Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জল জমে ক্ষতি ফুল, আনাজের

২০০৫ সালের এই মাসে বন্যার স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি জেলার বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের জেরে সেবার ১৮-২২ অক্টোবর টানা পাঁচদিনের ভারী বৃষ্টিতে বন্যার কবলে পড়েছিল গোটা পূর্ব মেদিনীপুর।

তছনছ: গাঁদা গাছের তলায় জমেছে জল। নিজস্ব চিত্র

তছনছ: গাঁদা গাছের তলায় জমেছে জল। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

ব্যাঙ্ক থেকে ৬০ হাজার টাকা কৃষিঋণ নিয়ে খরিফ মরসুমে বিক্রির জন্য জমিতে টমেটো, বেগুন, পালং চাষ করেছিলেন পাঁশকুড়ার পাওবাকি গ্রামের নগেন্দ্রনাথ মান্না। ষাট ছুঁই ছুঁই নগেন্দ্রবাবুর এখন মাথায় হাত। কারণ, গত তিন দিন ধরে টানা ভারী বৃষ্টিতে জমিতে জল জমে সব আনাজ গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘‘ভেবেছিলাম ফসল বিক্রি করে ভাল লাভ হবে। ব্যাঙ্কের ঋণও শোধ করতে পারব। এখন জানি না কী হবে?’’ গলায় একরাশ উদ্বেগ ঝরে পড়ল নগেন্দ্রবাবুর।

শুধু নগেন্দ্রবাবুই নন, পূর্ব মেদিনীপুরের বেশিরভাগ চাষিরই কপালে ভাঁজ ফেলেছে এই বৃষ্টি। ২০০৫ সালের এই মাসে বন্যার স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি জেলার বাসিন্দারা। বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপের জেরে সেবার ১৮-২২ অক্টোবর টানা পাঁচদিনের ভারী বৃষ্টিতে বন্যার কবলে পড়েছিল গোটা পূর্ব মেদিনীপুর। সেই স্মৃতিটাই উসকে দিয়েছে এবার অক্টোবরের শেষের ভারী বৃষ্টিপাত। গত বুধবার থেকে উপকূলবর্তী এই জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে কালীপুজোর আনন্দ ইতিমধ্যেই ম্লান। তার উপর আবহাওয়া দফতরের আরও বৃষ্টির পূর্বাভাসে বন্যার সিঁদুরে মেঘ দেখছেন জেলার মানুষ।

গত তিন ধরে প্রবল বৃষ্টিপাতে পাঁশকুড়া ও কোলাঘাট এলাকায় আনাজ ও ফুল চাষের খেত জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বহু চাষি। এর ফলে বাজারে শীতের আনাজ জোগানে সমস্যা হবে বলে আশঙ্কা করছেন পাঁশকুড়া ব্লকের ঘোষপুর, মাইশোরা, কেশাপাট, চৈতন্যপুর ও হাউর পঞ্চায়েতের বহু চাষি।

জেলা কৃষি দফতরের সহ-অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) মৃণালকান্তি বেরা বলেন, ‘‘বুধবার হাল্কা বৃষ্টি হলেও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দু’দিনে জেলায় গড়ে ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা এই সময়ের পক্ষে ভারী বৃষ্টিপাত বলে ধরা যায়। এতে আনাজ ও ফুল গাছ পচে গিয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। ভারী বৃষ্টিতে ধানের গাছ শুয়ে পড়ায়ও ক্ষতি হবে।’’

পাঁশকুড়ার কাঁসাই ও ক্ষীরাই নদীর তীরবর্তী শেরহাটি, দোকান্ডা, জদড়া, উসুদপুর, নস্করদিঘি, ধারন্দা, কেশাপাট, কালীদান, নীলমণিরামচক প্রভৃতি গ্রামে শীতকালীন আনাজ চাষ ও ফুল চাষের রেওয়াজ রয়েছে। নীলমনিরামচক গ্রামের শচীনন্দন পাত্র বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে বেগুন গাছের গোড়ায় জল জমে গাছ পচে যাচ্ছে। গাঁদা ফুলের গাছেরও একই দশা। চাষে প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল।’’

হাউর এলাকার কালীদান গ্রামের দিনেশ মাজির কথায়, ‘‘এক বিঘে জমিতে ১০ দিন আগে গাঁদা ফুলের চারা লাগিয়েছিলাম। জমিতে বৃষ্টির জল জমে অনেক গাছ পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ ভাবে ক্ষতির মুখে পড়ব ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rain Irrigation Flower Vegetables
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE