Advertisement
১০ অক্টোবর ২০২৪
elephant attack

বাড়িতে ঢুকে মহিলাকে আছড়ে মারল হাতি, ক্ষোভ

শনিবার সকালে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া থেকে জঠিয়ার জঙ্গলে পৌঁছয় ৯টি হাতির একটি দল। সেই দলে থাকা দু’টি হাতি রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ খেমাশুলি গ্রামে হানা দেয়।

এই বাড়িতেই ঢোকে হাতি। নিজস্ব চিত্র

এই বাড়িতেই ঢোকে হাতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫২
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন হাতি নিয়ে সতর্কতার কথা বলছিল বন দফতর। তবে পরীক্ষা চলাকালীন হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেই চলেছে। ঝাড়গ্রাম জেলায় গত কয়েকদিনে হাতির হানায় ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ বার ধানের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে বেরিয়ে একটি বাড়িতে এক মহিলাকে মারল হাতি। শনিবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলি গ্রামে।

গত কয়েকদিন ধরেই খেমাশুলি সংলগ্ন জঠিয়ার জঙ্গলে দলমার হাতির দলের আনাগোনা বাড়ছে। জানা গিয়েছে, শনিবার সকালে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া থেকে জঠিয়ার জঙ্গলে পৌঁছয় ৯টি হাতির একটি দল। সেই দলে থাকা দু’টি হাতি রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ খেমাশুলি গ্রামে হানা দেয়। প্রথমেই তারা গ্রামের একটি পাকা বাড়িতে ঢোকে। ওই বাড়ির লোহার দরজা, জানালা ভেঙে বাড়িতে ঢুকে ধান খায়। তার পরে বাড়ির একা থাকা ললিতা মাহাতো (৪৫) নামে ওই মহিলাকে বাইরে টেনে এনে আছড়ে মারে একটি হাতি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপরে গ্রামবাসীরা চলে আসায় হাতি দু’টি পালিয়ে যায়। উত্তেজনা তৈরি হয়। রাতেই পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

ররিবার সকাল থেকে বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গ্রামের মহিলারা। খড়্গপুরের ডিএফও শিবানন্দ রাম বলেন, “আমার বন বিভাগের অধীনে এই মুহূর্তে ৫২টি হাতি রয়েছে। আমরা দিনরাত সর্বত্র মাইকিং করছি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা থাকায় সতর্কতা অবলম্বন করে হাতিকে জোর করে সরানো হচ্ছে না। হাতিকে স্বাভাবিক গতিপথে যাওয়ার জন্য গাইড করা হচ্ছে। রাতে হুলাদল সেই কাজ করার সময়েই দু’টি হাতি খাবারের খোঁজে গ্রামে ঢুকে পড়ে। তাতেই এই ঘটনা।”

বন আধিকারিকের এই ব্যাখ্যায় অবশ্য ক্ষোভ কমছে না। সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বর্ষে খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রাম বন বিভাগ মিলিয়ে ৩৬ জনের প্রাণ কেড়েছে হাতি। অন্য এলাকা থেকে আসা হাতি নিয়ন্ত্রণে বন দফতর কেন কড়া পদক্ষেপ করছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খেমাশুলির পতনায় এক যুবককে পিষে মেরেছিল একটি হাতি। দিন কয়েক আগে জঠিয়ার জঙ্গলে হাতির পায়ের আঘাতে জখম হয়েছিলেন হুলা দলের এক সদস্য। এ বার জঙ্গলে বা রাস্তায় নয়, হাতি কার্যত বাড়ি থেকে টেনে বের করে মারল হাতি। মৃতের দাদা গুরুচরণ মাহাতো বলেন, “বোন অবিবাহিত। আবাস যোজনায় বাড়ি পেয়েছিল। সেখানে একাই থাকত। জানালার ধারে সেদ্ধ ধান ছিল। তার পাশেই ঘুমিয়ে ছিল। হাতি লোহার দরজা, জানালা ভেঙে সেই ধান খেতে বাড়িতে ঢুকেছিল। বোন মুখোমুখি হতে ওকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে মেরেছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বন দফতর কী করছে? একের পর এক লোক মারা যাচ্ছে। জঙ্গলের পাশে বাড়ি বলে কি বাঁচার অধিকার নেই!” মৃতের পড়শি বাসন্তী মাহাতোর ক্ষোভ, ‘‘এভাবে কি বাঁচা যায়? রাতে ঘুম হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে হাতি গ্রামের ধার দিয়ে ঘুরছে। ফসল নষ্ট করছে। আগে গ্রামে হাতি ঢুকলে বনকর্মীরা জানাতেন। আমরা সতর্ক হয়ে যেতাম। কিন্তু গত রাতে বনকর্মীরা কেউ আগে থেকে গ্রামে হাতি ঢোকার কথা জানাননি। তাতেই এমন ঘটনা।”

এমন পরিস্থিতি ক্ষতিপূরণ ঘিরেও নানা চর্চা শুরু হয়েছে। গ্রামবাসীদের দাবি, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও হাতির হানায় মৃতের পরিজনদের চাকরি মিলছে না। শনিবার রাতে মৃত ললিতার কাকিমা অদিতি মাহাতো ২০১৪ সালে ওই খেমাশুলি গ্রামে হাতির হানাতেই মারা যান। তাঁর ছেলে বিমল মাহাতো বলেন, “বন দফতরের কোনও হেলদোল নেই। মা মারা যাওয়ার পরে ৯ বছর হয়ে গেলেও এখনও চাকরির প্রতিশ্রুতি পূরণ হল না। হচ্ছে-হবে করে সময় নিচ্ছে বন দফতর। চাকরি না হোক অন্তত বাঁচার নিরাপত্তা দিক!” খড়্গপুরের ডিএফও অবশ্য জানিয়েছেন, শনিবার রাতে যিনি হাতির হানায় মারা গিয়েছেন তিনি নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ পাবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

elephant attack Kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE