বনবান্ধব উত্সবেও সেই বাঘের ছায়া!
শালবনির পিঁড়াকাটায় দু’দিনের এই উত্সবে বাঘ-সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষার বার্তা দেওয়া হয়েছে। উত্সবের শেষ দিন ছিল রবিবার। এসেছিলেন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। প্রায় দু’মাস হতে চলল পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে বাঘের দেখা মিলেছে। তবে বহু চেষ্টা করেও সেই বাঘকে বন্দি করা যায়নি। স্থানীয়দের একাংশের অসচেতনতায় বাঘকে নানা সমস্যায় পড়তে হতে হচ্ছে বলে বনকর্তাদের দাবি। কোথাও জঙ্গলে লোকজন অবাধে যাতায়াত করছেন, কোথাও আগুন লাগিয়ে দিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। সব দিক দেখেই এ বার বনবান্ধব উত্সবে বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে দফতরের এক সূত্রে খবর। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “বন দফতরের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার চলেই। এই উত্সবেও তা করা হয়েছে।”
উৎসবে দফতরের বিভিন্ন স্টল ছিল। সেই সব স্টলেই ব্যানার-ফেস্টুনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়। কোথাও বাঘের ছবি পাশে লেখা ছিল, ‘দোহাই আমাদের মেরো না। আমাদের জিনিস কেড়ো না।’ কোথাও লেখা, ‘গোসাপ, নেকড়ে, খেঁকশিয়াল, বনবিড়াল— সবাই জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। তাই সকলের সংরক্ষণ প্রয়োজন।’ সেই সঙ্গে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, এই প্রাণীগুলি বন্যপ্রাণ আইনে সুরক্ষিত। এদের ধরা বা হত্যা করা দণ্ডণীয় অপরাধ। স্টলগুলোয় ভিড়ও হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ চালক, লক্ষ্মী মাহাতোরা বলছিলেন, “খুব সুন্দর করে সব বোঝানো হয়েছে। এতে নিশ্চয়ই অনেকে সচেতন হবেন।”
বাঘ ধরতে সুন্দরবন থেকে আসা বিশেষ দলটির এক সদস্য মানছেন, “একদিকে শিকারিদের অবাধ আনাগোনা। অন্যদিকে, আগুন। এর ফলে বাঘ-সহ সব বন্যপ্রাণই নিশ্চিত ভাবে আতঙ্কে থাকবে।’’ জঙ্গলে বাঘ আসার পর থেকে লাগাতার সচেতনতামূলক প্রচার চালাচ্ছে বন দফতর। মাইকে হাঁকা হচ্ছে, ‘জঙ্গলে আগুন লাগাবেন না। এর ফলে বন্য জীবজন্তুর ক্ষতি হতে পারে। হিংস্র বন্যপ্রাণী লোকালয়ে ঢুকে পড়তে পারে।’ মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “সব এলাকাতেই জনসচেতনতা গড়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে।”
গত ৩১ জানুয়ারি সকালে প্রথম লালগড়ের জঙ্গলে পায়ের ছাপ মেলে। পরে বাঘের ছবিও ক্যামেরাবন্দি হয়। তারপর থেকে বাঘ ধরতে কম চেষ্টা হয়নি জঙ্গলমহলে। শুরুতে ছাগলের, পরে শুয়োরের টোপ দেওয়া খাঁচা পাতা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে ড্রোন ওড়ানো হয়েছে। কিন্তু বাঘ আর ধরা পড়েনি। উল্টে গোয়ালতোড়ের কাদরার জঙ্গলে এক ব্যক্তি বাঘের আক্রমণে জখম হয়েছেন বলে দাবি। বাঘ ধরতে গিয়ে বিশেষ গাড়িতে দমবন্ধ হয়ে দুই বনকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। সব দিক দেখে বনকর্তারা চাইছেন, জঙ্গল নির্বিঘ্ন রাখতে। তাঁদের দাবি, এলাকা শান্ত থাকলেই বাঘ ধরা পড়বে।