E-Paper

সস্তার মহুয়ার মৌতাতে মজে চোলাইপ্রেমীরা

আবগারি দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি দেশি (কান্ট্রি স্পিরিট) মদের দাম কয়েক দফায় দাম বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ৬০০ মিলিগ্রাম দেশি মদের দাম পৌঁছেছে ১৫৫ টাকায়।

গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৯
পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মদ। নিজস্ব চিত্র

পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মদ। নিজস্ব চিত্র

গন্ধ, বর্ণে তফাৎ নেই। তবে ফারাক রয়েছে দামে। অ্যালকোহলের মাত্রাও ভিন্ন। তাই চোলাইয়ের পরিবর্তে কম দামি মহুলেই বাজি রাখছে আবগারি দফতর। আর কিছু হোক বা না হোক, শরীরটা তো বাঁচুক। সঙ্গে সাশ্রয়ও।

সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মদ বিক্রির উপরে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার। বিরোধী থেকে বিদ্বজ্জনেরা এর প্রতিবাদ করলেও সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকান নতুন করে খোলার সংখ্যা কমেনি। এ বার জন সাধারণকে আরও সস্তার ‘নেশা’র সামগ্রী পৌঁছে দিতে সেই সব দোকানেই বিক্রি শুরু হয়েছে ‘মহুল’। মাত্র ২৮ টাকাতেই নেশার এই পানীয়টি মেলায় যুব সমাজ আরও বেশি করে নেশাগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন জন সাধারণ। মহুলের নেশায় শারীরিক অসুস্থতা বাড়ারও আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। যদিও আবগারি দফতরের ব্যাখ্যা, চোলাইয়ের সঙ্গে লড়তে বাজারে আনা হচ্ছে এই মহুল। কারণ, অপেক্ষাকৃত সস্তা দেশি মদের দাম বাড়ার জন্য বহু মদ্যপই চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকছে। ফলে সস্তার মহুল তারা পেলে চোলাই পান করা বন্ধ করবে বলে দাবি আবগারি দফতরের।

আবগারি দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি দেশি (কান্ট্রি স্পিরিট) মদের দাম কয়েক দফায় দাম বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ৬০০ মিলিগ্রাম দেশি মদের দাম পৌঁছেছে ১৫৫ টাকায়। ফলে প্রত্যন্ত এলাকার বহু দরিদ্র মদ্যপ আরও সস্তায় নেশা চালিয়ে যেতে চোলাইয়ের দিকে ঝুঁকছেন বলে দাবি। ফলে চোলাইয়ের রমরমা যে সব এলাকায় রয়েছে, সে সব এলাকায় সরকারি দোকানে মহুয়া বিক্রি শুরু করছে আবগারি দফতর। তাদের দাবি, চোলাই খেলে প্রাণহানি ও রাজস্ব— দুইয়েরই ক্ষতি হয়। কিন্তু মহুল বাজারে এনে চোলাই যেমন বন্ধ করা যাবে, তেমনই রাজস্বও বাড়ানো যাবে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আবগারি পুলিশ সুপার যতন মণ্ডল বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে মহুল বিক্রি উদ্দেশ্য হল চোলাই থেকে মানুষের আসক্তি কমানো। বিষাক্ত চোলাই খেয়ে অনেক সময় মৃত্যু হয়। সেই তুলনায় মহুল খেলে মৃত্যুর ভয় থাকে না। চাহিদা থাকায় জেলায় সীমানা লাগোয়া এলাকায় মহুলে আমদানি বাড়ানো হচ্ছে।’’

পূর্ব মেদিনীপুরে পাঁশকুড়া, এগরা এবং পটাশপুরে সীমানা লাগোয়া সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত মদের দোকানগুলিতে গত কয়েক মাস ধরে মহুয়া বিক্রি বেড়েছে। এগরা ও পটাশপুরের সরকারি অনুমোদিত ২৩টি মদের দোকান রয়েছে। এগরার আলংগিরি, চোরপালিয়া, খামারি, পাঁচরোল, চাটলা এবং পটাশপুরের কনকপুর এলাকায় ওই সব দোকানে পুজোর পর থেকে প্রচুর মহুয়া বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, ওই সব এলাকার বহু চোলাই ব্যবসায়ী ধরপাকড় এড়াতে মহুয়া তৈরির কারবারে পা বাড়াচ্ছেন।

সূত্রের খবর, এগরা মহকুমায় প্রতিদিন গড়ে ২৭০ বোতল (৮১ মিলিলিটার) মহুল বিক্রি হয়। মূলত দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারীরাই তাতে আসক্ত হয়। চোলাই মদের গন্ধ আর মহুয়ার গন্ধ অনেকটাই একই। সরকারি অনুমোদিত মদের দোকানে ২৮ টাকা দামে মহুলের ৩০০ মিলিগ্রাম বোতল মিলছে। এখন ৬০০ মিলিগ্রাম দেশি মদ যখন ১৫৫ টাকায় কিনতে হয়, সেখানে ৬০০ মিলিগ্রাম মহুয়া মাত্র ৫৬ টাকায় মিলছে। আর তা বিক্রি করে সরকারি রাজকোষও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী দিনে পূর্ব মেদিনীপুরের আরও অন্য এলাকাতেও আরও বেশি মহুয়া আমদানির লক্ষ্য মাত্রা নিয়েছে আবগারি দফতর। আবগারি দফতর সস্তায় মহুয়া বিক্রির কারণ হিসাবে যতই চোলাই ব্যবসা বন্ধের ব্যাখ্যা দিক না কেন, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। জেলার মদ বিরোধী সংগঠনের এক নেতা সূর্যেন্দুবিকাশ পাত্রের কথায়, ‘‘রাজ্যের সরকার শিক্ষক যুবকদের চাকরির পরিবর্তে হাতে মদের বোতল তুলে দিচ্ছে। কম দামে মহুল খেয়ে সর্বস্বান্ত সমাজ অবক্ষয়ের পথে চলেছে।’’

অন্যদিকে, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সস্তার মহুয়া খেলে মাথাব্যথার পাশাপাশি, দ্রুত লিভারের সমস্যা দেখা যাবে। একটানা পাঁচ বছর এই বস্তুটি পান করলে লিভার সিরোসিস রোগ হবে। রক্তে কোলেস্টেরেলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হার্ট অ্যাটাকেরও সম্ভাবনা বাড়বে। কিডনিও নষ্ট হবে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্যানসার হতে পারে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাত্যকি রায় বলেন, ‘‘এই ধরনের মদে বেশি পরিমাণে অ্যালকোহল থাকায় কেউ দীর্ঘ সময় নেশা করলে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হবেন। কিডনি নষ্ট হয়ে যাবে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।’’

এত সস্তায় নেশার সামগ্রী হাতে পেলে নেশাগ্রস্তদের সংখ্যা বাড়বে বলে দাবি বিরোধীদের। তাদের প্রশ্ন, সরকার চোলাই ব্যবসা বন্ধ করতে চাইলে আরও অভিযান চালাক। এক ধরনের নেশা বন্ধ করতে, অন্য নেশাকে কেন প্রশয় দেওয়া হচ্ছে?

নিরুত্তর আবগারি দফতর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mahua Liquor Hooch Egra

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy