তছনছ: টাঙাশোলের ফসল খেতে হাতির পায়ের ছাপ। নিজস্ব চিত্র
মানুষের বিক্ষোভের ভাষা তো হাতি বোঝে না! তাই বৃহস্পতিবার হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ট বাসিন্দারা বন দফতরের অফিসে ভাঙচুর করে বিক্ষোভ দেখানোর পর সে রাতেই দলমার পাল তাণ্ডব চালিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গোয়ালতোড়ের একাধিক গ্রামে। আবার একই ছবি ঝাড়গ্রামের লালগড়েও। সে জেলায় হাতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পর নড়ে বসেছে প্রশাসন। হাতি তাড়া করে ফসলের ক্ষতি করতেও চাইছে না বন দফতর। শুক্রবার মুখ্য বনপাল (পশ্চিমচক্র) বার্তা দিয়েছেন বন বিভাগগুলির মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে হাতি খেদানোর কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পাল গোয়ালতোড়ের টাঙাশোল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে স্থানীয় দুলিয়া, খাপরিভাঙা, পলিপাল, টাঙাশোল সহ আট-দশটি গ্রামে ফসলের ক্ষতি করেছে বলে অভিযোগ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শুক্রবার হাতির পালটি মহালিশাই রেঞ্জের খাপরিভাঙা জঙ্গলে ঘোরাফেরা করছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, সন্ধ্যা নামলেই ফের হাতির দল মাঠে নেমে ফসল সাবাড় করবে। বন দফতরের প্রতিও তাঁদের আস্থা নেই। তাই স্থানীয়রাই হুলা, পটকা নিয়ে তৈরি হয়েছেন হাতি আটকাতে।
বন দফতরের ডিএফও (রূপনারায়ণ) অর্ণব সেনগুপ্ত অবশ্য বলেন, “শুক্রবার থেকেই হাতির পালকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, বন দফতর এখন হাতির গতিবিধির উপর নজর রাখছে। সামনের সপ্তাহ থেকে পালটিকে ঝাড়খণ্ডের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্ণববাবুর যুক্তি, “হাতির পালকে এই মুহূর্তে অন্য জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হলে কোনও না-কোনও গ্রামের ফসলের ক্ষতি হবেই। সেই ক্ষতি আটাকাতে হাতির পাল যাতে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে না আসতে পারে সে জন্য আমরা সতর্ক।’’
বন দফতর সূত্রের খবর, গত তিন-চার দিন ধরে গোয়ালতোড় এবং চন্দ্রকোনা রোড এলাকার একাধিক গ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দলমার ৬০টি হাতির একটি পাল। লালগড়ে রয়েছে ৪২টি হাতি। প্রতিদিন বাড়ছে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ। ক্ষোভে ফুঁসছেন বাসিন্দারা।
শুক্রবার মেদিনীপুরের গোপগড়ে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চারটি (ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, খড়্গপুর ও রূপনারায়ণ) বন বিভাগের চার জন ডিএফও এবং অন্যান্য আধিকারিকদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মুখ্য বনপাল (পশ্চিমচক্র) শক্তিশঙ্কর দে। জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দলমার পালের একশোটি হাতি।
আমন ধান পাকার মরশুম শুরু হওয়ার আগে হাতির পাল এলাকায় চলে আসায় মাথায় হাত চাষিদের। হাতির সমস্যা নিয়ে লালগড়ে বার দু’য়েক পথ অবরোধ করেছেন ক্ষুব্ধ চাষিরা। বন দফতর সূত্রের খবর, এ দিন গোপগড়ের ইকো পার্কের সভাঘরে বন দফতরের বৈঠকে মুখ্য বনপাল (পশ্চিমচক্র) শক্তিশঙ্কর দে দুই জেলার বন কর্তা ও আধিকারিকদের জানিয়ে দেন, প্রতিটি বন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। না জানিয়ে এক বন বিভাগের এলাকা থেকে অন্য বন বিভাগের এলাকায় হাতির দলকে খেদিয়ে পাঠানো যাবে না।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডিএফও-রা জেলা স্তরের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা করে হাতির সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ করবেন। রেঞ্জ অফিসাররা ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধি ও আধিকারিকদের নিয়ে একই ধরনের সমন্বয় বৈঠক করবেন। হাতি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করার আগে আধিকারিকরা এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করবেন। হাতির দলকে দলমায় ফেরত পাঠানোর জন্য সমস্ত বন বিভাগগুলি একসঙ্গে পদক্ষেপ করবে। এলাকায় হাতির দলের ঢোকা ঠেকাতে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ নজরদারি চালাবে। চারটি বিভাগের কর্মীদের নিয়ে দল গঠন করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy