Advertisement
E-Paper

মাধ্যমিকে পাশের হারে সেরা সেই পূর্ব

গত কয়েক বছরের মতো মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে সেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পড়ুয়ারাই।

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৬ ০০:৫৮
রেজাল্ট পাওয়ার পর। হলদিয়ায় আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি।

রেজাল্ট পাওয়ার পর। হলদিয়ায় আরিফ ইকবাল খানের তোলা ছবি।

গত কয়েক বছরের মতো মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশের হারে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানে সেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পড়ুয়ারাই।

মধ্য শিক্ষা পর্যদ থেকে মাধ্যমিকের যে কৃতীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে রয়েছে এই জেলারই চারজনের নাম। এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সারা রাজ্যে গড় পাশের হার যেখানে ৮২.৭৪ শতাংশ সেখানে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় পাশের হার ৯৩.১০ শতাংশ। অর্থাৎ রাজ্যের গড় পাশের হারের চেয়ে অনেক কদম এগিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এবছর মোট মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার ১১৯ জন। একটানা কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার এই সাফল্যের হারে জেলার পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকদের সাথে জেলার সাধারণ বাসিন্দারাও খুশি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্যের প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘এটা আমাদের জেলার পক্ষের খুব গর্বের বিষয়। সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’

জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের এই সাফল্যের জন্য জেলার বিদ্যালয়গুলির পাশাপাশি আরও অনেকের অবদান রয়েছে বলে মানছে শিক্ষা মহল। জেলার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের মতে, রাজ্যের অন্যান্য জেলার চেয়ে আর্থ-সামাজিক দিক থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। তাই বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নতি, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা করার ইচ্ছা, শিক্ষকদের কাছে পড়ার ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও এখানে অনেকটাই বেশি। এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পড়ানোর জন্য পরিশ্রম ও অভিভাবকদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য কষ্ট স্বীকার করার মানসিকতা এই জেলাকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে বরাবরই।

জেলায় ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমিকে সাফল্যের কারণ নিয়ে পাঁশকুড়ার ঘোষপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রতিম মান্না বলেন, ‘‘আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা মেধার দিকে বরাবরই এগিয়ে। তবে গত কয়েকবছর ধরে অভিভাবকদের সচেতনতা অনেকটাই বেড়েছে। স্কুলেই মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের নিয়ে স্পেশাল কোচিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে জেলায় মাধ্যমিক পরীক্ষায় সাফল্যের হার অনেকটাই বেড়েছে।’’

সুপ্রতিমবাবুর জানান, সাধারণ ও গরিব পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরাও এখন স্কুলে এসে তাঁদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ঠিকমত হচ্ছে কি না বা কোন বিষয়ে খামতি আছে কি না তা খোঁজ নেন। কোনও সমস্যা থাকলে জানার চেষ্টা করেন এবং ব্যবস্থা নেন। ফলে সামগ্রিকভাবে পড়াশোনার একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ময়না দেউলি আদর্শ বিদ্যাপীঠের অর্থনীতির শিক্ষক সুকুমার মাইতির মতে, ‘‘আমাদের জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্যের পিছনে গৃহবশিক্ষকদেরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। জেলায় বহু পরিবার এখন এক বা একাধিক গৃহশিক্ষকের কাছে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করছে ভাল ফলের জন্য। যার ফলে সামগ্রিকভাবে জেলায় মাধ্যমিক ও উচ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফল করছে। তবে এটা দিয়ে পড়ুয়দার অধ্যবসায়কে অসম্মান করছি না। ’’

নন্দকুমারের বাগডোবা জালপাই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিধান সামন্তের, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের ভাল করে দেখানোর জন্য প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলার ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমাদের জেলার সাফল্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।’’

অন্য দিকে পিছিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর। এ বারও যেখানে পূর্বের পাশের হার ৯২ শতাংশ, সেখানে পশ্চিমের পাশের হার ৮৫ শতাংশ। শিক্ষকরা মনে করছেন, এর কারণ এ জেলার মধ্যেই রয়েছে জঙ্গলমহল। যে এলাকা শিক্ষার দিক থেকেও একটু পিছিয়ে। নয়াগ্রাম, বেলপাহাড়ি, লালগড়, গোয়ালতোড়, শালবনির মতো ব্লকে এমন প্রত্যন্ত বেশ কয়েকটি এলাকা রয়েছে, যেখানে শিক্ষার আলো এখনও সে ভাবে পৌঁছয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরেই পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। ওই সব এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছতে শুরু করেছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্রও বলছেন, “এখন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। কাছাকাছি স্কুলে মাধ্যমিক পড়ার সুযোগ মিলছে। এর সুফল আগামী দিনে মিলবে।”

জেলার শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “সার্বিক ভাবে পাশের হারে পশ্চিম একটু পিছিয়ে। তবে শুধুমাত্র ঘাটাল মহকুমার কথা যদি ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে পাশের হার সেই ক্ষেত্রে বেশি। জঙ্গলমহলে পাশের হার কম থাকে। স্বাভাবিক ভাবে সার্বিক ভাবে যখন পাশের হারের হিসেব করা হয়, তখন সেখানে তার প্রভাব পড়ে।”

Madhyamik East Midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy