Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত বিক্ষুব্ধ ১১ জন

বিক্ষুব্ধদের শাস্তি দিতে তৃণমূলের পথেই হাঁটল বিজেপি। দলবিরোধী কাজের জন্য খড়্গপুরের ১১ জন কর্মীকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করলেন বিজেপি নেতৃত্ব। এঁদের কেউ কেউ পুরভোটে প্রার্থী হতে না পেরে দলের রাজ্য সভাপতির কুশপুতুল দাহ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ আর এক ধাপ এগিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন।

খড়্গপুরে বিজেপি-র সাংবাদিক বৈঠক। — নিজস্ব চিত্র।

খড়্গপুরে বিজেপি-র সাংবাদিক বৈঠক। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৩৫
Share: Save:

বিক্ষুব্ধদের শাস্তি দিতে তৃণমূলের পথেই হাঁটল বিজেপি। দলবিরোধী কাজের জন্য খড়্গপুরের ১১ জন কর্মীকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করলেন বিজেপি নেতৃত্ব। এঁদের কেউ কেউ পুরভোটে প্রার্থী হতে না পেরে দলের রাজ্য সভাপতির কুশপুতুল দাহ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। আবার কেউ কেউ আর এক ধাপ এগিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন।

রবিবার ঝাপেটাপুরে খড়্গপুর শহর বিজেপির কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানান দলের শহর সভাপতি প্রেমচাঁদ ঝা। সঙ্গে ছিলেন বিদায়ী পুরবোর্ডের বিজেপির একমাত্র বিদায়ী কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী। জেলা কমিটির নির্দেশ মেনেই এই বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ দিন শহর বিজেপির সভাপতি প্রেমচাঁদ বলেন, ‘‘কিছু লোক রাস্তায় নেমে দলবিরোধী কাজ করেছে। দলের অসস্মান করে রাজ্য সভাপতির কুশপুতুল পুড়িয়েছে। জেলা সভাপতির নির্দেশ মেনে তাঁদের শনাক্ত করার কাজ শুরু হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়াতেই ১১ জনকে ৬ বছরের জন্য বহিষ্কার করলাম।’’

বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপি শহর কমিটির সদস্য প্রবীণ নেতা অজয় চট্টোপাধ্যায়, জেলা মজদুর মোর্চার সদস্য শৈলেশ শুক্ল, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি কৃষ্ণা প্রসাদ প্রমুখ। বহিষ্কার করা হয়েছে নির্দল প্রার্থী তথা বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য শুভা রাজকেও। গত লোকসভা নির্বাচনে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের কংগ্রেসের প্রার্থী বিমল রাজের স্ত্রী শুভাদেবী মাস ছয়েক হল বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। বহিষ্কৃতের তালিকায় আরও তিন জন বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। দলের টিকিট না পেয়ে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অজয় চট্টোপাধ্যায়, ১০ নম্বরের বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, ১৩ নম্বরের রাজীব দাসের মতো মোট ১৮ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। পরে ৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও ১৪ জন নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ে থেকে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাকি ১০ জন বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন? শহর সভাপতির জবাব, ‘‘কে প্রার্থী হয়েছে আমাদের জানা নেই। যাঁরা দলের কর্মী হয়ে দলবিরোধী কাজ করেছেন, তাঁদেরই বহিষ্কার করা হয়েছে।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘যাঁরা দলের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা স্বাভাবিক নিয়মে বহিষ্কৃত। কিন্তু আমার কাছে শহর কমিটি অভিযোগ জানাচ্ছিল কাজ করতে গিয়ে বিক্ষুব্ধদের নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাই আমি শহরে দলের বিভিন্ন পদে থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি শহর কমিটির হাতে ছেড়েছিলাম।’’ এই নিরিখেই শহর কমিটি আপাতত ৬ মাসের জন্য ১১ জনকে বহিষ্কার করলেও পরে বিচার-বিশ্লেষণ করে পুরোপুরি বহিষ্কার করা হবে বলে জানান তুষারবাবু।

কিছুদিন আগেই বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়কে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের মেদিনীপুর নিবাসের কার্যবাহ সমীর দাস। সেই দিনই রেলশহরে বিজেপির মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। তারপরই এই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজ দেখে কর্মীদের শনাক্ত করেন দলের শহর নেতৃত্ব। এই প্রক্রিয়া আগামী দিনেও চলবে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষারবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের দলে একটা নীতি-আদর্শ রয়েছে। অন্য দলে কোন্দল থাকলেও মীমাংসার পথে হাঁটা হয়। কিন্তু আমরা তা না করে ব্যবস্থা নিয়েছি। কেউ দলবিরোধী কাজ করলে আগামী দিনেও তাকে বহিষ্কার করা হবে।’’

বহিষ্কৃতেরা অবশ্য বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে নারাজ। উল্টে লড়াই আরও জোরদার করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত প্রবীণ নেতা অজয় চট্টোপাধ্যায় বলে, ‘‘এত বছর দলে কাজ করে জায়গা পাইনি। তাই দল বহিষ্কার করলেও মানুষ আমার সঙ্গে আছেন।’’ অন্য দলে যাবেন কি? অজয়বাবুর জবাব, ‘‘দলের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে বলেই এত বছর দলে রয়েছি। আর সেখানে বঞ্চিত হয়েছি বলেই এত ক্ষোভ। তাই অন্য দলে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। আমরা বহিষ্কৃতেরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে প্রচার চালাব।’’

পাশের জেলা পূর্ব মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের অন্যত্র তৃণমূলও বিক্ষুব্ধদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তবে খড্গপুরে তৃণমূলের যে সব বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী নির্দল প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি দল। ৬নম্বর ওয়ার্ডের প্রয়াত তৃণমূল কাউন্সিলর কমল কুণ্ডুর স্ত্রী মালা কুণ্ডু নির্দল হিসেবে লড়ছেন। আবার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সোমা সরেন নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। এঁদের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করছে না দল? শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর জবাব, ‘‘কে আমাদের দলের বিক্ষুব্ধ নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তা-ই আমার জানা নেই। যদি কেউ থেকেও থাকেন তাঁরা এমনিতেই কোনও স্থান পাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE