মন্দারমণির পর পূর্ব মেদিনীপুরের আরেক উপকূল তাজপুর। সমুদ্রের বুকে ফের ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে কংক্রিটের গার্ডওয়াল। অভিযোগ, জেসিবি মেশিনে সমুদ্র চর থেকে বালি তুলে ওই গার্ডওয়াল বানানো হচ্ছে। দিনের পর দিন এ কাজ চলছে। তবুও প্রশাসনের দাবি এমন ঘটনা অজানা।
দিঘা এবং মন্দারমণির মাঝামাঝি এলাকায় কয়েক বছর ধরে নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে তাজপুরে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে হোটেল এবং লজ নির্মাণের সংখ্যা। কিছুদিন ধরে তাজপুরে সমুদ্র থেকে জেসিবি মেশিন দিয়ে রাশি রাশি বালি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি। আর ওই বালি দিয়ে সেখানে বানানো হচ্ছে কংক্রিটের গার্ডওয়াল। স্থানীয়দের অভিযোগ, বহুতল হোটেল নির্মাণের জন্যই সমুদ্র চরে গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে।
কোস্টাল রেগুলেটেড জ়োন আইন অনুযায়ী, জোয়ার-ভাটার সময় সমুদ্রের জল যতদূর এসে পৌঁছয় সেখান থেকে অন্তত ৫০০ মিটার কোনও রকম নির্মাণ কাজ করা যাবে না। এক্ষেত্রে ন্যূনতম বিধি মানা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ। মুক্তিপদ গিরি নামে এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘চোখের সামনে দেখছি সমুদ্র সৈকত দখল করে একের পর এক হোটেল তৈরি হচ্ছে। কেউ কিছুই বলছে না। কিছু করার নেই। কেউ কিছু বলতে গেলে আমাদের দোষী হতে হবে।’’
যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের তির উঠেছে, সেই দীনবন্ধু মাইতি নামে ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই গার্ড ওয়াল নির্মাণ করছি।’’ যদিও তিনি কোনও নথি দেখাতে পারেননি। আর এ ধরনের ঘটনা জানা নেই বলে দাবি করেছে দিঘা- শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। তবে পর্ষদের এগজিকিউটিভ অফিসার অপূর্ব কুমার বিশ্বাসের আশ্বাস, ‘‘আইন ভেঙে কেউ কাজ করলে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’
অতীতে মন্দারমণিতেও সৈকত দখল করে একের পর এক নির্মাণ গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানের ১৪৪ টা হোটেল ভেঙে ফেলতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগী হয়েছিল। তব ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে মামলা করেন হোটেল মালিক সংগঠন। ১৭ জানুয়ারি মামলার শুনানি ছিল। জেলাশাসকের নির্দেশের উপরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধির নির্দেশ দেন হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃত সিংহ। একইসঙ্গে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পাশাপাশি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে নিজেদের বক্তব্য হলফনামা আকারে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি জমা দিতে বলা হয়েছে। মার্চে মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। এমন পরিস্থিতিতে মন্দারমণির অদূরে তাজপুরে সৈকত দখলের অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে প্রশাসন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)