Advertisement
E-Paper

গাফিলতিতেই হচ্ছে রেল দুর্ঘটনা

কোনও রেল দুর্ঘটনা ঘটলেই রুটিনমাফিক তদন্ত হয়। তদন্তে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাঁকে শাস্তিও দেওয়া হয়। অথচ অধিকাংশ গোলযোগের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই দায়ী বলে অভিযোগ করলেন খোদ রেলের কর্মী ইঞ্জিনিয়াররাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৬

কোনও রেল দুর্ঘটনা ঘটলেই রুটিনমাফিক তদন্ত হয়। তদন্তে কারও গাফিলতি প্রমাণিত হলে তাঁকে শাস্তিও দেওয়া হয়। অথচ অধিকাংশ গোলযোগের জন্য রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই দায়ী বলে অভিযোগ করলেন খোদ রেলের কর্মী ইঞ্জিনিয়াররাই।

প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর এম বিশ্বেশ্বরায়ার জন্মদিবস সারা ভারতে ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ হিসেবে পালন করা হয়। এই উপলক্ষে রেলের ‘ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোশিয়েশন’-এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার খড়্গপুরে এক আলোচনাসভার আয়োজন হয়। আলোচনাসভায় রেলের সিগন্যাল, সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পক্ষ থেকে স্লাইড শো প্রদর্শন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন খড়্গপুরের এডিআরএম মনোরঞ্জন প্রধান, রেল হাসপাতালের সুপার এ মণ্ডল, সিনিয়ার ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বি প্রভাকর প্রমুখ। রক্তের সঙ্কট কাটাতে এক শিবিরেরও আয়োজন করা হয়।

রেল চলাচল পরিচালনা করতে সিগন্যাল, সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। কোনও একটি বিভাগ কাজ না করলে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। প্রতিটি বিভাগ কী ভাবে প্রতিদিন রেলকে সচল রাখার কাজ করে যাচ্ছে, সেই বিষয়টি এ দিন ‘পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন’-এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। রেলের প্রযুক্তিতে উন্নতির বিষয়টি আলোচনাসভায় উঠে আসে।

যদিও রেল দুর্ঘটনা হলেই কর্মীদের গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। রেলের কর্মী ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, কাজের চাপ, রক্ষনাবেক্ষণে রেলের উদাসীনতার জেরে দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ছে। রেল লাইন থেকে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারে ত্রুটি দেখা দিলেও ঠিক সময়ে মেরামতি হয় না। ইঞ্জিনিয়াররা বলার পরেও প্রয়োজন মতো সরঞ্জাম বরাদ্দ করা হয় না। তার উপর নির্ভর করেই দিনের পর দিন ট্রেন চালানো হয়। ফলে বাড়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও। কর্মী সঙ্কটের দরুন বাকিদের উপর কাজের চাপ বেশি ফলে কাজে গাফিলতির প্রবণতাও বাড়ে বলে অভিযোগ।

সংগঠনের ডিভিশনাল সম্পাদক তথা রেলের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার মনমোহন বড়ালের অভিযোগ, “ফাটল দেখে দ্রুত মেরামতির দাবি জানাই। যদিও কর্তৃপক্ষ ফাটল মেরামতির জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বরাদ্দ করেন না। এমনকী ওই লাইনে ট্রেনের গতিও নিয়ন্ত্রণ করা হয় না।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘কর্মীর অভাবে দেখভালও ঠিকমতো হয় না। ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থেকেই যায়।”

কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগে সরব ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররাও। ওই বিভাগের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার শ্যামলকুমার মল্লিকের অভিযোগ, “বহু ক্ষেত্রে দুর্বল ট্রান্সফর্মার বদলের আবেদন করলেও বরাদ্দ হয় না। এর ফলে যে কোনও সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই গোলযোগ এড়িয়ে কী ভাবে রেলকে সচল রাখা যায় সেই চেষ্টা করি।”

রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে বলে দাবি করেন ইঞ্জিনিয়াররা। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে রেলের অন্য শাখার তুলনায় দক্ষিণ-পূর্ব রেল যে এখনও পিছিয়ে সে কথাও শোনা গিয়েছে এ দিন। সিগন্যাল বিভাগের সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপকুমার দাস বলেন, “প্রযুক্তির দিক থেকে আমরা অনেক উন্নতি করেছি। তবে কিছু ক্ষেত্রে রেলের অন্য শাখার তুলনায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘দু’টি ট্রেনের সংঘাত বন্ধ করতে কোঙ্কন রেলে ‘অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস’ বসানো হয়েছে। আমাদের এখানে এই প্রযুক্তি চালু হতে চলেছে। এই প্রযুক্তি থাকলে দুর্ঘটনার প্রবণতা আরও কমানো যাবে।”

যদিও সংগঠনের জোনাল সম্পাদক একে পড়িয়া, ডিভিশনাল সম্পাদক মনমোহনবাবু এ দিন বলেন, “আমরা প্রতিনিয়ত সুষ্ঠু ভাবে সব কাজ করতে পারছি বলেই রেল সচল রয়েছে।’’ আক্ষেপের সঙ্গে তাঁরা বলেন, ‘‘চাকরি জীবন যে পদে শুরু করেছিলাম সেই পদেই আমাদের অবসর গ্রহণ করতে হয়। এখানে পদোন্নতির কোনও জায়গা নেই।’’ ‘গ্রুপ সি’ থেকে ‘গেজেটেড অফিসার’ পদে উন্নীত করার দাবিও জানান তাঁরা।

Rail accident negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy