Advertisement
০২ মে ২০২৪

হাতপাখার বাজারে মন্দা, সঙ্কটে সুব্রতরা

নতুন বছরের নতুন সূর্যের আলো এঁদের ঘরে ঢোকে না। যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, বিলাসিতা করা তাঁদের মানা। শিল্পীর মর্যাদা তো জোটেইনি উল্টে দমবন্ধ করা ঝুপড়ি ঘরে অতিকষ্টে দিন কাটে ওঁদের। তালপাতার পাখা তৈরি করাই ওঁদের কাজ। কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, শহর মেদিনীপুর থেকে কিলোমিটার পাঁচেক দূরে শিরোমণি গ্রামের মধ্যপাড়ায় থাকে গৌতম কদমা, সুব্রত কদমা, অনিমা কদমারা।

চলছে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র।

চলছে তালপাতার পাখা তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র।

কিংশুক আইচ
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪৮
Share: Save:

নতুন বছরের নতুন সূর্যের আলো এঁদের ঘরে ঢোকে না। যাঁদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, বিলাসিতা করা তাঁদের মানা।

শিল্পীর মর্যাদা তো জোটেইনি উল্টে দমবন্ধ করা ঝুপড়ি ঘরে অতিকষ্টে দিন কাটে ওঁদের। তালপাতার পাখা তৈরি করাই ওঁদের কাজ। কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, শহর মেদিনীপুর থেকে কিলোমিটার পাঁচেক দূরে শিরোমণি গ্রামের মধ্যপাড়ায় থাকে গৌতম কদমা, সুব্রত কদমা, অনিমা কদমারা।

গরমে বাড়ির দাওয়ায় বসে তালপাতার পাখার চারপাশে লাল রঙের রিবন লাগাচ্ছিলেন অনিমাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘শীতকালে তো পাখার চাহিদাই থাকে না। গরম পড়লে তবুও একটু আয়ের মুখ দেখা যায়। এই টাকা দিয়েই কোনওমতে সংসার চলে যায়।’’ পাখার জন্য কচি তালপাতা মাপ করে কাটছিলেন গৌতম। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের বাবা ঠাকুরদাদের এই কাজ করতে দেখে আসছি। তাদের দেখে দেখে আমরাও একাজ শিখে গেছি, এখন আমার ছেলে-মেয়েও এই কাজ শিখছে।’’

পাখার তালপাতাও হাতের কাছে মেলে না। ৫০ কিমি দূরের লালগড় বা রামগড়ের আশেপাশের এলাকা থেকে পাতা জোগাড় করে আনতে হয়। তারপরে সেই তালপাতা মাপ করে কাটা, বাঁশের সরু কাঠি লাগানো, শেষমেশ পাখার ধারে রঙিন রিবন লাগিয়ে শৌখিন করে তোলা। খাটনি কিছু বাঁশের সরু কাঠি লাগানো। শেষমেশ ধারে রঙিন রিবন লাগিয়ে শৌখিন করে তোলা। খাটনি কম কিছু নয়। তার পর মেদিনীপুরের বাজারে পাখা বিক্রি করতে যাওয়া। খোলা বাজারে বিক্রি করলে পাখা পিছু মেলে ১০ টাকা। আর পাইকারি বাজারে বিক্রি করলে প্রতি একশো পাখাতে ৮০০ টাকা করে মেলে। ‘‘লাভ কিছুই নেই। শুধু করতে হয়, তাই করে যাওয়া আর কী!’’, দীর্ঘ নিশ্বাঃস ফেলে বলেন অনিমাদেবী।

মধ্যপাড়া এলাকায় মূলত তফশিলি সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। এলাকার প্রায় প্রত্যেকের কাছে শংসাপত্রও আছে। যদিও শংসাপত্র নামেই। সরকারি চাকরি দূরের কথা, পাখা তৈরির জন্য ব্যাঙ্ক লোন বা প্রশিক্ষণ জোটেনি কিছুই। ‘‘বছর কয়েক আগেও পর্যন্ত তালপাতার পাখা তৈরি করে দিন কেটে যেত, এখন তো বৈদ্যুতিক ফ্যান ও প্লাস্টিকের পাখার বাজার। তাই এখন আর শুধু পাখা তৈরি করে সংসার চলে না। তাই এখন মাঠেঘাটে শ্রমিকের কাজও করতে হয়।’’, বলে চলেন অনিমা।

গৌতম যোগ করেন, “দেখুন যাঁরা ঢাক-ঢোল বাজায়, তাঁরাও শিল্পীর পরিচয়পত্র পেয়ে গেলো। আমাদের কিছু হলো না। অনেকদিন ধরে শুনে আসছি এ বার হবে। হলো না তো এখনও। ইন্দিরা আবাসের বাড়িও তো কেউ পেলো না।’’ তারপরেও কষ্ট করে মেয়ে মমতাকে পড়াশোনা শেখাচ্ছেন অনিমাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘দিনকাল বদলেছে। তাই ছেলে-মেয়েদের কিছুটা পড়াশোনা না শেখালেই নয়।’’

যদিও সুদিনের আশাতেই বুক বাঁধছেন ওঁরা। যদি কোনওদিন দিন ফেরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

handfan market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE