Advertisement
E-Paper

অ্যাম্বুল্যান্স দান করে স্বপ্নপূরণ অণিমাদেবীর

মাঝ রাতে অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে কালঘাম ছুটেছিল। স্বামী আজ না থাকলেও বছর দু’য়েক আগের দুর্ভোগের রাতের কথা ভোলেননি অণিমা পাত্র।

অভিজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৩
গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি তুলে দিচ্ছেন অণিমাদেবী। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে অ্যাম্বুল্যান্সের চাবি তুলে দিচ্ছেন অণিমাদেবী। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

মাঝ রাতে অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে কালঘাম ছুটেছিল। স্বামী আজ না থাকলেও বছর দু’য়েক আগের দুর্ভোগের রাতের কথা ভোলেননি অণিমা পাত্র। আর কাউকে যাতে ভোগান্তির শিকার হতে না হয়, সে জন্য স্বামীর স্মৃতিতে অ্যাম্বুল্যান্স দান করলেন দাসপুরের রাজনগর পঞ্চায়েতের সামাট সংলগ্ন হোসেনপুরের বাসিন্দা অণিমাদেবী।

২০১৪ সালের ৯ অগস্ট রাতের কথা ভাবলে আজও শিউড়ে ওঠেন অণিমাদেবী। ওই দিন রাতে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন অণিমাদেবীর স্বামী প্রাক্তন শিক্ষক গৌরীশঙ্কর পাত্র। স্বামীর শরীর ক্রমে খারাপ হচ্ছে দেখে অণিমাদেবী ঠিক করেন, তাঁকে শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তার জন্য তো অ্যাম্বুল্যান্স দরকার। অনেক চেষ্টা করেও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় হয়নি। অবশেষে স্থানীয়দের চেষ্টায় এল একটি গাড়ি। তাতে করেই স্বামীকে নিয়ে ছুটলেন পরিজনেরা।

মেদিনীপুরের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় তাঁকে। মাসখানেক চিকিৎসাধীন থাকার পরে নার্সিংহোমেই ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় গৌরীশঙ্করবাবুর। গৌরীশঙ্করবাবুর মেয়ে কৃষ্ণা রথ, অসীমা পাত্ররা (মাহাতো) বলেন, “বাবার চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে রাতেই একটি গাড়িতে করে নিয়ে গিয়ে বাবাকে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করি। তখন বাবা অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলেন।’’

গৌরীশঙ্করবাবুর আর এক মেয়ে সুদীপ্তা সামন্ত বলেন, “বাবার মৃত্যুর পরেই মা ঠিক করেছিলেন আমাদের মতো যাতে গ্রামের অন্যদের কোনও সমস্যা না হয়- সে জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স দান করবেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যুদিনেই স্থানীয় পঞ্চায়েতের হাতে অ্যাম্বুল্যান্স তুলে দিতে পেরে ভাল লাগছে।”

ঘাটাল-মেদিনীপুর সড়কের ধারেই রাজনগর গ্রাম। গ্রামে অ্যাম্বুল্যান্সের কোনও ব্যবস্থা নেই। রাত-বিরেতে কেউ অসুস্থ হলে ভরসা অন্য গাড়ি। রাজনগর পঞ্চায়েতের হোসেনপুর-সহ পাশ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের অ্যাম্বুল্যান্স প্রয়োজন হলে ভরসা ১৫ কিলোমিটার দূরের দাসপুর বা কেশপুর। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে ওই এলাকার অ্যাম্বুল্যান্স মালিকদের ফোন করতে হয়। যদি ফাঁকা থাকে, তবেই মেলে অ্যাম্বুল্যান্স। আর অত দূর থেকে অ্যাম্বুল্যান্স আসতেও অনেক সময় লাগে। মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে অনেকসময় এত সময় পাওয়া যায় না।

অভিযোগ, স্থানীয় নাড়াজোল বা রাজনগরে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। দাসপুর ও কেশপুরে গ্রামীণ হাসপাতালে যথার্থ পরিষেবা মেলে না বলে অভিযোগ। ফলে হোসেনপুর-সহ আশপাশের সমস্ত গ্রামের বাসিন্দাদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় ভরসা ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল বা মেদিনীপুর মেডিক্যালে। হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া গতি নেই।

অণিমাদেবী বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পরেই ঠিক করেছিলাম গ্রামে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দান করব। মনের কথা আমার চার মেয়ে-জামাইকেও বলি।’’ তিনি আরও বলেন, “আমার ইচ্ছার কথা স্থানীয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে জানাই। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসেন। স্বামীর রোজগারের টাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনে এ দিন স্থানীয় পঞ্চায়েত অফিসে দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ অণিমাদেবীর কথায়, ‘‘এ বার গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে গাড়ি পেতে কোনও সমস্যা হবে না। আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হল। ’’

বুধবার রাজনগর পঞ্চায়েতের উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। অনুষ্ঠানে নতুন অ্যাম্বুল্যান্সটি পঞ্চায়েতের হাতে তুলে দেন অণিমাদেবী। পঞ্চায়েত প্রধান সুমিতা আলু বলেন, “আজকের দিনে অণিমাদেবীর মতো মানুষের বড় অভাব। ওঁনাকে কিছু বলার মতো ভাষা আমার নেই। দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে অণিমাদেবীকে স্মারক ও শাল উপহার দিয়েছি।” সুমিতাদেবীর কথায়, “এ বার থেকে অ্যাম্বুল্যান্সটি পঞ্চায়েত অফিসেই থাকবে। অ্যাম্বুল্যান্সটির রক্ষণাবেক্ষণ-সহ যাবতীয় দায়িত্ব আমরাই নেব।”

Elderly woman Donate Ambulance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy