Advertisement
E-Paper

পরিবহণ সচল রাখাই চ্যালেঞ্জ শাসকে

দেশ জু়ড়ে বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে বদ্ধপরিকর শাসক তৃণমূল। রাজ্য সরকার ঘোষণাও করেছে ধর্মঘটে বাস চালাতে গিয়ে বা দোকানে খুললে কোনও ক্ষতি হলে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তার প্রভাবও চোখে পড়েছে সরাসরি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
ধর্মঘট ব্যর্থ করতে প্রচার ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র।

ধর্মঘট ব্যর্থ করতে প্রচার ঘাটালে। নিজস্ব চিত্র।

দেশ জু়ড়ে বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখতে বদ্ধপরিকর শাসক তৃণমূল। রাজ্য সরকার ঘোষণাও করেছে ধর্মঘটে বাস চালাতে গিয়ে বা দোকানে খুললে কোনও ক্ষতি হলে, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তার প্রভাবও চোখে পড়েছে সরাসরি। বাস মালিকরা বলছেন, বাস চলবে, ভয় কী? পূর্ব-পশ্চিম দুই মেদিনীপুরেই এক চিত্র। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমায় আবার বাসকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে তৃণমূল ও তাদের শ্রমিক সংগঠন। যাতে সকাল সকাল বাস চালু করে দিতে অসুবিধা না-হয়।

পূর্বে অবশ্য তৎপরতা বেশি শাসকদলের নেতাদের। নন্দীগ্রাম থেকেই জিতে পরিবহণ মন্ত্রী হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। ফলে বন‌্ধ ব্যর্থ করে পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখার একটা আলাদা গরজ রয়েছে শাসকের। জেলার প্রতিটি কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড ও গুরুত্বপূর্ণ বাজারে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আগাম প্রচার চালিয়েছেন বাসমালিক সংগঠনের নেতারা। সাধারণত ধর্মঘটে নিরাপত্তার অভাব নিয়েই সরব হন বাস মালিকরা। বাস বেরোয় না। ফলে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে কাজে বেরতে পারেন না। এ বার ঠিক উল্টো সুর গাইছেন বাস মালিকেরা। পূর্ব মেদিনীপুর ডিস্ট্রিক্ট বাস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক সুকুমার বেরা বলেন, ‘‘সাধারণত ধর্মঘটের দিনে রাস্তায় বাস আটকানো হয়, নানা ভাবে গোলামাল করার চেষ্টা হয়। তবে এ বার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ উপযুক্ত নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ সুকুমারবাবু স্বীকার করেছেন, শুক্রবার রাস্তায় বাস চালানোর কথা সাধারণ মানুষকে জানানোর জন্যই তাঁরা জেলা জুড়ে আগাম প্রচার চালাচ্ছেন। জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মহম্মদ সামসের আরেফিনও বলেন, ‘‘প্রশাসনের আশ্বাসে শুক্রবার বাস চালানোর জন্য আমরা
প্রস্তুতি নিয়েছি।’’

কলকাতা থেকে হলদিয়া, দিঘা, নন্দীগ্রাম রুটে দক্ষিণ বঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার সরকারি বাস চললেও জেলার মূল ভরসা বেসরকারি বাসগুলিই। জেলার ১৮০টি রুটে প্রতিদিন ১১০০-এর বেশির বেসরকারি বাস চলে। সাধারণত বন্‌ধের দিনে সরকারি বাস চললেও বেশিরভাগ বেসরকারি বাস বন্ধ থাকে। এ বার কী হয়, সেটাই দেখার।

সব দলের রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, তৃণমূলের শক্তঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে বামেদের ডাকা ধর্মঘট ব্যর্থ করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘বাস মালিকরা বাস চালানোর জন্য আমাদের কাছে নিরপত্তার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন। আমরা পুলিশকে বলেছি বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই টহল শুরু করতে। যাতে কেউ গোলামাল না করে সে জন্য সর্বত্র পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’

তবে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর জেলা সম্পাদক সুব্রত পণ্ডা বলেন, ‘‘জেলার বাস মালিক সংগঠন বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেও বাস চালকদের মধ্যে যারা আমাদের সদস্য তাঁরা বাস চালাবেন না। তবে আমরা সমস্ত বাস শ্রমিকদের কাছে এই ধর্মঘটে বাস না-চালানোর জন্য আবেদন জানিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, শাসকের চাপে পড়েই বাস মালিক সংগঠন এ রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার থেকেই ঘাটাল মহকুমার একাধিক এলাকায় বাসকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে তৃণমূল। সরকারি প্রচারও চলছে জোর কদমে। মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “ধমর্ঘটে পরিবহণ ছাড়াও যাতে অন্য কোনও ক্ষেত্রেও প্রভাব না পড়ে সে জন্য আমরা সতর্ক।”

সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই স্থানীয় ও দূরপাল্লার বাস কর্মীদের খাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন। ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, “ঘাটাল শহরেই ২০০ বাসকর্মীর খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি, তাঁদের থাকার দায়িত্বও নেওয়া হয়েছে। দলীয় সদস্যদের চাঁদায় এই খরচ করা হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “সাধারণ মানুষ যাতে বাসস্ট্যান্ডে এসে হয়রানির শিকার না হন, তার জন্যই এই উদ্যোগ।” এ বিষয়ে আগেভাগে বৈঠকও সেরে রেখেছিল তৃণমূল।

জেলা বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রভাত পান এবং মোহন বাগের দাবি, “সাধারণত ধর্মঘটে বাস বের করলে বিমা কোম্পানিগুলি ক্ষতিপূরণ দেয় না। কিন্তু এ বার সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে বলে ঘোষণা করেছে। তাই আমরাও বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ ক্ষীরপাই শহরেও একই ভাবে উদ্যোগী শাসক নেতৃত্ব। তৃণমূলের চন্দ্রকোনা শহর শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে অশোক পালধী বলেন, “আমরাও সমস্ত ব্যবস্থা করেছি। শুক্রবার বাস চলাচলে কোনও বিঘ্ন ঘটবে না।”

তবে চোরাস্রোত রয়েছেই। ঘাটাল শহরের এক বাসের চালক অমিয় সেনাপতি বলেন, “আমাদের বাস চালিয়ে সংসার চলে। মালিক চালাতে বললে আমাদের কোনও দায়িত্ব নেই। আমরা তো বেতন পাব।” ক্ষুব্ধ বাস কর্মীদের একাংশও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস কর্মী বলেই ফেললেন, “এই বন্‌ধে আমাদেরও স্বার্থ জড়িত রয়েছে। এ ভাবে জোর করে বাস চালানোর কোনও প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু মুখের উপরে তো কিছু বলার উপায় নেই।”

Govt challenge Transport General Strike
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy