতার দরবার’। জনসংযোগ চলে। এই ঘরের দরজাতেই ওই পোস্টার সাঁটা রয়েছে। সুজয়ের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের দাবি, এটি সতর্কতামূলক পোস্টার। কেউ যাতে মদ্যপান করে কিংবা নেশা করে না আসেন, সেই সতর্কবার্তাই দেওয়া হয়েছে। এমন পোস্টার কেন? সুজয়ও বলছেন, ‘‘সতর্ক করার জন্য।’’
উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুজয়। প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে জিতেছেন তিনি। বিধায়ক হিসাবে শীঘ্রই শপথ নেবেন। তাঁর প্রথম নির্বাচনেই বাজিমাত করেছেন তিনি। ‘মেদিনীপুর করবে জয়, ঘরের ছেলে সুজয়’— ভোটপ্রচারে এই স্লোগান তুলেছিলেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, ‘ঘরের ছেলে’ হিসাবেই সুজয়কে বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন মেদিনীপুরের মানুষ। সকালের দিকে বাড়িতে গেলে তাঁর দেখা মেলে। দুপুরের দিকে দলের জেলা কার্যালয়ে গেলে তাঁর দেখা মেলে। সুজয়ও বলছেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিকে সময়ে-অসময়ে না পাওয়া গেলে মানুষের মনে খেদ থাকে। আমি জেলা সদরে থাকি। তিন বছর হল দলের সভাপতি আছি। মেদিনীপুরের সবাই জানে, সুজয়কে সকাল ৯টায় বাড়িতে গেলে পাওয়া যাবে। দুপুর ১২টার সময়ে গেলে জেলা কার্যালয়ে পাওয়া যাবে। সন্ধ্যা ৬টায় গেলেও জেলা কার্যালয়ে পাওয়া যাবে। আবার রাত ৯টার সময়ে বাড়িতে গেলে পাওয়া যাবে।’’ নবনির্বাচিত বিধায়ক বলছেন, ‘‘মানুষের সব কাজ তো সবাই করে দিতে পারে না। কিন্তু মানুষ চায় জনপ্রতিনিধি তাঁর সমস্যার কথাটা অন্তত শুনুক। জনপ্রতিনিধির কাছে সমস্যার কথা বলব, তাঁকে সময়ে অসময়ে পাশে পাব, এটা মানুষ চায়। আমি চাই, সকাল থেকে রাত, প্রয়োজনে মানুষ আমাকে পাশে পাক।’’
সুজয়ের বাড়িতে ‘জনতার দরবারে’ কেউ কি কোনও দিন মদ্যপ অবস্থায় কিংবা নেশা করে ঢুকে পড়েছিলেন! তাই কি এমন পোস্টার! জল্পনা রয়েছে। সুজয়কে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন একটি ওয়ার্ডের একদল তৃণমূল নেতাকর্মী। তাঁদের মধ্যে একজনের চোখ আটকে গিয়েছিল দরজায় সাঁটানো ওই পোস্টারে। পরে ওই কর্মী বলছিলেন, ‘‘অনেক বাড়িতে অনেক রকম পোস্টার দেখেছি। কিন্তু এমন পোস্টার এর আগে সত্যিই দেখিনি। অভিনব!’’
বিজেপি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। বিজেপির জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, ‘‘জানি না, এমন পোস্টার কেন উনি দিয়েছেন। তৃণমূল আমলে রাজকোষ ভরাতে মদই তো ভরসা! সেটা নিশ্চয়ই ওঁর অজানা নয়!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)