Advertisement
E-Paper

পাড় বাঁধানোয় জীবিকা সঙ্কটের আশঙ্কায় মৎস্যজীবীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৮:১৫
বাঁধানো পাড়েই রাখা নৌকা। দিঘার হাসপাতাল ঘাটের সামনে। নিজস্ব চিত্র

বাঁধানো পাড়েই রাখা নৌকা। দিঘার হাসপাতাল ঘাটের সামনে। নিজস্ব চিত্র

২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে দিঘাকে গোয়া বানানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দিঘাকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সেখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা ছাড়িয়ে প্রতিবেশী ওড়িশার সীমানা পর্যন্ত সমুদ্রের পাড় সুন্দরভাবে বাঁধিয়ে তোলা হচ্ছে। আর সেই কাজের ফলে তাঁদের রুটিরুজির সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মৎস্যজীবীরা।

সমুদ্রসৈকতে এক সময় দাঁড়িয়ে থাকত একের পর এক মাছ ধরার নৌকা। কিন্তু ইদানিং সৈকত শহরের সেই ছবিটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। ষাটোর্ধ্ব রসুলি সাহা বলেন, ‘‘এক সময় নৌকার ব্যবসা ছিল। বেড় জাল নিয়ে সমুদ্রতটের কাছে মাছ ধরতাম। কিন্তু এত বেশি প্রশাসনিক চাপ সহ্য করতে না পেরে অন্যকে সেই নৌকো দিয়ে দিয়েছি।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউ দিঘার হাসপাতাল ঘাট, স্টেশন ঘাট, ওশিয়ানা এবং ঢেউ সাগর ঘাটের কাছে প্রচুর সংখ্যক ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ছোট নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যেতেন। প্রায় তিরিশটির মতো নৌকা চলত। হাজারখানেক লোকের পরিবার অন্ন সংস্থান হত। কিন্তু গত এক দশকে সেই নৌকোর সংখ্যা কমে দশে এসে ঠেকেছে। যার মাধ্যমে এখন চারশ পরিবারের অন্ন সংস্থান হয়। এমনই এক নৌকোর মালিক অনন্ত শীট। তার নৌকায় ৪০ জন মৎস্যজীবী কাজ করেন। অনন্ত বলেন, ‘‘কয়েক পুরুষ ধরে এখানে মাছ ধর টাই আমাদের একমাত্র জীবন-জীবিকা। কিন্তু গত কয়েক বছরে যে ভাবে উন্নয়ন হচ্ছে তার ফলে প্রশাসনিক বহু ঝামেলা সয়ে পেশা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

নিউ দিঘায় সেচ দফতরের উদ্যোগে সমুদ্রের পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে। এর ফলে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের নৌকা সমুদ্র থেকে পাড়ের দিকে ওঠানো এবং নামানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে। একইসঙ্গে সমুদ্রপাড়ে মৎস্যজীবীদের ভাষায় পরিচিত পালা ঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাবলু সাহা নামে এক মৎস্যজীবী বলেন, ‘‘পর্যটন শিল্প নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু, মৎস্যজীবীদের বংশপরম্পরায় জীবিকায় টান পড়লে আমাদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের কী হবে?’’

ইতিমধ্যে ওইসব ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরাম। তারা প্রশাসনের নানা স্তরে এই বিষয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। এব্যাপারে সংগঠনের সভাপতি দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘দিঘায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং সৌন্দর্যায়নের ফলে এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের পুরনো জীবিকা আজ বিপন্ন হতে বসেছে। এঁরা যাতে সুষ্ঠুভাবে মাছ ধরতে পারেন তার জন্য প্রশাসনের পদক্ষেপ রয়োজন।’’ সমুদ্রপাড় বাঁধানোর কাজ করছে যারা, সেই সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার উত্তম কুমার হাজরা বলেন, ‘‘এ ধরনের অসুবিধার কথা আমরা শুনেছি। মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে কথা বলব। তারপরে কী করা যায় ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদের এমন সমস্যা নিয়ে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই এলাকার মৎস্যজীবীদের ব্যাপারে স্মারকলিপি পেয়েছি। নির্বাচনী কাজ কর্মের কারণে সময় দিতে পারিনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’

digha Midnapur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy