Advertisement
E-Paper

রথের দিন থেকে যাত্রার রেকর্ড বুকিং! আশায় বুক বাঁধছে ‘মিনি চিৎপুর’, কোন পালাগানের চাহিদা বেশি?

রবিবার, রথের দিনেই অভাবনীয় সাড়া মিলেছে গ্রামগঞ্জ থেকে। এ বার যে পরিমাণ বুকিং হয়েছে তাতে উচ্ছ্বসিত ‘মিনি চিৎপুর’ বলে খ্যাত পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ১২:১৬
নন্দকুমারে যাত্রার বুকিং চলছে।

নন্দকুমারে যাত্রার বুকিং চলছে। —নিজস্ব চিত্র।

মাঠে বিশাল প্যান্ডেল খাটিয়ে যাত্রাপালা হত কয়েক বছর আগেও। গ্রামেগঞ্জে ফি বছর বড় বড় ‘যাত্রা পার্টি’ আসত। সেই ছবি এখন অনেকটাই ফিকে। করোনাকালে যাত্রাশিল্প আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যদিও এ বারের রথযাত্রার দিন থেকে যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে, তাতে আবার আশায় বুক বাঁধছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী এবং ব্যবসায়ীরা।

রথের দিন থেকে যাত্রাপালার বুকিংয়ের রেওয়াজ। রবিবার রথের দিনেই অভাবনীয় সাড়া মিলেছে গ্রামগঞ্জ থেকে। এ বার যে পরিমাণ বুকিং হয়েছে তাতে উচ্ছ্বসিত ‘মিনি চিৎপুর’ বলে খ্যাত পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার। রথের দিন এখানকার একাধিক বুকিং অফিসে প্রায় শতাধিক পালাগানের জন্য অগ্রিম জমা করেছেন আয়োজকেরা। এখনও বায়না আসছে। তাই, করোনা পর্ব কাটিয়ে আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে যাত্রাদলগুলি।

সময় বদলেছে। তার সঙ্গে তাল মেলাতে মানুষের রুচি অনুযায়ী যাত্রার কাহিনি, গল্প এবং উপস্থাপনাতেও পরিবর্তন এসেছে। এখন পালাগান বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক কাহিনির বিষয়ে বেশি আগ্রহী আয়োজকেরা। রাজনৈতিক আকচাআকচি অথবা পৌরাণিক ঘটনা নিয়ে পালাগানে সে ভাবে আর আকৃষ্ট হচ্ছেন না দর্শক।

বাংলার যাত্রাপাড়া হিসেবে বহুল পরিচিত কলকাতার চিৎপুর। একের পর এক নামজাদা যাত্রাদল রয়েছে ওই এলাকায়। বহু নামজাদা অভিনেতা-অভিনেত্রী এই যাত্রাদলগুলির সঙ্গে যুক্ত। তবে কলকাতার পর যাত্রাদলের বুকিংয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জনপ্রিয় জায়গা পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার বাজার। এখানে জাতীয় সড়কের ওপর গোল চৌকি (চৌমাথা) রাস্তার পূর্ব পাড়ে রয়েছে একাধিক যাত্রা বুকিংয়ের অফিস। পূর্ব মেদিনীপুরের পাশাপাশি আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নন্দকুমারে ছুটে আসেন যাত্রাপ্রেমীরা। যে কারণে এই জায়গা ‘মিনি চিৎপুর’ নামে পরিচিত। প্রতি বছর রথের দিন থেকে যাত্রাপালা বুকিংয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।

কিন্তু, মোবাইল, ইন্টারনেটের যুগে দাঁড়িয়ে সিনেমা হলগুলি যে ভাবে ধুঁকছে, তাতে যাত্রা শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কার দোলাচলে যাত্রাদলগুলি। করোনা পর্বে যাত্রাপালায় ব্যাপক ভাটা পড়ে গিয়েছিল। ওই সময় বহু যাত্রাদল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে এ বার রথযাত্রার দিন যাত্রাপালা বুকিং ঘিরে যে উৎসাহ দেখা গিয়েছে, তাতে যাত্রাদলগুলি উচ্ছ্বসিত। ইন্টারনেটের যুগেও যে যাত্রাশিল্প হারিয়ে যায়নি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন বুকিং এজেন্টরা। হলদিয়ার একটি কালীপুজো কমিটির সদস্য সুদীপ্ত মণ্ডল বুকিংয়ের জন্য এসেছিলেন নন্দকুমার। তিনি বলেন, “এখনও সাধারণ মানুষের কাছে যাত্রার বিপুল চাহিদা রয়েছে। অন্যান্য অনুষ্ঠানের তুলনায় যাত্রা দেখতে অনেক বেশি মানুষ ভিড় জমান। তাঁদের দাবি মতো আমরা এ বারেও যাত্রা বুকিং করতে এসেছি।”

নন্দকুমারে যাত্রার বুকিং করতে এলে অনেকেই পরিচিত এজেন্টদের মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। তেমনই এক জন এজেন্ট অক্ষয় মাইতি। তিনি বলেন, “প্রতি বছরের মতো এ বারও রথের দিন সকাল থেকে আমরা অফিস সাজিয়ে বসেছিলাম। অন্যান্য বছর বেলা ১২টা থেকে বুকিংয়ের জন্য বিভিন্ন মেলা কমিটি এবং আয়োজকেরা আসেন। এ বার সকাল ৭টা থেকে আয়োজকদের ভিড়ে উপচে পড়েছে অফিস। কয়েক ঘণ্টায় একটি অফিসে ১৬টি বুকিং পেয়েছি। বেশ কয়েকটি বুকিং অফিস মিলিয়ে রথের দিনের প্রথম কয়েক ঘণ্টাতেই বুকিংয়ের সংখ্যা ৫০ পেরিয়ে গিয়েছে।’’ তিনি জানান, অনেক কমিটি অর্কেস্ট্রা বুকিং করছে। তবে তার তুলনায় যাত্রার বুকিং অনেক বেশি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে যাত্রার জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা তা জানিয়েছেন জয়গুরু নাট্য কোম্পানির মালিক অভিনেত্রী জয়া ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “আমি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর ধরে যাত্রা করেছি। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছি আমরা। মাঝে একটা সময়ে যাত্রাশিল্পে চরম দুর্দশা তৈরি হয়েছিল। তার পর তিন বছর হল আমরা নিজেরাই দল গড়েছি। প্রথম বছর ১৭৫টি শো করেছিলাম। গত বছর ১৬১টি যাত্রাপালা করেছি। এ বার প্রথম দিনেই ২২টি বুকিং পেয়েছি। আশা করছি, গত ২ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’’

Nandakumar Yatra Rathayatra
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy