Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় পরিবারতন্ত্র

অবশেষে রেলশহরের পুরভোটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল। আর সেই তালিকায় পরিবারতন্ত্রেরই ছায়া। সংরক্ষণের গেরোয় যে সব দলীয় কাউন্সিলর এ বার প্রার্থী হতে পারেননি, সেখানে শিকে ছিঁড়েছে তাঁদের স্ত্রীদের। তৃণমূল সূত্রে খবর, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এড়াতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে।

ঝাপেটাপুরে সভায় তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।

ঝাপেটাপুরে সভায় তালিকা প্রকাশ তৃণমূলের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

অবশেষে রেলশহরের পুরভোটে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল তৃণমূল। আর সেই তালিকায় পরিবারতন্ত্রেরই ছায়া। সংরক্ষণের গেরোয় যে সব দলীয় কাউন্সিলর এ বার প্রার্থী হতে পারেননি, সেখানে শিকে ছিঁড়েছে তাঁদের স্ত্রীদের।

তৃণমূল সূত্রে খবর, আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এড়াতেই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশই ছিল, সংক্ষরণের গেরোয় পড়ে যে সব কাউন্সিলর প্রার্থী হতে পারবেন না, সেখানে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের মতামত নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর যে নাম প্রস্তাব করবেন, তাঁকেই প্রার্থী করতে হবে।

রবিবার দুপুরে মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হয়। উপস্থিত ছিলেন দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, তিন জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ, নির্মল ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি প্রমুখ। রেলশহরে তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অনুগামীদের সঙ্গে প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীদের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। এ বারও এই বিরোধের জেরে প্রার্থী বাছতে হিমশিম খেতে হয় নেতৃত্বকে। শেষমেশ তৃণমূল রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে জট কাটে। জহরলালবাবু প্রার্থী হয়েছেন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই। তাঁর বৌমা তথা ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়া পাল অবশ্য সংরক্ষণের গেরোয় পড়ে টিকিট পাননি। জয়াদেবীর ওয়ার্ডটি এ বার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। অন্য দিকে, তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিসবাবু প্রার্থী হয়েছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর রিনা শেঠ টিকিট পাননি।

তালিকা প্রকাশের পরেই মিষ্টিমুখ তৃণমূলে।

সংরক্ষণের কোপে পড়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেননি কাউন্সিলর সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়। বদলে এখানে প্রার্থী হয়েছেন সুশান্তবাবুর স্ত্রী শিপ্রা চট্টোপাধ্যায়। একই কারনে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন কাউন্সিলর মহম্মদ আকবরের স্ত্রী রোশদা বেগম। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন কাউন্সিলর দিব্যেন্দু পালের স্ত্রী জয়শ্রী পাল। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন কাউন্সিলর অপূর্ব ঘোষের স্ত্রী রিঙ্কি ঘোষ। ২৫ নম্বর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত। এখানে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূল নেতা শশাঙ্ক পাত্রের স্ত্রী দেবযানী পাত্র। সপ্তাহ কয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখান অরবিন্দ পাণ্ডে। অরবিন্দ পাণ্ডের স্ত্রী মঞ্জু পাণ্ডে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন। সিপিআই ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া গোকুল দাসকে ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে। প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান তুষার চৌধুরী দাঁড়াচ্ছেন ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে।

প্রার্থী তালিকায় কেন পরিবারতন্ত্রের ছায়া? তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্‌ ঘোষ বলেন, “যে সব ওয়ার্ড সংরক্ষিত হয়েছে, সেখানে প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের মতামত নেওয়া হয়েছে। কাউন্সিলর যাঁর নাম প্রস্তাব করেছেন, তাঁকেই প্রার্থী করা হয়েছে।” প্রদ্যোত্‌বাবুর মতে, “এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। থাকতেও পারে না!”

২০১০ সালের নির্বাচনে জিতে খড়্গপুরে পুরবোর্ড গড়েছিল তৃণমূলই। সে বার ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৫টি। পরে অবশ্য অনাস্থা ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। এ বার রেলশহরে তৃণমূলকে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, একদিকে খড়্গপুরে কংগ্রেসের রাজনৈতিক জমি রয়েছে, অন্য দিকে গত লোকসভা নির্বাচনের পরে পালে হাওয়া বিজেপি-রও। লোকসভায় ভোট প্রাপ্তির নিরিখে তো খড়্গপুর সদর বিধানসভায় ‘লিড’ পেয়েছে বিজেপি। এ দিন প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবু অবশ্য দাবি করেন, “এ বার খড়্গপুরে দলের ফল ভালই হবে।”

এ দিন বিকেলে ঝাপেটাপুরে পুরসভার সামনে এক সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল। সেখানে দেবাশিস, জহরলাল-সহ তৃণমূলের সব প্রার্থীই উপস্থিত ছিলেন। বস্তুত, রেলশহরে দলের মধ্যে যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই, এদিন বারেবারেই তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি দীনেনবাবুর দাবিও, “দলের মধ্যে কোনও মতপার্থক্য নেই। এ সব কুত্‌সা-অপপ্রচার!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE