ঘোষণার বছর ঘুরেছে। ফের এসেছে আর এক ‘ব্যান পিরিয়ড’। কিন্তু রাজ্য সরকারের ঘোষণা মতো ‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্পে ‘ব্যান পিরিয়ডে’র সময় এখন আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন না উপকূলের মৎস্যজীবীরা। এ নিয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ জমছিল তাঁদের মধ্যে। এ বার তাঁরা রাস্তায় নেমে রাজ্যের এই ‘বঞ্চনা’র বিরদ্ধে সরব হয়েছেন। সরকারি প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে মৎস্যজীবীদের গ্রামে মাইক বেঁধে রিকশায় করে প্রচার শুরু হল রবিবার থেকে। এলাকায় এলাকায় লাগানো হচ্ছে পোস্টারও।
এ দিন সকাল থেকে কাঁথি-১, দেশপ্রাণ এবং খেজুরি-২ ব্লক জুড়ে মৎস্যজীবীদের গ্রাম, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং খটিগুলিতে প্রচার করা হয় পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের উদ্যোগে। তিনটি রিকশা জুনপুট, হরিপুর খটি, পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দর হয়ে খেজুরিতে প্রচার করেছে। প্রচারে সরাসরি অভিযোগ করা হয়, ‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্পের টাকা না দিয়ে সরকার মৎস্যজীবীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক দেবব্রত খুটিয়া বলেন, ‘‘মাইক প্রচার শুনে গ্রামের মৎস্যজীবীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে সরকারের প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। একদিকে সমুদ্র সাথী প্রকল্পের টাকা দেয়নি। আবার ব্যান পিরিয়ডে ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীদেরও সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।’’
উল্লেখ্য, গত বছর রাজ্য বিধানসভার বাজেটে সমুদ্র সাথী প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বলা হয়েছিল, ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে যে দু’মাস মৎস্যজীবীরা সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন না, তাদের পরিবার পিছু ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এ বছর বিধানসভার অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী জানান, একজন মৎস্যজীবীও আর্থিক সুবিধা পাননি। এরপর আন্দোলনে নামে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি। উপকূলবর্তী কাঁথি মহকুমার সবকটি ব্লক ছাড়াও নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা, মহিষাদল এবং কোলাঘাট ব্লকে প্রশাসনকে তারা স্মারকলিপি ইতিমধ্যেই দিয়েছে। এর পরেও মেলেনি ভাতা। দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক দেবাশিস শ্যামল বলেন, ‘‘আজ, সোমবার রামনগরের দু’টি ব্লক, সুতাহাটা এবং মহিষাদলেও একই বিষয়ে প্রচার করা হবে। যেখানে সরকার কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি, সেখানে তারা ব্যান পিরিয়ডের নির্দেশ মানতে বলে
কী ভাবে!’’
রাজনৈতিক মহল মনে করাচ্ছে, গত লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি লোকসভা কেন্দ্র (কাঁথি আর তমলুক) হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। মৎস্যজীবী অধ্যুষিত ছ’টি বিধানসভা এলাকায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ‘সমুদ্র সাথী’ প্রকল্পে বঞ্চনা নিয়ে যেভাবে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলি সরব হচ্ছে, তাতে ভোট বাক্সে প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মৎস্য প্রতিমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দ্রুত সমুদ্র সাথী প্রকল্পে মৎস্যজীবীদের ভাতা দেওয়ার জন্য।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)