Advertisement
E-Paper

ওঝা-তুকতাক, মৃত্যু সর্পদষ্টের

হাসপাতাল সূত্রে খবর,  সোমাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিত্সা শুরু হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতাল সোমার মৃত্যু হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০
সোমা সিংহ

সোমা সিংহ

হাট থেকে ফেরার পথে সাপে কেটেছিল তাকে। বাড়ি ফিরে সে কথা বাবা-মাকে জানিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিল সতেরোর সোমা সিংহ নামে ঝাড়গ্রামের চন্দ্রি গ্রামের ওই কিশোরী। কিন্তু খেতমজুর বাবা মেয়ের কথা না শুনে গ্রামের ওঝার কাছে নিয়ে যান। সেখানে ওঝার ঝাড়ফুঁকে কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সোমাকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি। ফের সর্পদষ্ট হয়ে কুংস্কারের বলি হওয়ায় এ নিয়ে স্থানীয় মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি পঞ্চায়েত প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রি গ্রামটি বর্ধিষ্ণু। গ্রামে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, দোকান-বাজার, ব্যাঙ্ক, সিআরপি’র ক্যাম্প রয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর স্কুল ছুট হয়ে যায় সোমা। বাবা পাগলু সিংহ পেশায় খেতমজুর। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে অভাবের সংসারে সোমা একমাত্র সন্তান। রবিবার বাড়ির অদূরে সাপ্তাহিক হাটে গিয়েছিল সোমা। সন্ধ্যায় ফেরার সময় সাপে কামড়ায় তাকে। বাড়ি ফিরে হাসপাতালে যেতে চেয়েছিল সোমা। কিন্তু পাগলুবাবু ও তাঁর স্ত্রী আল্পনাদেবী সোমাকে স্থানীয় ওঝা শিবব্রত সিংহ ওরফে নীলের কাছে নিয়ে যান। সেখানে সোমাকে সারিয়ে তোলার নামে ঝাঁড়ফুক করে, নিম পাতা খাইয়ে ছ’শো টাকা পারিশ্রমিক নেন নীল। কিন্তু বাড়িতে আনার পরে সোমার অবস্থার অবনতি হয়। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে থাকে। কথা জড়িয়ে যেতে থাকে। এক সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে সে।

সোমার কাকা রাখাল সিংহ বলেন, দাদা-বৌদির কাণ্ডকারখানা আমার ভাল লাগেনি। জোর করেই ভাইঝিকে ঝাড়গ্রামে নিয়ে যাই। সোমবার ভোর চারটে নাগাদ ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।’’ হাসপাতাল সূত্রে খবর, সোমাকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রেখে চিকিত্সা শুরু হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি। মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতাল সোমার মৃত্যু হয়। হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “মেয়েটিকে সাপে কামড়ানোর প্রায় ঘণ্টা দশেক পরে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তখন আর কিছুই করার ছিল না। সব রকম চেষ্টা করেও মেয়েটিকে বাঁচানো যায়নি।”

পঞ্চায়েত সদস্য সাবিত্রী খামরুই বলেন, “রবিবার সোমাকে সাপে কামড়ানোর খবর পেয়েই মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু ওর বাড়ির লোকজন যে এমন কাণ্ড করবে, জানব কী করে!”

চন্দ্রি পঞ্চায়েতের প্রধান অলকা দাস বলেন, “এলাকায় সর্পদষ্টকে প্রথমেই হাসপতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচার রয়েছে। তারপরেও কেন এমন হল খোঁজ নিয়ে দেখছি।” চন্দ্রি উচ্চতর মাধ্যমিক (এইচএস) বিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কুসংস্কার কী ভাবে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে, সোমার মৃত্যুতে ফের তা প্রমাণ হল।’’

ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন বলেন, “পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে ওঝার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। পাশাপাশি এলাকাবাসীকেও সচেতন করা হবে।”

Snakebite Death Shaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy