ব্যাঙ্কে জাল নথি জমা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করল সিআইডি। দাসপুর থানার লাউদার বাসিন্দা নবীন পাত্র নামে ওই যুবককে বৃহস্পতিবার রাতে সিআইডি কলকাতা থেকে পাকড়াও করে। শুক্রবার ধৃতকে ঘাটাল আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ৩ দিনের সিআইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত বছর পঁয়তাল্লিশের নবীনের ঘাটালে বেশ পরিচিতি রয়েছে। সিআইডি জানিয়েছে, কয়েকবছর আগে ঘাটাল শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ভূয়ো নথি জমা দিয়ে ৮০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু ঋণের কিস্তি জমা না পড়ায় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তদন্তে নামে। তখনই জাল নথির বিষয়টি সামনে আসে।
চলতি বছরের গোড়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ঘাটাল থানায় নবীন পাত্রের নামে মামলা করেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ মামলাটির তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতা হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকা থেকে মোবাইলের সূত্র ধরে নবীনকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয় ও সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, নবীনের আসল বাড়ি ঘাটালের মনসুকায়। কিন্তু এমন আচরণের কারণে় তার বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। লাউদার বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে সে একাই থাকত। একসময় ঘাটাল মহকুমায় একাধিক জায়গায় তার ছ’টি মদের দোকান ছিল। কখনও সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে বেকার ছেলেদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া, কখনও বা মদ দোকানের লাইসেন্স বের করার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে নবীনের বিরুদ্ধে। এর আগে এ সব কারণে ঘাটাল-দাসপুর থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছিল। পুলিশের হাতে ধরাও পড়ে সে। অভিযোগ, জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ভুয়ো নথি জমা দিয়ে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার কারবার শুরু করেছিল।
ধৃতকে জেরা করে সিআইডি জানতে পেরেছে, ধৃত যুবক ঘাটাল-দাসপুর এলাকায় অন্তত চার-পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে একই রকম ভাবে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। দাসপুর থানাতেও নবীনের নামে এক ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মামলা করেছেন। সিআইডির এক আধিকারিক জানান, “ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হবে। প্রতারণার ঘটনায় কারা কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঋণ নিয়ে ওই টাকায় কী করত সে তাও জানা হবে।” ঘাটাল শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিকের কথায়, “আমাদের ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে চার কোটি টাকা প্রতারণা করেছে। এতে ব্যাঙ্কের কেউ জড়িত থাকার সম্ভবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”
সিআইডি জানিয়েছে, শুধু ভুয়ো নথি নয়, স্ট্যাম্প পেপার জাল করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ঘাটাল শহরের এক কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে ব্যবসার নাম করে ভুয়ো নথি জমা দিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মামলা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। মূলত জমির জাল কাগজ জমা দিয়ে ব্যাঙ্কে লোনের আবেদন করত সে। ঘাটালে একাধিক ব্যাঙ্ক থেকে একই রকম ভাবে কয়েক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর ব্যাঙ্কমুখো হত না। সিআইডির এক আধিকারিকের কথায়, “ব্যাঙ্ক প্রতারণার ঘটনায় ব্যাঙ্কের কেউ জড়িত কিনা তাও জানার চেষ্টা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy