Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Egra Blast

খাঁকি পোশাকের আড়ালে বুকে কষ্ট চেপে বাড়ি ফিরলেন ওঁরা 

১৬ মে দুপুরে খাদিকুলে ভানু বাগের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যু রাজ্যবাসীকে নড়িয়ে দিয়েছে।

বিস্ফরনে উড়ে গেছে বাড়ি ঘর।

বিস্ফরনে উড়ে গেছে বাড়ি ঘর। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
এগরা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৩ ০৮:৪৭
Share: Save:

গায়ে জড়িয়ে থাকা খাঁকি পোশাক বার বারই মনে পড়িয়ে দিচ্ছে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। সেই কষ্ট বুকে চেপে হোমগার্ডের চাকরিতে যোগ দিয়ে বাড়ি ফিরলেন খাদিকুলে বিস্ফোরণে নিহত পরিবারের আটজন সদস্য। রবিবার বাড়িতে শ্রাদ্ধশান্তির জন্য চাকরিতে যোগ দিতে যেতে পারেননি বাকি দুই নিহতের পরিবার।

১৬ মে দুপুরে খাদিকুলে ভানু বাগের বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১১ জনের মৃত্যু রাজ্যবাসীকে নড়িয়ে দিয়েছে। ছিন্নভিন্ন দ্বগ্ধ দেহগুলি বিস্ফোরণ স্থলের চারপাশে ছড়িয়ে থাকা দৃশ্য টিভির পর্দায় দেখে অনেকেই চোখ বুজে ফেলেছেন। রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দল গুলি। ঘটনার এগারো দিনের পর মুখ্যমন্ত্রী দশজন পরিবারকে শনিবার আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। চাকরির নিয়োগপত্র পেয়ে পাকাপাকি রোজগারের বন্দোবস্ত হওয়ার কিছুটা স্বস্তিতে নিহতদের পরিবার। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতোই রবিবার থেকে তাঁদের চাকরি জীবন শুরু হয়েছে। সেই মতো এ দিন সকালে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চাকরিতে যোগ দিতে বেরিয়ে পড়েন।

স্বাভাবিকভাবেই সরকারি চাকরি পাওয়ার আনন্দ এদিন তাঁদের চোখে মুখে ছিল না। স্বজন হারানোর কষ্ট বুকে চেপে সকাল সাতটায় তাঁরা জেলাশাসকের অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। সেখানে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে তমলুক জেলা পুলিশ লাইনে গিয়ে এদিন আটজন নিহতের পরিবারের সদস্য হোমগার্ডের চাকরিতে যোগ দেন।

প্রশাসন সূ্ত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিন তাঁদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা নেওয়ার কাজ হয়েছে। পরবর্তীতে তাঁদের প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হবে বলে জানানো হয়েছে। বাকি দুই নিহত পরিবার শক্তিপদ বাগ ও কবিতা বাগের বাড়িতে রবিবার শ্রাদ্ধশান্তির জন্য এদিন তাঁরা তমলুক পুলিশ লাইনে চাকরিতে যোগ দিতে যেতে পারেননি। সোমবার ওই দুই পরিবারের সদস্য চাকরিতে যোগ দিতে যাবেন।

বিস্ফোরণে মৃত অম্বিকা মাইতির স্বামী সুরেশ মাইতিকে মুখ্যমন্ত্রী হোমগার্ডের চাকরির নিয়োগপত্র দিয়েছেন। সুরেশের বয়স এখন ৫৮ বছর। পায়ের সমস্যা রয়েছে। তিন মেয়ের মধ্যে বড় নার্সিংয়ের চাকরি করেন। মেজো নার্সিং নিয়ে পড়াশোনা করছেন। ছোট মেয়ে এবার মাধ্যমিক দিয়েছে। বয়স না হওয়ার কারণে ছোট মেয়েকে চাকরি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তা হয়নি। যদিও বড় মেয়ে শিউলি মাইতি বলেন, ‘‘জেলাশাসককে আমরা জানিয়েছিলাম বাবার আটান্ন বছর বয়স হয়েছে। এই চাকরি ছোট বোনকে দিতে। যেহেতু বোনের ষোলো বছর বয়স তাই তার এখন চাকরি হবে না। দু'বছর বাবা চাকরি করার পরে ছোট বোনোর বয়স আঠারো হবে। সেই সময় বাবার চাকরি ছোট বোনকে দেবে জেলা প্রশাসন।’’ এদিন চাকরিতে যোগ দিয়ে বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ সবাই খাদিকুলের গ্রামে ফেরেন।

মৃত মিনতি মাইতির পরিবারে চাকরিতে যোগ দেওয়া ভাইপোর স্ত্রী রেবতী মাইতি বলেন, ‘‘আজকে পুলিশ লাইনে গিয়ে চাকরিতে যোগ দিলাম। মঙ্গলবার থেকে ছয় সপ্তাহ পুলিশ লাইনে আমাদের ট্রেনিংয়ের জন্য থাকতে হবে।’’

কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির জেলা সম্পাদক তন্ময় হাজার বলেন, ‘‘এই সরকার জীবদ্দশায় মানুষকে চাকরি দিতে পারে না। মৃত্যুর বিনিময়ে তাদের চাকরি পেতে হয়।’’ কাঁথি সাংগঠনিক তৃণমূলের জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মানবিক ভাবে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকে মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করছেন। আমরা সবসময় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE