দোকানের সামনে ঝুলছে বোর্ড, ‘২১ বছরের নীচে কাউকে মদ বিক্রি করা যাবে না।’ যদিও নিয়ম রয়েছে খাতায়-কলমেই। চাহিদা মতো মদের বোতল সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে নাবালক পড়ুয়াদের হাতে। স্কুলের ব্যাগেই বইয়ের সঙ্গে ঠাঁই হচ্ছে মদের বোতলেরও। দেখেও দেখে না কেউ। আর আবগারি দফতরের নজরদারি, সেও কদাচিৎ হয় বলে অভিযোগ।
দিন কয়েক আগে মদ কেনার টাকা নিয়ে বচসার জেরে কৃষ্ণনগরে সহপাঠীদের হাতে খুন হয় বছর পনেরোর কিশোর দেবাশিস ভৌমিক। তারপরেও পরিস্থিতির যে কিছুই বদল হয়নি, তার প্রমাণ মিলল বৃহস্পতিবার। এ দিন দুপুরে মেদিনীপুর স্টেশন রোডের অদূরে মদের দোকানের সামনে ঘুরঘুর করছিল দুই নাবালক। ভিড় কমতেই তাদের মধ্যে একজন দোকানে গিয়ে খানিকটা চাপা স্বরে জানাল, কোন ব্রান্ডের মদ তার প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে মদের বোতল হাতে পেয়েও গেল সে। তারপরে বোতল ব্যাগে ঢুকিয়ে তড়িঘড়ি এলাকা ছাড়ল তারা দু’জনে।
প্রশ্ন উঠছে, আবগারি দফতর থাকা সত্ত্বেও নাবালকরা এত সহজে মদ পাচ্ছে কী ভাবে? দোকানের সামনে নোটিস লাগানোর অর্থই বা কী? আবগারি দফতর যে আদতে ঠুঁটো, তা মেদিনীপুরের এক মদের দোকানের মালিকের বক্তব্যেই স্পষ্ট। তিনি বলছেন, “শেষ কবে আবগারি দফতরের লোকেরা দোকান পরিদর্শনে এসেছেন মনে করতে পারছি না! মাস কয়েক আগে হবে!” তাঁর কথায়, “লাইসেন্সের মেয়াদ ফুরোলে আমাদেরই আবগারি দফতরে যেতে হয়। পুনর্নবীকরণের আবেদন করতে হয়।” শহরের আর এক মদ বিক্রেতা আবার বলছেন, “কে প্রাপ্তবয়স্ক, কে প্রাপ্তবয়স্ক নয়, তা অনেক সময় বোঝা যায় না! ঠিক মতো গোঁফের রেখা তো বেশি বয়সেও অনেকের ফোটে না!”
মদ বিক্রির বিধি
১। একুশ বছরের নীচে কারও কাছে মদ বিক্রি করা যাবে না।
২। বার ও মদের দোকানে ওই মর্মে নোটিস ঝোলানো বাধ্যতামূলক।
৩। নোটিস যেন সকলের চোখে পড়ে।
৪। মালিকদের তাদের বার ও দোকানের কর্মীদের স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিতে হবে, তারা যেন অল্প বয়সীদের কাছে মদ বিক্রি না করেন।
পড়ুয়াদের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও। শহহরের বাসিন্দা সুব্রত সরকার মানছেন, “এখন স্কুলপড়ুয়াদের একাংশও মদ্যপান করছে। এটা উদ্বেগের। শৈশবকে বাঁচাতে সচেতনতা আরও বাড়ানো উচিত। কিশোরদের মদ বিক্রিতে রাশ টানা উচিত। না হলে সামনে বড় বিপদ।” শহরের বাসিন্দা সুস্মিতা দাসও মানছেন, “মাদকের জন্য শৈশব কম বয়সে হারিয়ে গেলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের কিছু হয় না।”
মেদিনীপুর শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকা মিলিয়ে প্রায় ১৪টি মদের দোকান ও বার রয়েছে। পরিকাঠামো না থাকায় সব মদের দোকানে যে নজরদারি চালানো কার্যত অসম্ভব, তা স্বীকার করছেন আবগারি দফতরের এক কর্তা। তিনি মানছেন, ‘‘আমাদের লোকবল কম। তাই শহর-শহরতলির সব দোকানে হয়তো নিয়মিত নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। তবে মাঝেমধ্যে
নজরদারি চলেই।”
তবে নজরদারির অভাবের কথা মানতে নারাজ আবগারি দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুরের সুপার সুব্রত দাশগুপ্ত। তাঁর দাবি, “মদের দোকানগুলোয় নজরদারি চলেই।’’ তিনি বলথেন, ‘‘সম্প্রতি দোকানগুলোয় নোটিসও দেওয়া হয়েছে। ২১ বছরের নীচে কাউকে মদ বিক্রি করার খবর পেলেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy