E-Paper

বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি, ডেঙ্গি কি কমবে!

জেলার একাংশ স্বাস্থ্য আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, মশাবাহিত এই রোগের বাড়াবাড়ির পিছনে কয়েকটি বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। সেগুলি হল ভাইরাস, মশা, মানুষ এবং পরিবেশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৩
মেদিনীপুরের শেখপুরায় সরকারি আবাসনে চত্বরে মশার মারা তেল স্প্রে করা হচ্ছে।

মেদিনীপুরের শেখপুরায় সরকারি আবাসনে চত্বরে মশার মারা তেল স্প্রে করা হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।

ডেঙ্গি ঊর্ধ্বমুখী পশ্চিম মেদিনীপুরেও। চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে ১,৩০০ পেরিয়েছে। শনিবার দিনভর দফায় দফায় কখনও ভারী, কখনও মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। রবিবারও দফায় দফায় মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। একাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর মতে, ভারী বৃষ্টির ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ কিছুটা কমতে পারে। কারণ, যেখানে যেখানে জমা জলে মশার লার্ভা জন্মেছিল, সেগুলি বৃষ্টির জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে। অবশ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের আরেকটি অংশের মতে, জলের স্রোতে সেই লার্ভা বেরিয়ে গেলে রক্ষা হত। কিন্তু জেলার সর্বত্র সেটা হয়নি। নতুন করে বৃষ্টির জল কোথাও কোথাও জমেও গিয়েছে। জমা জলে ফের মশা জন্মাবে, এই আশঙ্কাও থাকছে। জেলার একাংশ স্বাস্থ্য আধিকারিকের মতে, ঠান্ডা পড়তে শুরু করলেই ডেঙ্গির প্রকোপ কমবে।

গত বেশ কয়েক বছরের তুলনায় পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি সংক্রমণের প্রকোপ এ বারই সবচেয়ে বেশি। এর আগের ১০-১২ বছরে কখনও জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পেরোয়নি। এ বার সংখ্যাটা এক হাজার পেরিয়ে দেড় হাজারের দিকে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ডেঙ্গি সংক্রমণের হার কিন্তু খুব একটা বাড়েনি। এ বার বেশি সংখ্যায় ডেঙ্গি পরীক্ষা হচ্ছে। তাই তুলনায় বেশিজনের ডেঙ্গি ধরা পড়ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘ মশাবাহিত এই রোগের মারাত্মক বাড়াবাড়ি হয়েছে কিছু এলাকায়। ওই সব এলাকায় নজরদারি চলছে। চিন্তার কিছু নেই।’’

জেলার একাংশ স্বাস্থ্য আধিকারিক মনে করাচ্ছেন, মশাবাহিত এই রোগের বাড়াবাড়ির পিছনে কয়েকটি বিষয় পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। সেগুলি হল ভাইরাস, মশা, মানুষ এবং পরিবেশ। আবার এই পরিবেশের মধ্যে বর্ষা, জমা জল, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা রয়েছে। এই বিষয়গুলির একটিও যদিও ব্যাহত হয়, তাহলে কিন্তু তেমন প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে না। কিন্তু এখন সবক’টিই একত্রিত হয়ে গিয়েছে। তাই প্রকোপ বেশি। অগস্টে আক্রান্তের সংখ্যা কম ছিল না। তবে সেপ্টেম্বরেই ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে ডেঙ্গি। জানা গিয়েছে, চলতি বছরে ৩০ সেপ্টেম্বর, শনিবার পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১,২৯৬ জন। শনিবারই নতুন করে ৫৪ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। রবিবারও বেশ কয়েকজনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। ৪ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর, এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৩ জন, ১১ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর, ২১২ জন, ১৮ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, ২৬২ জন, ২৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন।

জেলার একাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর মতে, বেশি বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে বৃষ্টি থামলে। সে ক্ষেত্রে ইতিউতি জমে থাকা বৃষ্টির পরিষ্কার জলে ডেঙ্গিবাহী মশা ডিম পাড়বে। এই সময়ের বৃষ্টি তাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকও বলেন, ‘‘দিন কয়েক টানা ভারী বৃষ্টি হলে এতটা ভাবার কিছু ছিল না। মশার লার্ভা জলে ধুয়ে যেতই। সব সময় তো ভারী বৃষ্টি হচ্ছে না। মাঝারি, এমনকি ঝিরঝির বৃষ্টিও হচ্ছে। সামান্য হলেও ভয়টা এতেই।’’ জেলার শহরগুলির মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মেদিনীপুর এবং খড়্গপুরে। মেদিনীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যে ২০০ পেরিয়েছে। খড়্গপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছুঁইছুঁই। ব্লকগুলির মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নারায়ণগড়, দাঁতন- ২ এবং শালবনি, এই তিনটি ব্লকে। তিনটি ব্লকেই আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ পেরিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore Dengue Surge

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy