প্রতীকী ছবি।
করোনা পরিস্থিতিতেও মায়ের আগমনের সুরে সর্বত্র আনন্দের পরিবেশ। তবুও ওঁরা বিষণ্ণ। ওঁরা মানে কাঁথির ফরিদপুর বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকরা। পুজো এলেই অতীতের সোনালি স্মৃতির পাশপাশি প্রবীণ বয়সে পরিবারের অবহেলার ছবি ওঁদের মনে ভিড় করে। যা ভারাক্রাম্ত করে ওঁদের মনকে।
সমুদ্র উপকূলের উপকণ্ঠে এই বৃদ্ধাশ্রম। জনা তিরিশেক আবাসিক রয়েছেন। এঁদের মধ্যে এমনও কয়েকজন রয়েছেন, যাঁদের বাড়িতে ধুমধাম করে দুর্গাপুজো হত। পুজোয় তাঁদের ব্যস্ততার সীমা থাকত না। ঘরবাড়ি সাফসুতরো করা থেকে পুজোর আয়োজন, আত্মীয়স্বজনদের আপ্যায়নে দম ফেলার ফুরসত থাকত না। সে-সবই এখন স্মৃতি। এখন পুজোর দিনগুলো কাটে বৃদ্ধাশ্রমের জানালার রেলিং ধরে শরতের নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে।
প্রতি বছর মহালয়ার পর থেকে পুজোর দিন গুনতে থাকেন পুষ্প রানি, গৌরীবালা, খুকু দেবী এবং পার্বতীরা (সকলের নাম পরিবর্তিত)। মায়ের আগমনে আপনাআপনিই জোড়হাত উঠে আসে মাথায়। বৃদ্ধাশ্রমে শুধুই অবসরের ফাঁকে কখনও একলা কখনও সমবেতভাবে চলে মাকে স্মরণ। কখনও আসর বসিয়ে ফেলে আসা অতীতের দিনগুলোতে ডুব দেন সকলে। মন খারাপ হলে সঙ্গ দেয় লুডো আর টেলিভিশনের পর্দা। কেউ কেউ ডুব দেন সেলাই মেশিনে কিংবা কাগজের ঠোঙা তৈরিতে। পুষ্প মাঝি ও খুকু মাইতির মতো প্রবীণেরা চোখে জল নিয়ে বলেন, ‘‘এই কয়েকটা দিন পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। সকলের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, আড্ডা আর হয় না।’’
ইদানীং পুজোর দিনগুলিতে কোনও কোনও আবাসিককে বাড়ি নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। যাঁরা থেকে যান তাঁদের পুজো দেখার ব্যবস্থা করেন বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। বৃদ্ধাশ্রমের অন্যতম কর্মকর্তা ব্রজগোপাল মাইতি বলেন, ‘‘ওঁদের মানসিকভাবে ভাল রাখতে সকলকে মণ্ডপে মণ্ডপে নিয়ে গিয়ে প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।’’
তবে এবার করোনা পরিস্থিতিতে সতর্ক বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। তাই পুজোর কয়েকটা দিন হয়তো জানলার ধারে বসেই কেটে যাবে বলে মন খারাপ পুষ্প রানি, গৌরীবালা, পার্বতীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy